ভোলায় এইচপিভি টিকার কোনো বিরূপ প্রভাব দেখা যায়নি: স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক
ভোলায় হিউম্যান প্যাপিলোমাভাইরাস (এইচপিভি) ভ্যাকসিন বা জরায়ুমুখের ক্যানসার প্রতিরোধের টিকা প্রদানকে কেন্দ্র করে অসুস্থ হওয়ার ঘটনায় ভ্যাকসিনেশন বা টিকা দানের কোনো সংশ্লিষ্টরা নেই বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আবু জাফর।
বুধবার (৩০ অক্টোবর) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই টিকা নিয়ে কোনো ধরনের গুজব না ছড়ানোর নির্দেশনা দিয়েছেন।
সম্প্রতি জরায়ুমুখের ক্যান্সার প্রতিরোধের জন্য হিউম্যান প্যাপিলোমাভাইরাস (এইচপিবি) ভ্যাকসিন প্রদান কর্মসূচি শুরু করেছে সরকার। তবে এই কর্মসূচির আওতায় ভোলায় টিকা দেওয়ার সময় আতঙ্কে কিছু শিক্ষার্থীর জ্ঞান হারানোকে কেন্দ্র করে সমাজে নানান গুজব ছড়িয়ে পড়ে।
এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. আবু জাফর বলেন, ইপিআই এবার সাত বিভাগে ৬২ লাখ ১২ হাজার ৫৫৯ জনকে এইচপিভি ভ্যাকসিন দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এর মাঝে স্কুলে ৫৮ লাখ ৬২ হাজার ৯১৮ জন শিক্ষার্থীদের দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। এরমধ্যে ৩৪ লাখ ৪৬ হাজার ৬১৮ জন শিক্ষার্থী রেজিস্ট্রেশন করেছে, আর টিকা নিয়েছে ১৮ লাখ ১৭ হাজার ৩২৬ নারী শীক্ষার্থী।
তিনি আরও জানান, "১৮ লাখের বেশি মানুষকে টিকা দেওয়া হয়েছে। এর মাঝে ২৭১ জনের সাধারণ কিছু প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে, তা পয়েন্ট ০ দশমিক ১৪ শতাংশ। টিকা দেওয়ার ক্ষেত্রে যা একেবারেই নগণ্য। শতকরা ৪ থেকে ৫ জন আক্রান্ত হলে তখন সেটাকে সরাসরি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে ধরে নেওয়া হয়।"
ভোলার ঘটনা ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, "সেখানে দুইজন শিক্ষার্থীকে প্রথমে টিকা দেওয়া হয়। তারা টিকা দেওয়ার পর কিছুটা অসুস্থ অনুভব করলে তাদের শুইয়ে দেওয়া হয় একটি কক্ষে। এই অবস্থা দেখে সেখানকার অন্য শিক্ষার্থীদেরও জ্ঞান হারায়। এদের মাঝে ৫ জনকে টিকা দেওয়াও হয়নি। তাই প্রাথমিকভাবে এটিকে মানসিক সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।"
সাধারণত টিকা দিলে জ্বর, ব্যাথা এসব উপসর্গ দেখা দেয়। তবে এ নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। অনেক ক্ষেত্রে এসব উপসর্গ দেখা না দিলে শরীরে টিকা কার্যকর হয়েছে কিনা সেটাও বোঝা যায়না বলে উল্লেখ করেন তারা।
সংবাদ সম্মেলনে চিকিৎসকেরা বলেন, অত্যন্ত নিরাপদ এইচপিভি টিকার সাথে বন্ধ্যাত্বের কোনো সম্পর্ক নাই। জরায়ুমুখের ক্যানসার প্রতিরোধে এইসপিভি টিকা অত্যন্ত কার্যকর এবং নিরাপদ। গ্লোবাল অ্যাডভাইজারি কমিটি অন ভ্যাকসিন সেফটি (জিএসিভিএস) তথ্য বিশ্লেষণ করে মতামত দিয়েছে, এইচপিভি টিকার সাথে বন্ধ্যাত্বের কোনো সম্পর্ক নেই।
বিশেষজ্ঞরা প্রতিষ্ঠানটির ৯টি আর্টিকেল পেপার, রোগ নিরীক্ষণ কর্মসূচির রিপোর্ট এবং রোগতাত্বিক তথ্য বিশ্লেষণ করে টিকার কার্যকারিতা এবং গুণমান সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েছেন।
ডেনমার্ক, যুক্তরাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য দেশে গবেষণা করে এটি নিশ্চিত হওয়া গেছে, এইচপিভি টিকার সাথে গুরুতর কোনো বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সম্পর্ক নেই।