বিনিয়োগ ও প্রবৃদ্ধির হারের তথ্য-উপাত্ত গাফিলতি ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে তৈরি করা হয়েছে: দেবপ্রিয়
দেশের বিনিয়োগ ও প্রবৃদ্ধির হার সংক্রান্ত তথ্য-উপাত্ত গাফিলতি ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে তৈরি করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশের অর্থনীতির ওপর শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।
তিনি বলেন, 'অর্থনীতির ওপর তৈরি শ্বেতপত্রে আমরা দেখার চেষ্টা করেছি দেশের অর্থনীতির এই অবস্থায় আসার মূল কারণ কী? প্রথমেই বের হয়েছে বিনিয়োগের হার, প্রবৃদ্ধির হার এগুলোর তথ্য-উপাত্ত গাফিলতি ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে তৈরি করা হয়েছে।'
আজ রোববার (১ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের কার্যালয়ে প্রতিবেদনটি জমা দেওয়ার সময় দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য এসব কথা বলেন।
এসময় তিনি বলেন, 'বিদেশি দাতারাও বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশের উন্নয়নগাথার প্রশংসা করেছেন, যা আমাদের কাছে গ্রহণযোগ্য মনে হয়নি।'
প্রধান উপদেষ্টার উদ্দেশে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, 'আপনি আমাদের যে দায়িত্ব দিয়েছিলেন, তা জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের দলের ১১ জন সদস্য গত তিন মাস ধরে বিনা পারিশ্রমিকে কাজ করেছেন। এছাড়াও আরও ৩০ জন গবেষণা কর্মকর্তা যুক্ত ছিলেন।'
তিনি বলেন, 'সাধারণ মানুষের সঙ্গে আলোচনায় আমরা প্রচুর প্রত্যাশা দেখেছি, যা মোকাবিলা করাটা একটা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।'
তিনি আরও বলেন, 'আমরা খুবই স্বাধীনভাবে এই কাজ করেছি, সরকারের কোনো হস্তক্ষেপ ছিল না।'
বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক জবাবদিহিতা উপেক্ষিত হয়ে গিয়েছিল বলে মন্তব্য করে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, 'বাংলাদেশের বিগত তিন নির্বাচনে যে বিকৃতি ঘটেছে, তাকে আমরা উৎস হিসেবে মনে করি। কেন্দ্রায়িত স্বৈরাচারী সরকারের কাঠামো গড়ে উঠেছিল, রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী ও আমলাদের সংশ্লেষ বাংলাদেশের উন্নয়নের অগ্রযাত্রাকে থামিয়ে দিয়েছিল। ক্রনি ক্যাপিটালিজমের মাধ্যমে নীতি প্রণয়নকে কুক্ষিগত করে ফেলা হয়েছিল।'
তিনি বলেন, 'একটি রাষ্ট্র কীভাবে বিকল হয়ে যায়, তার একটি অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি আমরা সামনে এনেছি। ৩০টি অধ্যায়ের মাধ্যমে কাঠামোগত সমস্যাগুলোকে তুলে ধরা হয়েছে। প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের কথা আছে।'
তিনি আরও বলেন, 'সরকার ক্ষমতায় আসার পর যে সমস্যাগুলো পেয়েছে, তা আমাদের ধারণার চেয়েও বেশি গভীর বলে আমরা বলেছি। আমাদের প্রথম প্রস্তাব হলো অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা যেহেতু উন্নয়ন ও সংস্কারের নিয়ামক হিসেবে কাজ করে, তাই স্থিতিশীলতার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা এবং এক্ষেত্রে জবাবদিহি নিশ্চিত করলে সরকার আরও শক্তিশালী হবে। ছয় মাসে সরকার যে কাজ করেছে, তার একটি খতিয়ান জনগণের সামনের আসা উচিত।'
তিনি বলেন, 'দ্বিতীয় প্রস্তাব হচ্ছে বাজেট আসার আগে স্বস্তিদায়ক একটি কর্মপরিকল্পনা দরকার। বাজেট আসছে, এ বাজেটে কীভাবে কর আহরণ বাড়ানো যায়, প্রবৃদ্ধি বাড়ানো যায়, আর্থিক খাতের ব্যবস্থাপনা উন্নত করা যায় ইত্যাদি বিষয়ে কিছু পরামর্শ আছে। এলডিসি থেকে উত্তরণের জন্য যে সময় আছে, সেটিকে সঠিকভাবে ব্যবহার করার কথা বলা হয়েছে।'