বাংলাদেশে বছরে ১২-১৮টি এলএনজি কার্গো রপ্তানির প্রস্তাব ব্রুনাইয়ের
বাংলাদেশের সঙ্গে ১০ বছরের দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির আওতায় বছরে ১২ থেকে ১৮টি এলএনজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) কার্গো রপ্তানির প্রস্তাব দিয়েছে ব্রুনাই সালতানাত।
ব্রুনাই এনার্জি সার্ভিসেস অ্যান্ড ট্রেডিং (বেস্ট) এসডিএন বিএইচডি বাংলাদেশের রাষ্ট্রায়ত্ত রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি লিমিটেডের (আরপিজিসিএল) কাছে এই প্রস্তাব পাঠিয়েছে বলে এক নথি দেখেছে ইউএনবি।
প্রস্তাব অনুযায়ী, প্রতিটি কার্গোর আকার প্রায় ৩১ লাখ এবং ৩২ লাখ এমএমবিটিইউ (মিলিয়ন ব্রিটিশ থার্মাল ইউনিট, এলএনজি পরিমাপের জন্য ব্যবহৃত একটি ইউনিট) এর মধ্যে হবে। এর দাম এমএমবিটিইউ প্রতি জেকেএম + শূন্য দশমিক ৮৭ মার্কিন ডলার হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
জাপান কোরিয়া মার্কার(জেকেএম) হলো একটি সূচক যা জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, চীন এবং তাইওয়ানে বিতরণ করা এলএনজির মূল্য পরিমাপ করে এবং এশিয়ান স্ট্যান্ডার্ড হিসাবে গৃহীত হয়। এস অ্যান্ড পি গ্লোবালের তথ্য অনুযায়ী, ২০ নভেম্বর পর্যন্ত জেকেএম ১৪ দশমিক ৬৫ মার্কিন ডলার।
অতীতে বাংলাদেশ সাধারণত ৩৩ লাখ ৬০ হাজার এমএমবিটিইউ পরিমাপের এলএনজি কার্গো আমদানি করেছে।
ব্রুনাইয়ের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সংস্থা বেস্ট প্রাথমিকভাবে আঞ্চলিক জ্বালানি বাজারে অপরিশোধিত তেল, এলএনজি এবং মিথানল বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত এবং আরপিসিএল রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন পেট্রোবাংলার একটি সহায়ক সংস্থা- যা বিদেশ থেকে এলএনজি আমদানিতে নিযুক্ত রয়েছে।
পেট্রোবাংলার কর্মকর্তারা জানান, জ্বালানি সমৃদ্ধ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটি থেকে এলএনজি আমদানির ধারণা নতুন নয়, ২০১৮ সালেও বাংলাদেশ দেশটি থেকে একটি প্রস্তাব পেয়েছিল। এর ফলে ২০১৮ সালের আগস্টে দুই 'ভ্রাতৃপ্রতিম' দেশের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হয়।
কিন্তু সেই সমঝোতা স্মারকটি দুই দেশের মধ্যে প্রস্তাবিত জ্বালানি বাণিজ্যে বাস্তবায়িত হয়নি, যার ফলে শেষ পর্যন্ত ঢাকা ও বন্দর সেরি বেগাওয়ানের মধ্যে চুক্তিটি আরও ৫ বছরের জন্য বাড়ানো হয়েছে।
সরকারি সূত্র জানায়, ২০২২ সালের ১৫-১৭ অক্টোবর ব্রুনাইয়ের সুলতান হাজী হাসানাল বলকিয়া তিন দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে বাংলাদেশে আসেন।
বিষয়টি স্পর্শকাতর হওয়ায় নাম প্রকাশ না করার শর্তে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের শীর্ষ পর্যায়ের একটি সূত্র জানায়, প্রাথমিকভাবে বাংলাদেশ এই প্রস্তাবে রাজি হয়েছে। আন্তর্জাতিক স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি সরবরাহের মাধ্যমে তার ব্যবসায়িক স্বার্থ সর্বোত্তমভাবে উদ্ধার হওয়ায় তৎকালীন জ্বালানি ও বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করছিলেন বলে ব্যাপক অভিযোগ রয়েছে।
ফলে হামিদের এমন বিরোধিতায় ব্রুনাই হতাশ হয়ে পড়ে বলে সূত্রটি জানায়।
গত ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ব্রুনাই পুনরায় যোগাযোগ শুরু করে এবং এবার এতে অগ্রগতি দেখা গেল।
জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিষ্ঠান ব্রুনাই থেকে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে জিটুজি চুক্তির আওতায় দীর্ঘমেয়াদি ভিত্তিতে এলএনজি আমদানির জন্য পেট্রোবাংলার প্রস্তাব উত্থাপন করে।
গত ১৩ নভেম্বর অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদের কমিটির (একসিইএ) সভায় এ প্রস্তাবে নীতিগতভাবে অনুমোদন দেওয়া হয়।
বর্তমানে বাংলাদেশ জি-টু-জি চুক্তির আওতায় দীর্ঘমেয়াদি ভিত্তিতে কাতার ও ওমান থেকে বছরে ৩৫ লাখ মেট্রিক টন (এমটিপিএ) এলএনজি আমদানি করছে।
কাতার ১৫ বছরের চুক্তিতে ২ দশমিক ৫ এমটিপিএ এবং ওমান ১০ বছরের চুক্তিতে ১ এমটিপিএ সরবরাহ করে আসছে।
গত বছর তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার এলএনজি আমদানি আরও ৫ দশমিক ৫ এমটিপিএ বাড়ানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এক্সিলারেট এনার্জি ও স্থানীয় গ্রুপ সামিট গ্রুপের সঙ্গে আরও দুটি চুক্তি সই করে।
ব্রুনাইয়ের প্রস্তাব সম্পর্কে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার বলেন, চুক্তিটি 'নীতিগত' অনুমোদনের পর্যায়ে রয়েছে, এখন রাষ্ট্রীয় হাইড্রোকার্বন এজেন্সি দাম চূড়ান্ত করার জন্য আলোচনা শুরু করবে এবং চুক্তির মেয়াদও নির্ধারণ হবে।
তিনি ইউএনবিকে বলেন, "আলোচনা শেষ না হওয়া পর্যন্ত, সরবরাহের মূল্য এবং চুক্তির মেয়াদ সম্পর্কে কিছুই নির্ধারণ করা হবে না।"