জিরো পয়েন্টে 'জিরো' আওয়ামী লীগ
বেলা ৩টায় কর্মসূচি ঘোষণার পরেও রাজধানী জিরো পয়েন্টের নূর হোসেন চত্বরে আওয়ামী লীগের কেউ নেই। বরং সকাল থেকে বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল, ছাত্র সংগঠন ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা সেখানে অবস্থান করছেন। অবশ্য আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন সমর্থককে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছে।
গত শুক্রবার (৮ নভেম্বর) নিজেদের ফেসবুক পেজে আওয়ামী লীগ, আজ রোববার (১০ নভেম্বর) বিকেল ৩টায় শহীদ নূর হোসেন দিবস উপলক্ষ্যে রাজধানীর জিরো পয়েন্টে বিক্ষোভ করার ঘোষণা দেয়।
এই বিক্ষোভ মিছিল প্রতিহত করতে রাজধানীর গুলিস্তানের জিরো পয়েন্ট মোড়ে অবস্থান নেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। আর গুলিস্তানের বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে অবস্থান নেন বিএনপি-যুবদল-মহিলা দলসহ দলটির বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা।
আজ সকাল থেকে এপর্যন্ত জিরো পয়েন্ট ও গুলিস্তান এলাকায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের কোনো অবস্থান দেখা যায়নি। বরং আওয়ামী লীগের ডাকা কর্মসূচিকে প্রতিহত করতে কিছুক্ষণ পরপরই বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা স্লোগান দিতে দিতে মিছিল নিয়ে আসছেন এখানে।
'অগণতান্ত্রিক শক্তির অপসারণ এবং গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠার' দাবিতে আজ রোববার বিকাল ৩টায় জিরো পয়েন্টে বিক্ষোভ মিছিল করার ঘোষণা দেয় আওয়ামী লীগ। অপরদিকে আওয়ামী লীগের বিচারের দাবিতে দুপুর ১২টায় একই স্থানে গণজমায়েতের ঘোষণা দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
সরেজমিনে দেখা যায়, সকাল ৮টা থেকেই জিরো পয়েন্ট মোড়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা অবস্থান নেন। তারা আওয়ামী লীগবিরোধী বিভিন্ন মিছিল করেন। গণজমায়াতের জন্য জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটের সামনে প্রধান সড়কের ওপর অস্থায়ী মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে।
অন্যদিকে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে শনিবার (৯ নভেম্বর) রাত থেকেই অবস্থান নেন বিএনপি ও তাদের অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। রোববার সকালে সেখানে বিএনপি, যুবদল ও মহিলা দলের বিভিন্ন শাখা ও ইউনিটের নেতাকর্মীদের মিছিল ও অবস্থান করতে দেখা যায়। তাদেরও আওয়ামী লীগবিরোধী স্লোগান দিতে শোনা যায়।
এদিকে আজ সকালেও কর্মসূচিকে সামনে রেখে দলীয় কর্মীদের জন্য আট দফা নির্দেশনাও দিয়েছে আওয়ামী লীগ।
গণআন্দোলনের মাধ্যমে ৫ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুত হওয়া দলটি রবিবার সকালে তাদের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেইজে এসব নির্দেশনা শেয়ার করে।
কর্মীদের কর্মসূচিটি শান্তিপূর্ণভাবে পালন করতে এবং কোনো ধরনের নাশকতার ফাঁদে পা না দিতে আহ্বান জানানো হয়।
নির্দেশনায় বলা হয়, 'আমাদের কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি, আমরা কোনো রকম নাশকতার ফাঁদে পা দেব না। কাউকে পুলিশ বা র্যাব বা সেনাবাহিনী আটক করতে গেলেই সমস্বরে জয় বাংলা স্লোগান দেবেন, আশেপাশের সবাই তাকে উদ্ধারের জন্য চলে যাবেন।'
মোবাইল ব্যবহার প্রসঙ্গে নির্দেশনায় বলা হয়, 'কোনো অবস্থাতেই নিজের মোবাইলে কোনো তথ্য রাখবেন না। পরিচিত সহযোদ্ধাদের নাম ভিন্ন নামে মোবাইলে সেইভ করে রাখবেন। সবাই সবার সঙ্গে যোগাযোগ রাখবেন এবং কোড ওয়ার্ডে কথা বলবেন।'
জিরো পয়েন্টে আসার বিষয়ে বলা হয়, 'যেখানে জমায়েত হওয়ার কথা ছোট ছোট গ্রুপে মুভ করবেন। বাধা এলে পুলিশকে স্মরণ করিয়ে দেবেন তারা কাদের পক্ষ নিচ্ছে! যারা তাদের রাস্তায় ঝুলিয়ে মেরেছে?'
