আগে বিচার, পরে নির্বাচন: নাগরিক কমিটি
জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেছেন, আওয়ামী লীগের ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত খুন-গুমের বিচার না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশে কোনো নির্বাচন হবে না।
আজ মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মায়ের ডাক আয়োজিত গণজমায়েত কর্মসূচিতে এ কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, গত ১৫ বছরে গুম-খুন ঘটনার বিচার নিশ্চিত না করে বাংলাদেশে কোনো নির্বাচন হবে না। আওয়ামী লীগের আমলে যারা খুনি ছিল, তাদের বিচার নিশ্চিত করতে হবে। আগে বিচার, পরে নির্বাচন। শহীদ ও আহতদের যদি তাদের বিচারের হিস্যা বুঝিয়ে দিতে না পারি, তবে রাজনীতি বলি, নির্বাচন বলি, যেকোনো পরিস্থিতি ব্যর্থ হবে।'
কর্মসূচিতে বিভিন্ন সময় গুম-খুনের শিকার ব্যক্তিদের স্বজনদের পাশাপাশি বিএনপি, জামায়াতসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা অংশ নেন।
কর্মসূচিতে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, 'শহীদের রক্ত শুকানোর আগে অনেক মুরুব্বি আওয়ামী লীগকে ক্ষমার কথা বলছেন, নির্বাচনে আনার কথা বলছেন। আওয়ামী লীগের বিচার নিশ্চিতের আগে তাদের পুনর্বাসনের চেষ্টা করলে, সেটি শহীদের রক্তের সঙ্গে বেঈমানি করা হবে।'
তিনি বলেন, 'ইতিহাসে কোনো দেশে নাই যেখানে রাজনীতিবিদ, সুশীল সমাজ, কবি, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, পেশাজীবী, নায়ক ফ্যাসিস্টদের পক্ষে কথা বলে গেছেন। আমাদের খুঁজে বের করতে হবে কারা খুনিদের ক্যান্টনমেন্টে আশ্রয় দিয়েছে। কারা পুলিশ ভাইদের, বিজিবিকে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে গুলির নির্দেশ দিয়েছে। সেই সাংবাদিকদের কলম ভেঙে দিতে হবে যারা ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের পক্ষে লিখে গেছে।'
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মঈন খান বলেন, 'বাংলাদেশের মানুষ সত্যকে অনুসরন করে, আইনকে অনুসরণ করে, মানবাধিকার অনুসরণ করে। তারা অর্থবিত্তের বিরুদ্ধে গিয়ে মৌলিক অধিকার চায়। যার প্রমাণ জুলাইয়ের অভ্যুত্থান। তারা জীবন দিয়ে গণতন্ত্রকে রক্ষা করেছে।
সংস্কার চলামন প্রক্রিয়া উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'আজ যা সংস্কার করা হচ্ছে। আগামীকাল সেটিরও সংস্কার করা লাগতে পারে। সভ্যতার সূচনালগ্ন থেকে এটি চলে আসছে। আমরা বিচার বিভাগ , সংবিধান, প্রশাসনে সংস্কারের কথা বলছি। তবে সবার আগে প্রয়োজন নিজের সংস্কার। ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে দেশ বড়। দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে আমরা ঐক্যবদ্ধ।'
বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানী বলেন, 'বিগত ১৫/১৬ বছর নয় ৭১ সালের পর থেকে আওয়ামী লীগের রাজনীতির কোনো ভিত্তি ছিল না। তারা ভারতের সহায়তায় ক্ষমতা এসেছে। তাদের ষড়যন্ত্র এখনো শেষ হয়নি, জাতীয় ঐক্য নস্যাতের চেষ্টা চলছে।'
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আহত খোকন চন্দ্র বর্মন বলেন, 'কেবল আমার মুখকে এমন করেছে তা নয়। আমার সামনে একজনের গুলি মুখের এক পাশ দিয়ে বিদ্ধ হয়ে অন্যদিকে বের হয়ে গেছে। আমার কথা এখন বুঝতে কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু আমাকে বলতে হবেই। আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকলে হাসিনা আমাদের কিছুই করতে পারবে না। আমি হাসিনার কঠিন শাস্তি চাই। তার ফাঁসি চাই।'
কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন- অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মঈন খান, জামায়াত ইসলামীর সেক্রেটারি গোলাম মিয়া ফরওয়ার, নাগরিক ঐক্যে সভাপতি মাহমুদুর রহমান, গণসংহতির জোনায়েদ সাকি প্রমুখ।