আশুলিয়ায় আবারও বিক্ষোভ: মালিকপক্ষের মধ্যস্ততায় অবরোধ তুলে নিল শ্রমিকরা
ঢাকার আশুলিয়ার পলাশবাড়ী এলাকায় অবস্থিত তৈরি পোশাক কারখানা জিএবি লিমিটেডের পরিচালক তাইজুল ইসলামের অপসারণসহ বেশ কয়েকটি দাবিতে নবীনগর-চন্দ্রা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছে কারখানাটির সহস্রাধিক শ্রমিক। পরে মালিকপক্ষের মধ্যস্ততায় অবরোধ তুলে নেয় শ্রমিকরা।
বৃহস্পতিবার (১৭ই অক্টোবর) সকাল ১০ টা থেকে আশুলিয়ার পলাশবাড়ী এলাকায় কারখানাটির সামনের নবীনগর-চন্দ্রা সড়কে অবস্থান নিয়ে সড়কটি অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন তারা।
এতে সড়কটির উভয় পাশে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়।
পরবর্তীতে দীর্ঘ সাড়ে ৫ ঘণ্টা সড়কটি অবরোধ করে বিক্ষোভ করার পর দুপুর সাড়ে ৩টার দিকে কারখানাটির মালিকপক্ষ ও ম্যানেজমেন্টের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে শ্রমিকদের দাবিদাওয়া মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিয়ে আলোচনার প্রস্তাব দিলে শ্রমিকরা সড়কটি থেকে অবরোধ প্রত্যাহার করে।
বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা জানান, গত দুই মাস আগে কর্তৃপক্ষের কাছে বেশ কয়েকটি দাবি তুলে ধরেন তারা। এর মধ্যে শ্রমিকদের সরবরাহকৃত খাবারের মান বৃদ্ধি, টার্গেট বেইজড ইনসেন্টিভ বৃদ্ধিসহ বেশ কয়েকটি দাবি ছিল তাদের। শ্রমিকদের দাবির মুখে কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের কিছু দাবি মেনে নিলেও শ্রমিকদের অন্যান্য দাবিগুলো অমীমাংসিত থেকে যায়। এছাড়াও সরকার, বিজিএমইএ, শ্রমিক প্রতিনিধিদের ত্রিপাক্ষিক বৈঠকে যে-সব দাবি মেনে নেওয়া হয়েছিল তার কয়েকটিও বাস্তবায়ন করেনি কর্তৃপক্ষ।
এছাড়াও বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা অভিযোগ করেন, কারখানাটির মালিকপক্ষ শ্রমিকদের যে-সব সুযোগ সুবিধা প্রদান করে, সেগুলো আত্মসাৎ করে শ্রমিকদের বঞ্চিত করেন কারখানাটির পরিচালক তাইজুল ইসলাম। এ কারণে এই কর্মকর্তার অপসারণেরও দাবি জানান তারা।
অঞ্জন নামে কারখানাটির একজন সুইং অপারেটর বলেন, "মালিকপক্ষ কিছুদিন আগে আমাদের কম্বল দিয়েছিল, কিন্তু সেগুলোও আমাদের দেওয়া হয়নি। পিকনিকের টাকাও আত্মসাৎ করেছে পরিচালক তাইজুল ইসলাম। এ কারণে আমরা তার অপসারণ চাই।"
মো. শাহ আলম নামের কারখানাটির একজন শ্রমিক বলেন, "আমাদের দাবিগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল ইনসেন্টিভ বৃদ্ধি। সেটি বাস্তবায়ন হয়নি। এছাড়া তাইজুল সাহেব জিএম থেকে পরিচালক হওয়ার পর আমাদের যেই ছুটি ছিল ১০ দিন, সেটিকে ৭ দিন করেছে। খাবারে আগে গরুর মাংস সরবরাহ করা হতো, সেটি বন্ধ করে খিচুড়ি ও পরে মুরগি মাংস সরবরাহ করা হয়। এছাড়াও আমাদের দাবি ছিল শুক্রবার এবং অন্যান্য সরকারি দিনগুলোতে শ্রমিকদের দিয়ে কাজ করানো যাবে না। এছাড়াও শুক্রবার ডিউটি করালে ডাবল হাজিরা এবং একদিনের ছুটির দাবিও আমাদের ছিল।"
তিনি বলেন, "এমন ১০টি দাবি আমাদের ছিল যা বাস্তবায়ন করা হয়নি। এসব ছাড়াও কারখানায় যোগ্য লোক থাকা সত্ত্বেও, যারা দীর্ঘদিন কারখানায় কাজ করছে, তাদের বঞ্চিত করে বাহির থেকে লোক এনে বড় পদগুলোতে নিয়োগ দেওয়া হয়, এসব বৈষম্যও বন্ধের দাবি আমরা জানিয়েছি"।
কারখানাটির আরেকজন শ্রমিক বলেন, একজন লোকের কারণে মালিকপক্ষ আমাদের যা সুবিধা দেয়, আমরা সেসব থেকে বঞ্চিত হই। তিনি হলেন পরিচালক তাইজুল ইসলাম। আমরা তার অপসারণ চাই"।
এছাড়াও শ্রমিকরা জানান, শ্রমিকদের এসব দাবিদাওয়া নিয়ে গত কয়েকদিন যাবত শ্রমিকরা কারখানাটিতে আন্দোলন করে আসছিল। সর্বশেষ গত পরশু কারখানা খোলা রাখার পর গতকাল কোন নোটিশ ছাড়াই কারখানা বন্ধ রাখা হয়৷ আজ কারখানা খোলা থাকলেও ম্যানেজমেন্টের কেউ আসেনি।
আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু বকর সিদ্দিক বলেন, "সকাল থেকে কারখানাটির শ্রমিকরা কারখানার একজন কর্মকর্তার অপসারণসহ কয়েকটি দাবি নিয়ে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছিল। দুপুরে মালিকপক্ষ ও ম্যানেজমেন্টের লোকজন ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে শ্রমিকদের দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিলে এবং আলোচনার জন্য প্রস্তাব দিলে শ্রমিকরা দুপুর সাড়ে ৩টার দিকে সড়ক থেকে অবরোধ প্রত্যাহার করে নেয়। অবরোধ প্রত্যাহার করে নেওয়ায় সড়কে ধীরে ধীরে যান চলাচল স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে।"
তবে কারখানাটির শ্রমিকদের এসব অভিযোগ এবং সার্বিক বিষয় কারখানাটির কোন কর্মকর্তার মন্তব্য পাওয়া যায়নি।