যাত্রাবাড়ী সড়ক: ছোট-বড় খানাখন্দ আর যানজটের এক বিভীষিকা
পদ্মা সেতু এবং এক্সপ্রেসওয়ে হয়ে রাজধানীতে প্রবেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ পথ হলো যাত্রাবাড়ী। তবে, ছোট-বড় অসংখ্য খানাখন্দে এলাকার চৌরাস্তার চারপাশের সড়কের বেহালদশায় এটি একটি বিপজ্জনক ক্রসিং পয়েন্টে পরিণত হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, এক বছরেরও বেশি সময় ধরে একই অবস্থা রয়েছে রাস্তাটি। মাঝে ইট-সুরকি বিছিয়ে অস্থায়ীভাবে মেরামতের চেষ্টা করা হলেও, পরিস্থিতি এখনও ভয়াবহ।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা বলছেন, টেন্ডার প্রক্রিয়ার জটিলতার কারণে কয়েক মাস ধরে রাস্তার কাজ বিলম্বিত হচ্ছে।
তবে এখন নতুন দরপত্র জারি করা হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, আগামী এক মাসের মধ্যেই কাজ শুরু হয়ে যাবে।
গত সোমবার সরেজমিনে গিয়ে যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা ও ধোলাইপাড় বাসস্ট্যান্ডের মধ্যকার সড়কের বেহালদশা পর্যবেক্ষণ করেন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের এই প্রতিবেদক।
দেখা যায়, দুই পাশের প্রায় এক কিলোমিটার রাস্তায় রয়েছে ছোট-বড় অসংখ্য খানাখন্দ। কিছু জায়গায় আলগা হয়ে গেছে পাথর; দেখা যাচ্ছে মাটি। তারপরেও যান চলাচল থেমে নেই। ফলে এই সড়কে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বেড়েই চলেছে।
এছাড়া, সড়কের অর্ধেকের বেশি জায়গাজুড়েই ছিল অবৈধ পার্কিং— যা পরিস্থিতিকে আরও খারাপের দিকে ঠেলে দিয়েছে।
সম্প্রতি বর্ষাকাল শেষ হলেও অনেক জায়গায় পানি জমে থাকতে যায়। একেতো খানাখন্দে রাস্তার খারাপ অবস্থা, তার উপর জলাবদ্ধতার কারণে প্রায়ই সড়কে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে।
যাত্রাবাড়ীর বাসিন্দা ইসমাইল হোসেন বলেন, "এখানে প্রতিনিয়ত রিকশা উল্টে যায়। বৃষ্টি হলেই রাস্তায় হাঁটু–সমান পানি ওঠে।"
"গত সপ্তাহে বৃষ্টিতে দুটি ট্রাক উল্টে গিয়েছিল। সৌভাগ্যক্রমে, সে সময় রাস্তায় কোনো পথচারী বা অন্য কোনো গাড়ি ছিল না, ফলে হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। এখন বর্ষা শেষে মেইন রাস্তায় পানি না থাকলেও ঘন কাদায় ঢেকে আছে," যোগ করেন তিনি।
এই রাস্তায় মাওয়া রুটে প্রায় ২৭ বছর ধরে গাড়ি চালান ইলিশ পরিবহনের ড্রাইভার আব্দুল বারেক। গত কয়েকমাস ধরে যাত্রাবাড়ীর এ রাস্তাটির বেহালদশা তাকে বিষিয়ে তুলেছে।
আব্দুল বারেক টিবিএসকে বলেন, "এই অংশে গাড়ি চালাতে গেলে জীবন হাতের মুঠোয় নিয়ে ড্রাইভিং করতে হয়। অন্য কোনো রুটে চালানোর সুযোগ না থাকায় বাধ্য হয়ে এই রুটেই গাড়ি চালাতে হচ্ছে। মাত্র এক কিলোমিটারের জন্য ভুগতে হচ্ছে আমাদের।"
তিনি বলেন, "তিনদিন আগে গাড়িটি এই ভাঙ্গা রাস্তার খাদে পড়ে একটি চাকার ক্ষতি হয়েছে— যা ঠিক করতে অন্তত ২০ হাাজার টাকা লাগবে। আগে ২ বছর যেতো গাড়ির চাকার টিউবে, কিন্তু এখন ২ মাসও যায় না।"
মাইক্রোবাস চালক মাসুম বিল্লাহ বলেন, "বিপদে না পড়লে এই রাস্তায় আসি না। অনেক দিন পরে আজকে আসলাম উঁচু-নিচু গর্তে পড়ে গাড়ির পেছনের অংশ ভেঙে গেছে। এর আগে একদিন এসেছিলাম তখন ১০ হাজার টাকার মেরামত করাতে হয়েছে গাড়ির।"
শরীয়তপুর সুপার সার্ভিসের হেলপার নূর হোসেন টিবিএসকে বলেন, "গাড়ি চালাতে গেলেই গাড়ির সামনে পেছনে লেগে যায়। এ রুটে যাত্রীয় কমে গেছে রাস্তার এ ভয়াবহ অবস্থার জন্য। নিয়মিতই গাড়ির চাকা, ইঞ্জিনের কাজ করাতে হয়।"
এদিকে, সিটি কর্পোরেশন রাস্তায় জমে থাকা পানি অপসারণ করতে রাস্তার পাশে প্রায় আধা কিলোমিটার খুড়ে রেখেছে। আর এর পাশে থাকা অন্তত ৩টি পেট্রোল পাম্পে গাড়ি ওঠানামা করতে পারছে না। দুটি পেট্রোল পাম্প লোহার পাত বসিয়ে বিকল্প ব্যবস্থা করলেও আল হোসাইন পেট্রোল পাম্পটি বাধ্য হয়ে বন্ধ রাখা হয়েছে।
আল হোসাইন পেট্রোল পাম্পের এক কর্মচারী আব্দুল হানিফ টিবিএসকে বলেন, "আমাদের এ পাম্পে প্রতিদিন ২,৫০০-৩,০০০ লিটার তেল যেতো কিন্তু এখন কোনো বিক্রিই নেই। ২০ দিন ধরে রাস্তাটি খুড়ে রেখেছে সিটি কর্পোরেশন। মেরামতের কোনো খবর নেই। পানি চলাচলের ড্রেন পরিষ্কার না করে উল্টো আমাদের রাস্তা বন্ধ করে রেখেছে।"
ঢাকা দক্ষিণ সিটির এ এলাকাটি অঞ্চল-৫ এর অন্তর্ভুক্ত। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের অঞ্চল-৫ এর সহকারী প্রকৌশলী (পুর) মো. বুলবুল ইসলাম টিবিএসকে বলেন, "রাস্তার কাজ নিয়ে কয়েকমাস ধরে টেন্ডার জটিলতা ছিল। আমরা নতুন করে টেন্ডার আহ্বান করেছি। আশা করি, আগামী এক মাসের মধ্যেই সকল প্রক্রিয়া শেষে কাজ শুরু করা যাবে।"
প্রায় ১০ কোটি টাকা ব্যায়ে এই রাস্তাটি আরসিসি ঢালাই, কার্পেটিং এবং ফুটপাতের কাজ করা হবে বলে জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, "সাময়িক সমাধানের জন্য আমরা বড় গর্তগুলোতে ইটের সুরকি ফেলেছি এবং পানি নিষ্কাসনের জন্য কিছু এলাকার রাস্তা কেটে রাখা হয়েছে। এছাড়া, ওয়াসার লাইনের কিছু সমস্যার কারণেও এই রাস্তায় কাজ করতে গিয়ে জটিলতায় পড়তে হয়েছে।"