আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে সরকার যত দিন চায়, ততদিন মাঠে থাকবে সেনাবাহিনী
কর্নেল ইন্তেখাব হায়দার খান, এসইউপি, পিএসসি কর্নেল স্টাফ সেনাসদর বলেছেন, আইন শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে সরকার যত দিন চায়, ততদিনই মাঠে থাকবে সেনাবাহিনী।
আজ বুধবার (১৩ নভেম্বর) সেনা সদরে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান তিনি। অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে মাঠে সেনাবাহিনীর কার্যক্রম তুলে ধরতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
লিখিত বক্তব্যে ইন্তেখাব হায়দার বলেন, "দেশের বিরাজমান পরিস্থিতিতে সেনাবাহিনী দেশের পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তায় নিয়োজিত আছে। এই দায়িত্ব পালনে সেনাবাহিনী জনগণের জানমাল, রাষ্ট্রের অতি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা (কেপিআই) এবং সরকারি-বেসরকারি গুরুত্বপূর্ণ সংস্থাগুলোকে রক্ষা করার পাশাপাশি যেসব দায়িত্ব পালন করছে তা হলো– পুলিশ বাহিনীকে পুনরায় কার্যক্ষম হতে সহায়তা করা; আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, স্থানীয় প্রশাসন ও জনসাধারণকে সম্পৃক্ত করে দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখা; বিদেশি কূটনীতিক ব্যক্তি ও দূতাবাসগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, শিল্পকারখানার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং কারখানাগুলোকে সচল রাখতে সহায়তা করা।"
"জনগণের ভোগান্তি এড়াতে এবং দেশের অর্থনীতিতে সহল রাখতে মূল সড়কগুলোকে বাধামুক্ত রাখা, বিভিন্ন স্থান থেকে বেহাত ও লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করা এবং সার্বিকভাবে দেশের অন্তর্বর্তী সরকার যাতে তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে পারে, সেজন্য পরিবেশ বজায় রাখা।"
তিনি বলেন, "এছাড়া সেনাবাহিনী অবৈধ মাদকদ্রব্য উদ্ধার ও মাদক ব্যবসায়ীদের গ্রেফতার করা, বিভিন্ন অপরাধী ও নাশকতার কাজের ইন্ধনদাতা ও পরিকল্পনাকারীদের গ্রেফতার করার কাজেও সম্পৃক্ত রয়েছে। যৌথ অভিযানে ৭০০ জনের অধিক মাদক ব্যবসায়ী অথবা মাদকের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং বিপুল পরিমাণ ইয়াবা, ফেনসিডিল, মদ ও গাঁজাসহ অন্যান্য অবৈধ মাদকদ্রব্য উদ্ধার করা হয়েছে।"
কর্নেল ইন্তেখাব বলেন, "এর মাঝে গত আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসে দেশের পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল ভয়াবহ আকস্মিক বন্যায় আক্রান্ত হলে, সেনাবাহিনীর সদস্যরা স্থানীয় প্রশাসনের অনুরোধে প্রত্যন্ত এলাকাসহ সকল দুর্গত এলাকায় স্থানীয় প্রশাসন ও স্বেচ্ছাসেবকদের সাথে সম্মিলিতভাবে বিপদগ্রস্ত মানুষদের উদ্ধার, ত্রাণ বিতরণ এবং জরুরি চিকিৎসা সেবা প্রদান করে। এছাড়া দুর্গত এলাকায় মোবাইল সংযোগ পুনঃস্থাপনে সহায়তা, মহাসড়কে ট্র্যাফিক চলমান রাখা, ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ ও সড়ক সংস্কার, এবং বন্যা পরবর্তী পুনর্বাসনেও সেনাবাহিনী সক্রিয় ভূমিকা রাখে, যা এখনো চলমান রয়েছে।"
তিনি বলেন, "এসময় বন্যা দুর্গতদের সাহায্যের জন্য দেশের আপামর জনসাধারণের অংশগ্রহণ ও সহমর্মিতা ছিল সত্যিই দৃষ্টান্তমূলক। পরবর্তীতে অক্টোবর মাসে দেশের মধ্য-উত্তরাঞ্চলের ৪টি জেলা বন্যা আক্রান্ত হলে একইভাবে সেনাবাহিনীর সদস্যরা স্থানীয় প্রশাসনের অনুরোধে উদ্ধার, ত্রাণ বিতরণ এবং জরুরি চিকিৎসা সেবা কাজে অংশগ্রহণ করে।"
