গাজীপুরে বন্ধ ৩০ কারখানা, চলছে শ্রমিক ছাঁটাই
গাজীপুর মহানগরীর কোনাবাড়ি, কাশিমপুর, জরুণ ও জিরানি এলাকায় গত কয়েকদিনে অন্তত ৩০টি তৈরি পোশাক কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এদিকে, বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) মহানগরীর তুসুকা গ্রুপের দুই শতাধিক শ্রমিক ছাঁটাই করা হয়েছে।
বন্ধ ঘোষিত কারখানার গুলোর নোটিশে বলা হয়েছে, 'মালিক পক্ষের মতে শ্রমিকগণ কারখানার অভ্যন্তরে উশৃঙ্খলভাবে ভয়ভীতি প্রদর্শন, মারামারি ও অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। শ্রমিকদের এহেন কার্যকলাপ বাংলাদেশ শ্রম আইন-২০০৬ মোতাবেক অবৈধ ধর্মঘটের সামিল। কারখানার কর্তৃপক্ষ বাধ্য হয়ে কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শ্রমিকদের নিরাপত্তা এবং কারখানার সম্পত্তি ও জানমাল রক্ষার স্বার্থে বাধ্য হয়ে শ্রম আইনের অধীনে কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য কারখানার সকল ধরণের কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করেছে।'
বন্ধ কারখানাগুলোর মধ্যে রয়েছে- তুসুকা জিন্স লিমিটেড, তুসুকা ট্রাউজার্স লিমিটেড, তুসুকা প্রসেসিং লিমিটেড, তুসুকা প্যাকেজিং লিমিটেড, তুসুকা ডেনিম লিমিটেড এবং তুসুকা ওয়াশিং লিমিটেড।
জানা যায়, গত ৩ নভেম্বর (রবিবার) শ্রমিক অসন্তোষের জেরে গাজীপুর মহানগরীর কোনাবাড়ি এলাকার তুসুকা গ্রুপের ৬টি কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়। বৃহস্পতিবার ওই কারখানার ২৩৯ জন শ্রমিককে ছাঁটাই করা হয়েছে। আজ সকালে ছাটাইকৃত শ্রমিকদের একটি তালিকা কারখানার প্রধান ফটকে সাটিয়ে দেওয়া হয়েছে।
গত সোমবার (৪ নভেম্বর) মহানগরীর কোনাবাড়ীতে এম এম নিটওয়্যার লিমিটেড, মামুন নীটওয়্যার লিমিটেড ও মকুল নিটওয়্যার লিমিটেড কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়। শ্রমিক অসন্তোষের কারণে সোমবার সকালে কারখানার সামনে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণার নোটিশ সাঁটিয়ে দেন কারখানা কর্তৃপক্ষ।
এরপর ইসলাম গ্রুপের বন্ধ ৫টি কারখানা বন্ধ ঘোষণা করে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে- ইসলাম গার্মেন্টস লিমিটেড ওয়েভিং ইউনিট ইসলাম গার্মেন্টস লিমিটেড ইউনিট ২ ইসলাম গার্মেন্টস লিমিটেড টেক্সটাইল বিভাগ ইসলাম নিট ডিজাইন লিমিটেড ইসলাম গার্মেন্টস লিমিটেড বিভাগ।
শিল্প পুলিশ ও অন্যান্য সূত্রে জানা যায়, গত কয়েকদিন আগে মহানগরীর কোনাবাড়িতে ইসলাম গ্রুপ ও তুসুকা গ্রুপের শ্রমিকরা আন্দোলন করে। ইসলাম গ্রুপ শ্রমিকদের সব দাবি মেনে নেয়। আর তুসুকা গ্রুপ শ্রমিকদের যৌক্তিক দাবি মেনে নেয়। তারপরেও শ্রমিক আন্দোলনের মূখে দুটি শিল্প গ্রুপ তাদের সকল কারখানা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়।
সূত্র আরও জানায়, প্রথমে তুসুকা বন্ধ করে দেয়। এরপরেই প্রায় প্রতিদিন কোনো না কোনো কারখানা বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে।
গাজীপুর মহানগরীর কাশিপমপুর এলাকায় ডরিন এ্যাপারেস লি. এবং ডোরিন গার্মেন্টস লিমিটেড বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এ ছাড়াও রেজাউল অ্যাপারেলস, ফ্যাশন সামিট লি., ফ্যাশন পয়েন্ট লি., কেএম নবেলী গার্মেন্টস লি., রিপন নীটওয়্যার লি., লাইফ টেক্সটাইল, কানিজ ফ্যাশন লি., পিএন কম্পোজিট লিমিটেড, ফাইজা ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, এমএম নিটওয়্যার লি., মামুন নিটওয়্যার লিমিটেড, ফ্লোরেন্স ফেব্রিকস লিমিটেড, কটন ক্লাউড (বিডি) লিমিটেড, কটন ক্লাব (বিডি) লিমিটেড, কে এম নিটওয়্যার, অনাবিল এপারেল্স লি., এমা সিনটেক্স লিমিটেড বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
কারখানা কর্তৃপক্ষ ও শিল্প পুলিশ জানায়, গত দুই নভেম্বর শ্রমিক আন্দোলনের কারণে ৩ নভেম্বর থেকে কোনাবাড়ী এলাকার তুসুকা গ্রুপের ৬টি কারখানা শ্রম আইনের ১৩ (১) ধারায় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়। বেশ কিছুদিন বন্ধ থাকার পর কারখানায় বিশৃঙ্খলার অভিযোগে ২৩৯ জন শ্রমিককে ছাঁটাই করা হয়েছে। শ্রমিক ছাঁটাইয়ের খবর পেয়ে সকাল থেকে আশপাশের পুরুষ ও নারী শ্রমিকরা কারখানার সামনে ভিড় করছেন। অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন।
শ্রমিক বিল্লাল হোসেন বলেন, 'কারখানা বন্ধ আছে এর মধ্যে বুধবার রাত ৮ টার দিকে মোবাইলে মেসেজ আসে, মো. বিল্লাল আপনাকে ৬/১১/২০২৪ থেকে অবসান করা হলো। আপনার সমুদয় পাওনাদি কারখানার হিসাব শাখা হতে দেওয়া হবে।'
শ্রমিক ছাটাইয়ের বিষয়ে তুসুকা গ্রুপের পরিচালক তারেক হাসান বলেন, 'কারখানার কিছু শ্রমিক কারখানার ভিতরে ভাঙচুর করেছে, কর্মকর্তাদের মারধর করেছে, কিছু যৌক্তিক দাবি মেনে নিলেও অযৌক্তি দাবি নিয়ে কারখানায় অরাজকতা সৃষ্টি করেছে, অন্য কারখানায় নিয়ে হামলা করেছে। এসব কারণে ম্যানেজমেন্ট মনে করেছে, তাদের ছাঁটাই করা প্রয়োজন তাই ছাঁটাই করা হয়েছে।'
গাজীপুর শিল্প পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার মো. আবু তালেব জানান, মহানগরীতে গত কয়েকদিনে বেশকিছু কারখানা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
অপরদিকে, বৃহস্পতিবার শ্রমিক ছাঁটাইয়ের খবর পেয়ে কোনাবাড়ীসহ বিভিন্ন এলাকায় অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। এছাড়া গোয়েন্দা নজরদারিও রয়েছে।