নির্দেশনায় আরও বলা হয়, 'সেনাবাহিনীর সাথে কোনো তর্ক-বিতর্কে যাবেন না, তারা মিছিল-মিটিং এ বাধা দেবে না।'
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ সদস্যদেরও সতর্ক অবস্থানে দেখা গেছে। গুলিস্তান জিরো পয়েন্ট ও বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউত বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পাশাপাশি জিরো পয়েন্টে একটি জলকামান এবং বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে একটি জলকামান ও রায়ট কার দেখা গেছে। বিজিবি সদস্যদের গাড়ি নিয়ে পুরো এলকা টহল দিতে দেখা গেছে।
অন্যদিকে শনিবার রাত ও রোববার সকালে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে আওয়ামী লীগের সমর্থক সন্দেহে কয়েকজনকে আটক করে পুলিশের কাছে সোপর্দ করেছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা।
পল্টন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী নাছিরুল আমিন বলেন, কিছু লোক আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের সামনে জড়ো হয়েছিল। ছাত্র-জনতা তাদের ধরে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় আনা হয়েছে।
প্রয়োজন হলে আবারও আমরা শহীদদের পথ ধরে জীবন দিতে প্রস্তুত আছি: ঢাবি শিবির সভাপতি
আওয়ামী লীগের বিচার দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের গণজমায়েত কর্মসূচিতে সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ইসলামি ছাত্র শিবিরের সভাপতি সাদিক কায়েম।
জিরো পয়েন্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন আয়োজিত গণজমায়েতের ফ্যাসিবাদ বিরোধী মঞ্চে তিনি বক্তব্য রাখেন।
সাদিক কায়েম বলেছেন, শেখ হাসিনা ও তাদের দোসররা দেশে-বিদেশে বসে নানা ষড়যন্ত্র করছে। তাদের রুখে দিতে হবে। ফ্যাসিবাদের দোসররা যে যেখানে আছে তাদের বিচারের জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে ধরিয়ে দিতে হবে। কোনো ফ্যাসিবাদের ঠাঁই এই বাংলায় হবে না।
তিনি আরো বলেন, গুজবলীগ, খুনি হাসিনা ও ফ্যাসিবাদের দোসররা কেউ রাজপথে নেই। অথচ শহীদ আবু সাঈদ, শহীদ মুগ্ধের উত্তরসূরীরা সারাদেশের রাজপথ অলিগলিতে ছড়িয়ে আছে। তবে হাসিনা এবং তার দোসররা এখনও বিভিন্ন ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। 'আমরা তাদের হুঁশিয়ার করতে চাই, আমরা আবু সাইদের রক্তকে বৃথা যেতে দেব না। শহীদরা আমাদের পথপ্রদর্শক। প্রয়োজন হলে আবারও আমরা শহীদদের পথধরে জীবন দিতে প্রস্তুত আছি।'
বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে গণহত্যার বিচার করার দাবি জানিয়ে সাদিক কায়েম বলেন, যারা গণহত্যার সঙ্গে জড়িত ছিল— তাদের বিচার করতে হবে। এখনও অনেক স্বৈরাচারের দোসররা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তারা দেশকে অস্থিতিশীল করতে চাচ্ছে। সেজন্য ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর থেকে শুরু করে ২০২৪ সালের আগস্ট মাস পর্যন্ত যত হত্যাকাণ্ড হয়েছে – সেগুলোর বিচার করতে হবে। আমি ছাত্র-জনতাকে অনুরোধ করছি, ফ্যাসিবাদের দোসররা যে যেখানে আছে, তাদের আপনারা ধরিয়ে দিন। তাদের বিরুদ্ধে মামলা করুন। বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির এব্যাপারে সহযোগিতা করবে।
এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় কাজ হচ্ছে ঐক্যবদ্ধ থাকা উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, 'আমাদের ঐক্যকে বিনষ্ট করার জন্য ভেতরে-বাইরে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। এই ষড়যন্ত্রের ফাঁদে পা দেওয়া যাবে না।'
দেশের স্বাধীনতার সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতার প্রশ্নে সবাইকে একসঙ্গে থাকতে হবে বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।
এসময় গণজমায়েতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক সারজিস আলমসহ অন্যান্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
সমাবেশে আরো সংহতি প্রকাশ করে ইসলামি ছাত্র আন্দোলন, হেফাজতে ইসলামসহ অন্যান্য সংগঠন।