মুনতাহাকে যে কারণে হত্যা করা হয়
সিলেটের কানাইঘাটে মুনতাহা আক্তার জেরিনকে (৬) হত্যা করেছেন তারই গৃহশিক্ষিকা মার্জিয়া আক্তার সুমি। এ কাজে তাকে সহায়তা করেছেন তার মা আলিফজান বিবি। আজ রোববার ভোরে মুনতাহার মরদেহ পুকুরে ফেলার সময় আলিফজান বিবি হাতেনাতে ধরা পড়েন।
সুমি ও তার মায়ের বরাত দিয়ে এমনটিই জানিয়েছেন কানাইঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আব্দুল আওয়াল। তিনি জানান, এ ঘটনায় সুমি, তার বোন কুতুবজান ও মাকে আটক করা হয়েছে।এরপর তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আরও তিনজনকে আটক করা হয়। তারা হলেন- নিজাম উদ্দিন ও ইসলাম উদ্দিন। অন্যজনের পরিচয় জানা যায়নি।
গত আটদিন ধরে নিখোঁজ ছিল মুনতাহা। আজ ভোর ৪টার দিকে নিজ বাড়ির পুকুর থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। সে উপজেলার সদর ইউনিয়নের বীরদলের ভাড়ারিফৌদ গ্রামের শামীম আহমদের মেয়ে।
প্রাথমিকভাবে পুলিশের ধারণা, পূর্ব শত্রুতার জেরে মুনতাহার সাবেক গৃহশিক্ষিকা তাকে অপহরণ করে হত্যা করেছেন। সুমিকে গৃহশিক্ষিকা থেকে অব্যাহতি ও চুরির অপবাদ দেওয়ার ক্ষোভ থেকে এ হত্যাকাণ্ড ঘটতে পারে।
কানাইঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আব্দুল আওয়াল বলেন, গত রাতেই (শনিবার) সন্দেহবশত আমরা সুমিকে আটক করি। তার কথাবার্তা অসংলগ্ন মনে হচ্ছিল। তাই মুনতাহার পরিবারকে সুমির বাড়ির দিকে নজর রাখতে বলা হয়েছিল। আজ ভোরের দিকে মুনতাহার পরিবারের সদস্যরা দেখতে পান বাড়ির পাশের একটি ছড়ার মাটি খুঁড়ে মুনতাহার মরদেহ পাশের পুকুরে ফেলে দেন আলিফজান বিবি। সঙ্গে সঙ্গে আমাদের খবর দিলে আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করি এবং আলিফজান বিবি ও তার নাতনিকে আটক করি।
মরদেহের গলায় রশি পেঁচানো ছিল ও শরীরে ক্ষত চিহ্ন ছিল জানিয়ে ওসি বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে সুমি ও তার মা মুনতাহাকে হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি স্বীকার করেছেন। এ ব্যাপারে তদন্ত চলছে।
মুনতাহার চাচা কয়সর আহমেদ দাবি করেন, সুমি পুর্ব শত্রুতার জেরে মুনতাহাকে অপহরণের পর হত্যা করেছেন। পরে মরদেহটি বাড়ির পাশের ডোবায় কাঁদার নিচে পুঁতে রাখেন। ভোরের দিকে দিকে আলিফজান বিবি মরদেহটি সেখান থেকে পুকুরে ফেলার সময় জনতার হাতে আটক হন।
সিলেটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস্) মো. রফিকুল ইসলাম জানান, সুমির স্বীকারোক্তি অনুযায়ী গত ৩ নভেম্বর রাতেই মুনতাহাকে শ্বাসরোধ করে হত্যার পর তার মরদেহ ডোবায় পুঁতে রাখা রাখা হয়। এ ঘটনায় আরও কেউ জড়িত কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
গত ৩ নভেম্বর সকালে বাবার সঙ্গে স্থানীয় এক ওয়াজ মাহফিল থেকে বাড়ি ফেরে মুনতাহা। পরে প্রতিদিনের মতো আশপাশের বাড়ির শিশুদের সঙ্গে খেলতে যায় সে। কিন্তু বিকেল গড়িয়ে গেলেও বাড়ি না ফেরায় স্বজনরা তাকে খোঁজাখুঁজি শুরু করেন।
এদিকে এ ঘটনার পর ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী ভোরেই সুমির ঘর-বাড়িতে আগুন দেন। আজ দুপুরে ময়নাতদন্ত শেষে মুনতাহার মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছে পুলিশ।