নিয়ম না মেনে এস আলম গ্রুপকে ঋণ দেওয়ার অভিযোগ: ইসলামী ব্যাংকের ৬ কর্মকর্তা বরখাস্ত
নিয়ম বহির্ভূতভাবে বিতর্কিত এস আলম গ্রুপকে ঋণ দেওয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাকার অভিযোগে ইসলামী ব্যাংকের ৬ কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে ব্যাংকটি। আজ বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) ব্যাংক থেকে এ সংক্রান্ত চিঠি দেওয়া হয়।
বরখাস্তরা হলেন- সিনিয়র অ্যাসটেন্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. মোস্তাক আহমদ (রংপুর জোন), অ্যাসিসটেন্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট (এভিপি) আমিন উল্লাহ পাশা (খুলনা জোন), এভিপি মোহাম্মদ দিদারুল আলম (ফেনী সদর শাখা), ফার্স্ট অ্যাসিসটেন্ট ভাইস প্রেসিডেন্ড (এফএভিপি) নুরুল আমিন (খাতুনগঞ্জ শাখা), এফএভিপি আব্বাস আহমদ (খাতুনগঞ্জ) এবং প্রিন্সিপাল অফিসার মো. আনোয়ারুল হক।
বিষয়টি নিশ্চিত করে খাতুনগঞ্জর শাখার সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, 'প্রধান কার্যালয়ের আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে খাতুনগঞ্জ শাখার তিন কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। বাকি তিনটি জোন থেকে বরখাস্ত হওয়া তিন কর্মকর্তাও আগে খাতুনগঞ্জ শাখায় কর্মরত ছিলেন।'
বরখাস্তের কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'এস আলম গ্রুপকে দেওয়া ইসলামী ব্যাংকের ঋণের সবচেয়ে বেশি বিতরণ হয়েছে খাতুনগঞ্জ শাখা থেকে। এই ঋণ বিতরণে যথেষ্ট অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। যা বের করতে বাংলাদেশ ব্যাংক, বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) ও দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) পৃথকভাবে তদন্ত চলছে। এছাড়া ব্যাংকটির ইন্টারনাল অডিট ডিপার্টমেন্ট এবং আলাদাভাবে নিয়োগ দেওয়া স্বতন্ত্র অডিট ফার্মও ঋণ প্রদানে অনিয়ম বের করে আনার কাজ করছে। এস আলম গ্রুপকে নিয়ম বহির্ভূতভাবে ঋণ প্রদানে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের জড়িত থাকার বিষয় উঠে এসেছে। ফলে তাদের সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।'
উল্লেখ্য, দেশের সবচেয়ে বড় বেসরকারি বাণিজ্যিক এই ব্যাংক [ইসলামী ব্যাংক] থেকে ৭৩ হাজার ১১৩ কোটি টাকার ঋণ বের করে নিয়েছে এস আলম গ্রুপ ও তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। যা ব্যাংকটির মোট ঋণের প্রায় ৫০ শতাংশ। বিতরণ করা এই ঋণের ৪২ হাজার কোটি টাকা নেওয়া হয়েছে খাতুনগঞ্জ করপোরেট শাখা থেকে।
এই ঋণ প্রদানে কোনো নিয়ম-নীতি মানা হয় নি বলে উঠে এসেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটও তদন্তে।
২০১৭ সালে মালিকানা পরিবর্তনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে ইসলামী ব্যাংক থেকে এসব ঋণ বের করে নেয় এস আলম। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ এস আলমকে এই ঋণ দিতে ব্যাংকটির কিছু কর্মকর্তা সহযোগী হিসেবে ভূমিকা পালন করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
এর আগে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পরপরই ১৯ আগস্ট এস আলমের সাথে ঘনিষ্ট এএমডি জে কিউ এম হাবীবুল্লাহ, ডিএমডি মো. আকিজ উদ্দিন, মোহাম্মদ সাব্বির ও মিফতাহ উদ্দিনসহ ৮ শীর্ষ কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করে ব্যাংকটি। এরপর ২৫ সেপ্টেম্বর বরখাস্ত করা হয় এস আলমের পরিবারের গৃহকর্মী মর্জিনার স্বামী ও ব্যাংকটির চকবাজার শাখার প্রিন্সিপাল অফিসার হোসাইনকে। যিনি ডিএমডি আকিজ উদ্দিনের সাথে ব্যাংকটির নিয়োগ ও বদলি বাণিজ্যে জড়িত ছিল অভিযোগ রয়েছে।