তিনি আরও বলেন, "১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখে দায়িত্ব পালনের সুবিধার্থে সশস্ত্র বাহিনীর ক্যাপ্টেন ও তদূর্ধ্ব পদবির অফিসারদের সরকার কর্তৃক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা প্রদান করা হয়, যা এখনো চলমান রয়েছে। ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা যাতে সুষ্ঠুভাবে এবং নিয়মতান্ত্রিকভাবে প্রয়োগ করা হয়, তার জন্য সেনাবাহিনীর সকল পর্যায়ে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এই বিশেষ ক্ষমতার কার্যকরী প্রয়োগের কারণে ইতিমধ্যে বেশ কিছু সংকটপূর্ণ পরিস্থিতি যেমন চিহ্নিত অপরাধীদের গ্রেফতার, শিল্পাঞ্চলের বিশৃঙ্খলা, রাস্তা অবরোধ ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণসহ সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে।"
"এসব দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি সেনাবাহিনী অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তায় বাংলাদেশ-দক্ষিণ আফ্রিকা টেস্ট সিরিজ চলাকালীন উভয় দলের খেলোয়াড় ও অফিসিয়ালদের ও ভেন্যুর সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।"
কর্নেল ইন্তেখাব বলেন, "দেশের সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্ম উৎসব দুর্গা পূজা যাতে নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হতে পারে সেজন্য দেশব্যাপী নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করে। এসময় সারা দেশে অতিরিক্ত ১৩৩টি সেনা ক্যাম্প স্থাপন করা হয় এবং ১০ হাজারের অধিক অতিরিক্ত সেনাসদস্য মোতায়েন করা হয়। পূজার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সেনাবাহিনীর পাশাপাশি সকল আইন- শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থা, ছাত্র সংগঠন ও স্বেচ্ছাসেবক, স্থানীয় প্রশাসন, ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ এবং সাধারণ জনগণের সম্মিলিত ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় কোন উল্লেখযোগ্য দুর্ঘটনা ব্যতীত পূজা উৎসব সম্পন্ন হয়। একইভাবে বৌদ্ধদের প্রবারণা পূর্ণিমা ও কঠিন চীবরদান উৎসব, যা এখনো চলমান রয়েছে, তা যেন নিরাপদে পালিত হতে পারে, সেজন্য সেনাবাহিনী অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং সংশ্লিষ্ট বৌদ্ধ সংগঠন ও ধর্মীয় নেতৃবৃন্দের সাথে সম্পৃক্ত হায় দায়িত্ব পালন করছে। এর পাশাপাশি পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে ও সাম্প্রদায়িক সংঘাত এড়াতে এবং কক্সবাজার জেলায় এফডিএমএন ক্যাম্প এলাকায় সার্বিক নিরাপত্তা বজায় রাখতে সেনাবাহিনী নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।"
তিনি বলেন, "আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি সেনাবাহিনী বৈষম্য-বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিভিন্ন সময়ে যারা আহত হয়েছেন, তাদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। অদ্যাবধি ৩২৯৫ জনকে দেশের বিভিন্ন সিএমএইচে চিকিৎসা প্রদান করা হয়েছে, যার মধ্যে ৪৩ জন এখনো চিকিৎসাধীন রয়েছেন।"
"দেশের বিরাজমান পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা, দেশের জনগণের জানমাল এবং রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ ও স্থাপনার নিরাপত্তা প্রদানসহ সার্বিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।"
লিখিত বক্তব্যে কর্নেল ইন্তেখাব হায়দার বলেন, "সেনাবাহিনী প্রধানের দিকনির্দেশনাকে অনুসরণ করে মুহূর্তে দেশের ৬২টি জেলায় সেনাসদস্যরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়সমূহ, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, হাদীর প্রশাসন, বিভিন্ন স গণমাধ্যম এবং স্থানীয় জনগণের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে সার্বক্ষণিক সক্রিয়ভাবে দায়িত্ব পালন করছে। সামনের দিনগুলোতে এই সমন্বয় ও পারস্পরিক সহযোগিতা আরও বৃদ্ধি করে কর্মধারা অব্যাহত রাখতে সেনাবাহিনী অঙ্গীকারবদ্ধ।"