ঝালকাঠিতে যেভাবে চালু হলো ‘হাউন আঙ্কেলের ভাতের হোটেল’
খাবারের আইটেমে খুব বিলাসিতা নেই, মানও সাধারণ। নিম্ন মধ্যবিত্তের জন্য প্রতি বেলায় রান্না হয় ভাত, সবজি, মাছ ও মাংস। কিন্তু প্রতি বেলায় হোটেলটিতে ভিড় লেগেই থাকে। শুধু আশপাশের এলাকার লোক নয়, দূর-দূরান্ত থেকেও মানুষ খাবার খেতে আসেন এই হোটেলে। ইতোমধ্যে আলোচনায় উঠে এসেছে ঝালকাঠির 'হাউন আঙ্কেলের ভাতের হোটেল'।
ঝালকাঠি পৌর শহরের ব্রাক মোড়ে একমাস আগে চালু হয় এই হোটেল। ইতোমধ্যে হোটেলটি ক্রেতা আগ্রহের কেন্দ্রে চলে এসেছে।
পিরাজপুরের ভান্ডারিয়া উপজেলার ইকরি বাসস্ট্যান্ড এলাকার বাসিন্দা নূর নবী বলেন, 'ব্যবসার জন্য বিভিন্ন জেলায় যাওয়া হয়। গত সপ্তাহে গিয়েছিলাম বরিশাল। আসার পথে বড় বড় সাইনবোর্ডে দেখলাম হাউন আঙ্কেলের ভাতের হোটেল লেখা। নামটি দেখেই হাসি আসলো। কৌতূহল নিয়ে এক বেলা খেয়েছি। অন্যসব হোটেলের মতই সাধারণ খাবার। তবে সময়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নামটা দিয়েছে ভাল।'
ঝালকাঠি ব্রাক মোড় এলাকার আবুল কালাম আজাদ বলেন, 'খাবার মান যেমনই হোক, নামটায় চমক দেখিয়েছে। যে এই সাইনবোর্ড দেখে, সেই আলোচনা করে।'
ঝালকাঠির ষাটপাকিয়া এলাকার কলেজ ছাত্র ফয়সাল হোসেন বলেন, 'ফেসবুকে হাউন আঙ্কেলের ভাতের হোটেলের ছবি দেখেছি। পুলিশ কর্মকর্তা হারুন আর রশিদ তার কার্যালয়ে আসামিদের ভাত খাওয়াতেন। সেই ছবি আবার ফেসবুকে দিতেন। এতে অনেকে ডাকত হারুনের ভাতের হোটেল। ওখান থেকেই এই নামের কনসেপ্ট নেওয়া হয়েছে।'
তিনি বলেন, 'একবেলা খেয়েছি হাউন আঙ্কেলের ভাতের হোটেলে। শুরুতেই সবাই যেমন চিনেছে, ক্রেতা ধরে রাখতে হলে খাবার মান বাড়াতে হবে।'
হোটেল মালিক ইমন চৌধুরী বলেন, 'আগে ঠিকাদারি করতাম। দেশের অস্থিরতার সময়ে কাজের ব্যাপক ক্ষতি হয়। বেঁচে থাকার জন্য হোটেল ব্যবসায় নামার সিদ্ধান্ত নেই। হোটেলের নাম কি দেবো এটা নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলাম না। বিষয়টি নিয়ে কয়েকজনকে আলোচনা করলে তারা হাউন আঙ্কেলের ভাতের হোটেল নাম দিতে বলেন। যে কোনো কারণেই হোক, সবাই এই নামটি দিতে বলেছিল আমায়। আমিও সেটাই ঠিক করলাম। এখন দেখেছি নামের জন্য অনেক মানুষ খাবার খেতে আসছেন। আমি খুব খুশি।'
উল্লেখ্য, ডিএমপির সাবেক গোয়েন্দা প্রধান হারুন অর রশিদ গত ৩০ জুলাই বিএনপির এক জ্যেষ্ঠ নেতাকে আটক করে নিয়ে যাওয়ার পর, নিজ কার্যালয়ে বসে ভাত খাওয়ান। এরপর আবার তিনি নিজেই এই ঘটনার ছবি ও ভিডিও ছড়িয়ে দেন।
এরপর আবার গত জুলাই মাসে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় ছয় সমন্বয়ককে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রথমে অস্বীকার করা হলেও পরে জানানো হয় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাদের ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হয়েছে। সেসময় ছয় সমন্বয়ককে নিয়ে হারুনকে ডিবি কার্যালয়ে খেতে দেখা যায়। এবারও তিনিই এই ঘটনার একাধিক ছবি ছড়িয়ে দেন।
মানুষকে ভাত খাওয়ানো এবং ছবি-ভিডিও প্রকাশ করায় সেই থেকে ডিবি কার্যালয়কে 'হারুনের ভাতের হোটেল' বলে সমালোচনা শুরু হয়।
এর আগেও বিভিন্ন সময় ডিবি কার্যালয়ে বিভিন্ন পেশার মানুষের সঙ্গে বসে তার ভাত খাওয়ার ছবি দেখা গেছে। যেমন: চিত্রনায়িকা অপু বিশ্বাস, গানবাংলা (জিবি) টিভির প্রধান নির্বাহী (সিইও) কৌশিক হোসেন তাপস, শামীম ওসমান, শাহজাহান ওমর, হিরো আলম প্রভৃতি।
এছাড়া, এক শিশু শিল্পী ডিবি হারুনকে 'হাউন আঙ্কেল' বলে সম্বোধন করায় সেই ভিডিও ব্যাপক ভাইরাল হয়।