‘বাহাত্তরের সংবিধান’ ২০২৪-পরবর্তী বাংলাদেশে প্রাসঙ্গিক নয়: হাসনাত আবদুল্লাহ
'বাহাত্তরের সংবিধান' ২০২৪-পরবর্তী বাংলাদেশে প্রাসঙ্গিক নয় বলে মন্তব্য করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ।
আজ বুধবার সন্ধ্যায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।
সংবাদ সম্মেলনে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের পর যে সংবিধান রচিত হয়েছিল, সেটি ছিল মূলত আওয়ামী সংবিধান। সেখানে মুজিববাদীদের যেই আদর্শ সেই আদর্শের আড়ালেই বাংলাদেশ এত বছর পরিচালিত হতো। তাই বাকশালী যে সংবিধান, সেটি '২৪ পরবর্তী বাংলাদেশে কখনোই প্রাসঙ্গিক নয়।
তিনি বলেন, গত ৩ আগস্ট আমরা যে এক দফা ঘোষণা করেছিলাম, সেই দফার মধ্যে ছিল ফ্যাসিবাদ ব্যবস্থার বিলুপ্তি ও নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত। গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আমাদের প্রাথমিক অর্জন শেখ হাসিনার পতন নিশ্চিত হয়েছে। কিন্তু ফ্যাসিবাদ ব্যবস্থার পূর্ণাঙ্গ বিলোপের যে প্রশ্নটি, সেটি এখনও অমীমাংসিত। যেসব রাজনৈতিক দল গণঅভ্যুত্থানের পক্ষে একাত্মতা জানিয়েছে, তারা কখনো '৭২ এর সংবিধানের পক্ষে থাকতে পারে না। কারণ এই সংবিধানের মধ্য দিয়েই আমাদের এই ফ্যাসিবাদ কাঠামো সবসময় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ও বিস্তৃত হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, শেখ হাসিনা ও তার সরকারকে যখনই পদত্যাগ করতে বলা হতো, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের কথা বলা হতো, যখনই নির্দলীয় সরকারের কথা বলা হতো, তখনই তারা বলতেন, তাদের সাংবাদিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে হবে। আজ আমরা দেখেছি প্রধান উপদেষ্টার সাথে আলোচনার পর বিভিন্ন রাজনৈতিক দল সাংবিধানিক ধারাবাহিকতার দোহাই দিয়ে মো. সাহাবুদ্দিনকে তারা রাষ্ট্রপতি পদে আসীন দেখতে চান।
এ সময় '৭২ এর সংবিধান ও গণঅভ্যুত্থানের প্রশ্নে বাংলাদেশের গণতন্ত্রকামী ও ফ্যাসিবাদবিরোধী প্রতিটি দলকে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করার আহ্বান জানান। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, যারা গণঅভ্যুত্থানের পক্ষে, তারা '৭২ এর সংবিধানের পক্ষ থাকতে পারে না।
গণতন্ত্রকমী দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, প্রথমত গণতন্ত্রকামী যেসব দল রয়েছে, আমরা তাদের ঐক্য চাচ্ছি। এই ঐক্যের মধ্যে দিয়ে আমরা নতুন করে সংবিধান লিখব। যে সংবিধানে গণমানুষের আকাঙ্ক্ষা প্রতিফলিত হবে। দ্বিতীয়ত; আমাদের '৭২ এর সংবিধান বাতিল হলে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সাংবিধানিক ধারাবাহিকতার প্রশ্নটি আর থাকে না। এমনিতেই তিনি চলে যেতে বাধ্য হবেন।
সম্প্রতি পাঁচ দফার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, এ দাবিগুলো মূলত গণঅভ্যুত্থানকে বিপ্লবে পরিষণত করার চূড়ন্ত দফা। এ পাঁচ দফার মধ্য দিয়ে আমাদের গণঅভ্যুত্থান বিপ্লবে পরিণত হবে এবং বাংলাদেশের প্রশ্নে আমরা স্থায়ী সমাধাদের দিকে যেতে পারব।
ছাত্রলীগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা সরকারকে সময় বেঁধে দিয়েছিলাম। আর একদিন সময় রয়েছে। এই সময়ের মধ্যে ছাত্রলীগকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধ করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, গত ১৬ বছর ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ যে নৃশংসতা চালিয়েছে, সেখানে ছাত্রলীগের পুর্নবাসনের কোনো সুযাগ নেই। একটি জঙ্গি সংগঠন হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য যা যা দরকার, তার সবই ছাত্রলীগের আছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।