আমরা এক ধ্বংসস্তূপের ওপর দাঁড়িয়ে আছি, এখান থেকে নতুন করে যাত্রা করতে হবে: প্রধান বিচারপতি
প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ বলেছেন, এ মুহূর্তে আমরা ধ্বংসস্তূপের ওপর দাঁড়িয়ে আছি। বিগত বছরগুলোতে বিচার প্রক্রিয়ায় আমাদের বিচারবোধ ও ন্যায়বিচারের মূল্যবোধকে বিনষ্ট ও বিকৃত করা হয়েছে। সততার বদলে অসততা, অধিকারের বদলে বঞ্চনা, বিচারের বদলে নিপীড়ন, আশ্রয়ের বদলে নির্যাতনকে স্বাভাবিক ব্যাপারে পরিণত করা হয়েছে। অথচ এরকম সমাজ, রাষ্ট্র আমরা চাইনি।
আজ রোববার (৮ ডিসেম্বর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে 'সুশাসনের জন্য জনসম্পৃক্ত সংস্কার: অসুবিধাগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর আকাঙ্ক্ষা' শীর্ষক নাগরিক সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
দেশের ক্রান্তিলগ্নের বর্তমান ভগ্নদশা থেকে বিচার বিভাগও মুক্ত নয় বলে জানিয়ে তিনি বলেন, ৫ আগস্টের পর আপনারা সারাদেশের হদযে ভগ্নদশা দেখেছেন, সেই অবস্থা আমাদের বিচার বিভাগেও আছে। আমরা যথাযথ সংস্কারের চেষ্টা করছি। এমনকি আপনাদের আশ্বস্ত করে বলতে চাই, বিচার বিভাগের কিছু প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের মাধ্যমেই আমাদের যাত্রা শুরু হয়েছে।
প্রধান বিচারপতি বলেন, 'এ ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়ে আমাদের নতুন করে যাত্রা শুরু করতে হবে।...এ চ্যালেঞ্জ অনেক বড়। আজ থেকে প্রতিটি শ্রেয়, শুভ ও কল্যাণকর কর্মে সকলেই গণমুখী, জনগণকেন্দ্রিক বিচার বিভাগকে আপনাদের পাশে পাবেন।'
ছাত্র-জনতার বিপ্লব নির্যাতিত ও নিপীড়িত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর অপার সুযোগ করে দিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ সুযোগের সদ্ব্যবহার আমাদের করতে হবে।
তিনি বলেন, আমাদের নিশ্চিত করতে হবে যে, ন্যায়বিচার যাতে বিলম্বিত না হয়। একইসঙ্গে আমাদের নাগরিক অধিকার রক্ষায় আরও উদ্যোগী হতে হবে। যদি নাগরিক অধিকার রক্ষিত না হয়, তাহলে পিছিয়েপড়া জনগোষ্ঠীর অধিকার রক্ষিত হবে না। আর তা না হলে স্বাধীনতার মূল আকাঙ্খা পূরণেও আমরা ব্যর্থ হব।
সৈয়দ রেফাত আহমেদ আরও বলেন, সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের আগামী দিনে এগিয়ে নেওয়া না হলে ৫ আগস্ট যারা প্রাণ ও ত্যাগ করেছে, তা কোনো কাজে আসবে না। যেই মানুষগুলো কষ্টে আছে তাদের কথা তুলে ধরলে এবং তাদের জীবনযাত্রার পরিবর্তন নিয়ে আসলেই আমাদের কাঙ্ক্ষিত সফলতা আসবে।
২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে ছাত্র নেতৃত্বাধীন বিপ্লবের দৃঢ় চেতনাকে স্মরণ করে প্রধান বিচারপতি আরো বলেন, জুলাই বিপ্লব নিপীড়নকে উৎখাত, ন্যায়বিচার, সাম্য এবং মানবতা পুনরুদ্ধারের লড়াই। আমাদের ইতিহাসের এই সংজ্ঞায়িত মুহূর্তগুলো আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, ন্যায়বিচারের সন্ধান একটি ক্ষণস্থায়ী প্রচেষ্টা নয় বরং একটি আজীবন প্রতিশ্রুতি। যা আমাদের বিচারিক মিশনের ভিত্তি তৈরি করে।
প্রধান বিচারপতির পদোন্নতি ৫ বার আটকে রাখা হয়েছিল: দেবপ্রিয়
অনুষ্ঠানে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো বিশিষ্ট ও শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, বিগত বছরগুলোতে আমাদের সবচেয়ে বড় যে ক্ষতিটা হয়েছে সেটি হলো ওই সময় আনুগত্য ছাড়া মেধা ও প্রতিভার কোনো স্বীকৃতি ছিল না। একমাত্র চাটুকার ও অনুগত ব্যক্তিরা রাষ্ট্র, সরকার ও সমাজের বিভিন্ন পদ পেশাজীবীদের সংস্থা দখল করে ছিলেন। মেধা ও তাদের বিদ্যার কোনো স্বীকৃতি ছিল না। একটি জাতিকে পেছনে আটকে রাখার মতো এর চেয়ে বড় আর অপরাধা আর কিছু হতে পারে না।
তিনি বলেন, এ রকম মেধা ও বিদ্যার অস্বীকৃতির জায়গা হয়ে উঠেছিল সুপ্রিম কোর্ট। আপনার জেনে অবাক হবেন যে অন্তত পাঁচবার উনার (প্রধান বিচারপতি) পদোন্নতি আটকে রেখে জুনিয়রদের পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। এত বড় অন্যায় বিচার ব্যবস্থার ভেতরে আমার জীবনকালে দেখিনি।
তিনি আরও বলেন, দেশের গণতন্ত্রকে সুসংহত ও শক্তিশালী করতে অন্তর্বর্তী সরকারের সংলাপ অব্যাহত রাখতে হবে। সবার জন্য সংলাপের দুয়ার খোলা রাখতে হবে। একইসঙ্গে সুশাসনের জন্য সংস্কার অব্যাহত রাখতে হবে। পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে প্রাধান্য দিতে হবে।