ঋণ পরিশোধের দাবিতে এস আলমের বাড়ির সামনে ফার্স্ট সিকিউরিটি ব্যাংকের কর্মকর্তারা
ঋণ পরিশোধের দাবিতে এস আলম গ্রুপ কর্ণধার সাইফুল আলম মাসুদের চট্টগ্রামের বাসার সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের কর্মকর্তারা।
মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) দুপুর ১২টার দিকে চট্টগ্রাম নগরীর সুগন্ধা আবাসিক এলাকায় এস আলমের বাড়ির সামনে ব্যাংকটির কর্মকর্তারা এ অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন।
তারা অভিযোগ করেন, গ্রুপটিকে বিশাল অঙ্কের ঋণ দিয়ে এখন সংকটে রয়েছে ব্যাংক।
অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া ব্যাংকটির সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ও খাতুনগঞ্জ শাখার ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ মোস্তফা বলেন, "জনগণের আমানত গ্রহণ করে আমরা বিনিয়োগ করে থাকি। বিনিয়োগের টাকা আদায় না হওয়ায় এখন একটি সংকট সৃষ্টি হয়েছে। টাকা আদায়ের জন্য এ কর্মসূচি পালন করছি।"
মোহাম্মদ মোস্তফ জানান, ব্যাংকটি থেকে নামে-বেনামে ৪৫ হাজার কোটি টাকা নিয়ে গেছে এস আলম। এরমধ্যে চট্টগ্রামের বিভিন্ন শাখা থেকে নিয়েছে প্রায় ৩৫ হাজার কোটি টাকা। যে ঋণগুলোর মান এখন খারাপ (নন-পারফর্মিং) হয়ে যাচ্ছে।
একটি গ্রুপকে কেন এত টাকা ঋণ দেওয়া হয়েছিল— এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, "দেশের বর্তমান পরিস্থিতির সাথে আগের পরিস্থিতি এক ছিল না। যার কারণে বিনিয়োগগুলো সঠিক যাচাই-বাছাই করা তাদের পক্ষে সম্ভব হয়নি।"
অবস্থান কর্মসূচিতে ব্যাংকটির খাতুনগঞ্জ শাখার ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ মোস্তফা, আগ্রাবাদ শাখার মোশারফ হোসেন, জুবলি রোড শাখার মোহাম্মদ আনোয়ার উল আলমসহ চট্টগ্রামের দুটি জোন ও নগরীর ২১টি শাখার ব্যবস্থাপকসহ শতাধিক কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।
কর্মকর্তাদের মতে, ব্যাংকের বিনিয়োগের সিংহভাগ— প্রায় ৪৫ হাজার কোটি টাকা— এস আলম গ্রুপকে ঋণ দেওয়া হয়েছে।
জানা যায়, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকে গ্রাহকের মোট আমানতের পরিমাণ প্রায় ৪৫ হাজার কোটি টাকা। অথচ ব্যাংকটির বিনিয়োগের (ঋণ) পরিমাণ প্রায় ৬৫ হাজার কোটি টাকা।
নিয়ম অনুযায়ী, ইসলামী ব্যাংকগুলো মোট আমানতের ৯২ শতাংশ ঋণ দিতে পারে। বাকি ৮ শতাংশ কেন্দ্রীয় ব্যাংকে (ঋণ আমানত অনুপাত-এডিআর) জমা রাখতে হয়। কিন্তু তা না রেখে বরং কল মানি থেকেও টাকা ধার নিয়ে ঋণ দিয়েছে ব্যাংকটি। ফলে ব্যাংকের বিনিয়োগের (ঋণ) পরিমাণ আমানতকেও ছাড়িয়ে গেছে।
গত ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর গ্রাহকের আমানত নিয়ে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক; যেই ব্যাংকটিতে শুরু থেকে বিতর্তিক শিল্পগ্রুপ এস আলমের নিয়ন্ত্রণ ছিল।
সরকার পরিবর্তনের পরপরই গ্রাহক ব্যাংকটি থেকে টাকা তুলতে হুমড়ি খেয়ে পড়েন। যদিও ৬ আগস্ট থেকে গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী টাকা ফেরত দিতে পারছে না ব্যাংকটি।
গ্রাহকের চাপে বাংলাদেশ ব্যাংক নতুন টাকা ছাপিয়ে ধার দিলেও এখনো গ্রাহকের টাকা দিতে হিমশিম খাচ্ছে ব্যাংক।
যোগাযোগ করা হলে, এস আলম গ্রুপের ডেপুটি ম্যানেজার আশীষ কুমার নাথ বলেন, "ব্যাংকগুলো এলসি খোলার অনুমতি দিচ্ছে না, ফলে কারখানার কাঁচামাল আমদানি ব্যাহত হচ্ছে। এতে গ্রুপটির ব্যবসায়িক কার্যক্রম চ্যালেঞ্জিং হয়ে উঠেছে— যার ফলে ঋণ পরিশোধেও সমস্যা তৈরি হয়েছে।"