নারীর খণ্ডিত মরদেহ উদ্ধার: প্রথমে শান্তনা বেগমের পরিচয় অস্বীকার করেছিলেন তার স্বামী
মাত্র ৬ মাস আগেই শান্তনা বেগমের সঙ্গে নতুন সংসার পেতেছিলেন নয়ন মিয়া। গত সোমবার রাতে যখন স্ত্রীর লাশ উদ্ধার করা হয়, তখন বাসায় নির্বিকার ঘুমাচ্ছিলেন তিনি। এমনকি লাশ উদ্ধারের পর পুলিশি জেরার মুখে প্রথমে স্ত্রীর পরিচয়ও অস্বীকার করেন নয়ন।
গত সোমবার (১১ নভেম্বর) ঢাকার সাভারের বিরুলিয়া ইউনিয়নের দত্তপাড়া এলাকার একটি নার্সারি থেকে শান্তনা বেগম (৩৭) নামে এক নারীর খণ্ডিত মরদেহ উদ্ধারের ঘটনার পর নিহতের স্বামীর এমন নির্বিকার আচরণের বর্ণনা দেন স্থানীয় নার্সারি ব্যবসায়ী আব্দুল খালেক গাজী।
এ ঘটনায় ইতোমধ্যে হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে নয়ন মিয়াকে (৪০) গ্রেপ্তারের পর ৭ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠিয়েছে পুলিশ।
নিহত শান্তনা বেগম ধামরাইয়ের বালিয়া এলাকার মৃত সোবাহান আলীর মেয়ে। আর তার স্বামী নয়ন মিয়া টাঙ্গাইলের মির্জাপুরের মৈশামুড়া এলাকার বাদল মিয়ার ছেলে।
সোমবার শান্তনা বেগমের খণ্ডিত মরদেহ উদ্ধারের পর বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।
যে নার্সারির ভেতর থেকে খণ্ডিত মরদেহটি উদ্ধার করা হয়েছে, সেই নার্সারির মালিক আব্দুল খালেক গাজী দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে (টিবিএস)-কে বলেন, 'সোমবার দুপুর ৩টার পর নার্সারির একজন কর্মচারী প্রথমে গাছে পানি দিতে গিয়ে মাথা ও হাতবিহীন মরদেহটি দেখতে পান। এটা দেখার পর ওই কর্মচারী প্রথমে অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে স্থানীয়দের সঙ্গে আলোচনা করে রাতে পুলিশকে বিষয়টি জানানো হলে পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে নিহতের লাশটি উদ্ধার করে।'
খালেক গাজী বলেন, 'কিছু ঘাস, খড়কুটো দিয়ে মাথা ও হাতবিহীন মরদেহটি ঢাকা ছিল। পরে পুলিশ এসে বেশ কিছুটা দূরে একটি প্লাস্টিকের বস্তা থেকে লাশের বাকি অংশ উদ্ধার করে।'
তিনি আরও বলেন, 'পরবর্তীতে লাশের মাথা উদ্ধার হওয়ার পর স্থানীয়রা মৃত নারীকে চিনতে পারে। পরে পুলিশ খোঁজ নিয়ে ওই নারীর ভাড়া বাসায় যায়। বাসায় তার স্বামী নয়ন তখন ঘুমাচ্ছিলেন। প্রথমে নিহতের স্বামী ওই নারী তার স্ত্রী না বলে দাবি করেন পুলিশের কাছে। এক পর্যায়ে স্ত্রীর কথা স্বীকার করেন, তবে পুলিশকে তিনি জানান দুইদিন যাবত তার স্ত্রী নিখোঁজ ছিলেন। এরপর পুলিশ তাকে আটক করে।'
নিহতের মা রাজভানু টিবিএসকে জানান, নিহতের স্বামী নয়ন মিয়া পেশায় একজন রাজমিস্ত্রি। প্রায় ৬ মাস আগে প্রথম স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদ ঘটিয়ে নয়নকে বিয়ে করেন শান্তনা। প্রথম সংসারে শান্তনার একটি ১৪ বছরের মেয়ে রয়েছে। নয়নেরও এটি দ্বিতীয় সংসার। প্রথম সংসারে তার দুই মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে। শান্তনার প্রথম স্বামীও পেশায় রাজমিস্ত্রি ছিলেন। প্রথম স্বামীর সঙ্গে টাঙ্গাইলের মির্জাপুরেই থাকতেন শান্তনা। সেখান থেকেই নয়নের সঙ্গে পরিচয় এবং ঘনিষ্ঠতা। এক পর্যায়ে নয়নের সঙ্গে পালিয়ে সাভারে এসে সংসার শুরু করেন শান্তনা।
সাভার মডেল থানার বিরুলিয়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ওয়াজেদ আলী টিবিএসকে বলেন, 'স্থানীয়দের কাছ থেকে খবর পেয়ে আমরা নিহতের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালে পাঠাই। এ ঘটনায় নিহতের মা রাজভানু বাদী হয়ে সাভার মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। নিহতের স্বামীকে সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেপ্তার করে, তার ৭ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে।'
হত্যাকাণ্ডের কারণ তদন্তের পর জানা যাবে বলেও জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।