গত ১৮ বছরে তামাক থেকে রাজস্ব আয় বেড়েছে ১১ গুণ: মতবিনিময় সভায় বক্তারা
গত ১৮ বছরে তামাক থেকে রাজস্ব আয় প্রায় সাড়ে ১১ গুণ বেড়েছে। একইসঙ্গে ২০০৯ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে দেশে তামাক ব্যবহার প্রায় ১৮ শতাংশ কমেছে। ২০০৫ সালে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন পাস ও ২০১৩ সালে আইনটি সংশোধনের মাধ্যমে আরও কড়াকড়ি আরোপ করা হয়। এ কড়াকড়ির কারণে কর বৃদ্ধির পাশাপাশি তামাকের ব্যবহার যে কমেছে, সেটি প্রমাণিত।
আজ রোববার (৩ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর গুলশানে বাংলাদেশ নেটওয়ার্ক ফর টোব্যাকো ট্যাক্স পলিসির (বিএনটিটিপি) কনফারেন্স রুমে এক মতবিনিময় সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যলয়ের অর্থনৈতিক গবেষণা ব্যুরো (বিইআর) ও বাংলাদেশ নেটওয়ার্ক ফর টোব্যাকো ট্যাক্স পলিসি (বিএনটিটিপি) যৌথভাবে 'তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালী হলে রাজস্ব বাড়ে, ব্যবহার কমে' শীর্ষক মতবিনিময় সভার আয়োজন করে।
সভায় সভাপতিত্ব করেন বিইআরের ফোকাল পার্সন ও বিএনটিটিপির কনভেনর অধ্যাপক ড. রুমানা হক। সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিইআরের প্রকল্প ব্যবস্থাপক হামিদুল ইসলাম হিল্লোল। প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটির সভাপতি অধ্যাপক ড. মহিউদ্দীন ফারুক ও বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোটের (বাটা) ভারপ্রাপ্ত সমন্বয়কারী হেলাল আহমেদ।
এছাড়া প্যানেল আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দৈনিক কালের কণ্ঠ পত্রিকার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক নিখিল ভদ্র, একাত্তর টেলিভিশনের বিশেষ প্রতিনিধি ও তামাক নিয়ন্ত্রণ বিষেজ্ঞ সুশান্ত সিনহা এবং দৈনিক শেয়ার বিজ পত্রিকার যুগ্ম সম্পাদক মাসুম বিল্লাহ। সভায় ভাইটাল স্ট্রাটেজিসের সিনিয়র কারিগরি পরামর্শক অ্যাডভোকেট সৈয়দ মাহবুবুল আলম তাহিনসহ তামাকবিরোধী বিভিন্ন সংগঠনের কর্মকর্তারাও বক্তব্য দেন।
বক্তারা বলেন, তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালী হলে সরকারের রাজস্ব কমে যাবে বলে তামাক কোম্পানি প্রচারণা চালাচ্ছে, এটি আদৌ যুক্তিসঙ্গত নয়। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) রাজস্ব আহরণের তথ্যই বলে দেয় তারা মিথ্যাচার করছে। বাংলাদেশে ২০০৫ সালে যখন তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন পাস হয়, সে বছর তামাক থেকে রাজস্ব ছিল দুই হাজার ৮৮৮ কোটি টাকা। পরবর্তী অর্থবছর ২০০৫-০৬ এ রাজস্ব আদায় হয় তিন হাজার ৩৫১ কোটি টাকা। ২০১৩ সালে যখন আইনটি সংশোধন করা হয়, সেই বছর তামাক থেকে সরকারের রাজস্ব আয় ছিল ১০ হাজার ১৭০ কোটি টাকা। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১২ হাজার ৫৫৬ কোটি টাকা। ২০২২-২৩ অর্থবছরে তামাক খাত থেকে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৩২ হাজার ৮২৩ কোটি টাকা।
তারা বলেন, তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন হলে দেশে কর্মসংস্থান ক্ষতিগ্রস্থ হবে বলেও মিথ্যাচার চালাচ্ছে তামাক কোম্পানি। অথচ জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এর তথ্য অনুসারে দেশে বিড়ি কোম্পানিতে শ্রমিক নিয়োজিত আছে মাত্র ৪৬ হাজার। আর দেশের প্রায় ৯০ শতাংশ বাজার দখলে রেখেছে দুই বহুজাতিক সিগারেট কোম্পানি বিএটিবি ও জেটিআই। তামাক কোম্পানির প্রতিবেদন অনুসারে তাদের কর্মচারীর সংখ্যা মাত্র এক হাজার ৭৬৯ জন (বিএটিবির এক হাজার ৬৬৯ জন এবং জেটিআইয়ের প্রায় ১০০ জন)। সিগারেট কোস্পানিগুলো ৭০ লাখ লোক কাজ হারাবে বলে তারা অপপ্রচার চালাচ্ছে।
বিইআরের প্রকল্প কর্মকর্তা ইব্রাহীম খলিলের সঞ্চালনায় সভায় বক্তারা আরও বলেন, তামাক কোম্পানি এইসব মিথ্যাচারের মাধ্যমে প্রকৃত সত্যকে আড়াল করছে। শিশু-কিশোরদের ধূমপানের নেশায় আকৃষ্ট করতে তারা বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে ধূমপানের আলাদা জায়গা তৈরি করে দিচ্ছে, বিক্রয় স্থলে আগ্রাসী বিজ্ঞাপন দিচ্ছে, দেশে ভেপিং ও ই-সিগারেটের ব্যবহার বাড়াতে যুবকদের নিয়ে গোপনে ভেপিং মেলার আয়োজন করছে।
তামাক ব্যবহারের কারণে দেশে হৃদরোগ, স্ট্রোক, ক্যান্সার, ডায়াবেটিসের মতো রোগ বেড়েই চলেছে বলে উল্লেখ করেন বক্তারা। তারা বলেন, এসব রোগের চিকিৎসার খরচ যোগাতে গিয়ে প্রতি বছর দেশের প্রায় চার লাখ মানুষ দরিদ্র হয়ে যাচ্ছে। এ তথ্যগুলো সিগারেট কোম্পানি আড়াল করতে চায়।
এ অবস্থায় সিগারেট কোম্পানির এই ভ্রান্ত প্রচারণা থেকে নীতি নির্ধারকদের সতর্ক থাকা এবং দেশের তরুণদের স্বাস্থ্য রক্ষায় কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান বক্তারা।