এক বছরেরও বেশি সময় পর কালুরঘাট সেতুতে ফের যান চলাচল শুরু
দীর্ঘ ১৫ মাস পর চট্টগ্রামের কালুরঘাট সেতু যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) বিশেষজ্ঞ দলের তত্ত্বাবধানে ৪৩ কোটি টাকা ব্যয়ে সংস্কার শেষে সর্বোচ্চ ৮ ফুট উচ্চতার সব ধরনের যানবাহন চলাচলের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে সেতুতে। তবে চলতে পারবে না ট্রাক-বাসের মতো ভারী যানবাহন।
রোববার (২৭ অক্টোবর) সকাল ১০টার দিকে সেতুটি যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক মো. নাজমুল ইসলাম বলেন, "পুরনো সেতুটি বুয়েটের বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী সংস্কার করা হয়েছে। সেতুতে বড় ট্রাক ও বাস চলাচল করতে পারবে না। আপাতত টোল ছাড়াই যানবাহন চলাচল করবে। ভূ-সম্পত্তি বিভাগ রেলসেতু দিয়ে চলা যানবাহন থেকে টোল আদায়ে উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বান করবে।"
কালুরঘাটে ১৯৩১ সালে রেল সেতু নির্মাণ করে ব্রিটিশ সরকার। ১৯৬২ সালে মিটারগেজ সিঙ্গেল লেন রেলসেতুটি পুনর্নির্মাণ করে অন্যান্য যান চলাচলে উপযোগী করা হয়। বর্তমানে এ সেতুতে প্রতি ঘণ্টায় ১০ কিলোমিটার বেগে ট্রেন চলাচল করতে পারে। বোয়ালখালী উপজেলা প্রায় ৩ লাখ মানুষের নদী পারাপারে প্রধান মাধ্যম এ সেতুটি ২০০১ সালে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়।
এরপর সংস্কার করে কোনোরকমে চলছে। সেতুটি উপর ট্রেন ও গাড়ি চলাচল করে। একপাশ থেকে গাড়ি পার হলে অন্যপাশের গাড়ি ও মানুষকে থেমে থাকতে হতো।
কক্সবাজার রুটে ট্রেন চালুর জন্য নতুন সেতু নির্মাণ না হওয়ায় পুরাতন কালুরঘাট সেতু সংস্কারের উদ্যোগ নেয় রেলওয়ে। ২০২৩ সালের ১ আগস্ট সেতুর সংস্কার কাজ শুরু হয়। প্রায় ৪৩ কোটি টাকা ব্যয়ে সেতুর সংস্কার কাজ শেষ হয়েছে চলতি মাসে।
গত ২৪ সেপ্টেম্বর কালুরঘাট সেতুর সংস্কার কাজ পরিদর্শন করেন বুয়েটের তিন সদস্যের বিশেষজ্ঞ দল। তারা সংস্কার কাজের অগ্রগতি ও গুণগত মান পরীক্ষা শেষে দ্রুত যান চলাচলের জন্য সেতু চালু করে দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন।
নদীতে সেতুর পিয়ালগুলোর গোড়ায় প্রায় ৬০ হাজার জিও ব্যাগের মাধ্যমে বালি ফেলাসহ মানুষের যাতায়াতে ওয়াকওয়ে এবং রেলপথের ওপর সড়ক কার্পেটিং এ বিশেষ নকশা প্রণয়ন করে রেলওয়ে। নতুন পদ্ধতি বাস্তবায়নের কারণে একমুখী যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন ঘটবে না বলে জানিয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী আবু জাফর মিয়া বলেন, "মানুষের হাঁটার জন্য দৃষ্টিনন্দন ওয়াকওয়ে করা হয়েছে। সেতুর পাটাতনের ওপর কংক্রিটের ঢালাই দেওয়া হয়েছে। আগে সেতুতে পানি জমে থাকায় ঢালাই নষ্ট হয়ে যেতো। কংক্রিটের ঢালাই দেওয়ায় এখন আর সেখানে পানি জমে থাকবে না।"
গত বছরের ডিসেম্বরে কক্সবাজার রুটে ট্রেন চলাচল শুরু হয়। কালুরঘাট সেতু দিয়ে বর্তমানে কক্সবাজার পর্যন্ত দৈনিক তিন জোড়া ট্রেন ও দোহাজারী পাওয়ার প্ল্যান্টের জ্বালানিবাহী ট্রেন চলাচল করে। তবে কালুরঘাট সেতু সংস্কার ও কর্ণফুলী নদীতে নতুন সেতু নির্মাণের পর এই রুটে দৈনিক ২৩ জোড়া ট্রেন চলাচলের পরিকল্পনা রয়েছে।
আগামী জানুয়ারিতে চালু হওয়া রেলওয়ের ওয়ার্কিং টাইম টেবিলে কক্সবাজার পর্যন্ত আপাতত আরও কয়েকটি ট্রেন যুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে রেলওয়ের।