বর্ধিত ইনক্রিমেন্টে সন্তুষ্ট নন শ্রমিকরা, আশুলিয়ায় অন্তত ১২ কারখানায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা
সরকার ঘোষিত বাৎসরিক ইনক্রিমেন্ট ৪ শতাংশ বৃদ্ধির ঘোষণা প্রত্যাখান করে ১৫ শতাংশ বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলন করছেন আশুলিয়ার বিভিন্ন তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা।
শ্রমিকদের অব্যাহত আন্দোলন ও কর্মবিরতির মুখে আজ বুধবার (১১ ডিসেম্বর) আশুলিয়ার অন্তত ১২টি কারখানা কর্তৃপক্ষ তাদের কারখানা আজকের জন্য সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে।
শিল্প পুলিশ বলছে, শ্রমিকরা যদিও কোনো বিশৃঙ্খলা বা ঝামেলা সৃষ্টি করছে না, তবে বর্ধিত বেতনে সন্তুষ্ট না হওয়ায় তারা কাজ বন্ধ রেখেছেন; অনেকে বেরিয়ে গেছেন কারখানা থেকে।
শিল্প সূত্র বলছে- হামীম গ্রুপ, শারমীন গ্রুপ, মেডলার, নেক্সট কালেকশন, আল মুসলীম, সেতারা গ্রুপসহ বেশ কিছু কারখানার শ্রমিকরা সকালে কারখানায় এলেও ইনক্রিমেন্ট বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন দাবিতে কাজ বন্ধ করে রেখেছেন।
আরেক সূত্রে জানা গেছে- শ্রমিকদের আন্দোলনের কারণে নাসা ও ট্রাউজার লাইন শ্রম আইনের ১৩(১) ধারায় তাদের কারখানা বন্ধ ঘোষণা করেছে; ব্যান্ডো ডিজাইন সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে; হামীম ও নিট এশিয়ার শ্রমিকরা ইতোমধ্যে কারখানা থেকে বেরিয়ে গেছেন এবং নিউ এইজ, ডেকো, আল মুসলিম, এথিকালসহ অন্যান্য কয়েকটি কারখানার শ্রমিকরা কাজ বন্ধ করে বসে আছেন।
এছাড়াও কাজ বন্ধ করে শ্রমিকরা কর্মবিরতি পালন করায় গতকালের ঘোষণা অনুযায়ী বন্ধ রয়েছে আরও কিছু কারখানা। যদিও এখন পর্যন্ত বন্ধ থাকা এই কারখানাগুলোর সংখ্যা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
এর আগে, শ্রমিকদের কর্মবিরতির কারণে গতকাল মঙ্গলবারও আশুলিয়ার অন্তত ১০টি কারখানায় উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ ছিল।
শিল্প পুলিশ-১ এর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোমিনুল ইসলাম ভূঁইয়া দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "বর্ধিত বেতনে সন্তুষ্ট নন শ্রমিকরা, তাই তারা কাজ বন্ধ করে বসে আছেন। তবে কোনো প্রকার অরাজকতা কিংবা বিশৃঙ্খলা তারা করছেন না।"
তিনি আরও জানান, "কাজ না করায় অন্তত ১২টি তৈরি পোশাক কারখানা আজ সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে।"
এদিকে বিজিএমইএ'র তথ্য বলছে, আশুলিয়ায় আজ বাৎসরিক ইনক্রিমেন্ট ১৫ থেকে ২০ শতাংশ করার দাবিতে শ্রমিকরা কাজ বন্ধ করে বসে আছেন বা কাজ না করে চলে গেছেন- এমন কারখানার সংখ্যা ২৫টি।
এর মধ্যে রয়েছে- হামীম গ্রুপ, শারমীন গ্রুপ, মেডলার গ্রুপ, নাসা গ্রুপ, সেতারা গ্রুপ, নিউ এইজ গার্মেন্টস, নিউ এইজ অ্যপারেলস, আল মুসলিম, ডেকো ডিজাইন, নিট এশিয়া, এনভয় গ্রুপ, দ্য রোজ ড্রেসেস লিমিটেড, ব্যান্ডো ডিজাইনসহ অন্যান্য গ্রুপ বা কারখানা।
নিট এশিয়ার একজন কর্মী দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "গত ৩ দিন যাবত আমাদের কারখানায় ঝমেলা চলছে, শ্রমিকরা কাজ করছেন না। আশেপাশের কারখানার সাথে তাল মিলিয়ে তারাও একই দাবিতে আন্দোলন করছেন। দাবি হলো, বাৎসরিক ইনক্রিমেন্ট ১৫ শতাংশ করা।"
ডেকো গ্রুপের একজন কর্মী বলেন, "শ্রমিকরা কাজ না করে বসে থাকায় সকালেই কর্তৃপক্ষ কারখানা ছুটি ঘোষণা করেছে।"
এদিকে, দ্য রোজ ড্রেসেস লিমিটেড এর মহাব্যবস্থাপক সাধন কুমার দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "গতকাল শ্রমিকরা আমাদের কারখানায় কাজ করেছিল, কিন্তু আজ কারখানায় এলেও আর কাজ করেননি। পরে অবশ্য আমরা কথা বলার পর শ্রমিকরা কাজ শুরু করেছিলেন, কিন্তু আশেপাশের কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়াতে আমরা আর চালাতে পারিনি।"
"কাউকে একবার আঘাত করলে সে যতটুকু ক্ষতিগ্রস্ত হবে, দ্বিতীয়বার আঘাত করলে স্বাভাবিকভাবেই ক্ষতির পরিমাণ বেশি হবে। আমাদের অবস্থাও তাই", মাত্র কিছুদিন আগেই বড় ধরনের শ্রমিক অসন্তোষের ধকল কাটিয়ে উঠতে না উঠতে নতুন করে সৃষ্ট এই পরিস্থিতি কী ধরনের চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে শিল্পের জন্য- এমন প্রশ্নের জবাবে এ মন্তব্য করেন এই কর্মকর্তা।