সংবাদকর্মীর চাকরিচ্যুতের ঘটনায় আমাকে পরিকল্পিতভাবে ব্যবহার করা হয়েছে: হাসনাত
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহর কথায় বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল সময়ের পাঁচ গণমাধ্যমকর্মী চাকরিচ্যুত করার অভিযোগ আনা হয়েছে। তবে তার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার উদ্দেশ্যে এ অভিযোগ আনা হয়েছে বলে দাবি হাসনাতের।
এ বিষয়ে নিজের অবস্থান জানিয়ে ও ওই পাঁচ গণমাধ্যমকর্মীকে অবিলম্বে চাকরিতে বহাল করার দাবি জানিয়ে আজ শুক্রবার এক বিবৃতি দিয়েছেন হাসনাত আব্দুল্লাহ।
গত ২৬ ডিসেম্বর বিবিসির একটি প্রতিবেদনে ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপির বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, "প্রায় ১৫ জনের একটি দলসহ হাসনাত আব্দুল্লাহ সিটি গ্রুপের হেড অফিসে গিয়ে কয়েকজনকে চাকরি থেকে বাদ দেওয়ার জন্য চাপ দেয়ার কথা বিবিসি বাংলাকে নিশ্চিত করেছেন প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. হাসান।"
ওই প্রতিবেদনে চাকরিচ্যুত পাঁচজন সাংবাদিকের অভিযোগ করেন, "গত ১৮ ডিসেম্বর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শীর্ষ নেতা হাসনাত আব্দুল্লাহ কয়েকজনকে নিয়ে সময় টিভির বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান সিটি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সঙ্গে দেখা করেন এবং টিভি স্টেশনের ১০ জনের নামের একটি তালিকা দিয়ে তাদের চাকরিচ্যুত করতে চাপ দেন।"
বিষয়টি ষড়যন্ত্র ও পরিকল্পিতভাবে তাকে ব্যবহার করা হয়েছে জানিয়ে হাসনাত বলেন, "চক্রান্তে পড়ে সময় টিভির মালিকের সঙ্গে কথা বলতে যাওয়াটা আমার ভুল হয়েছে,যা স্বীকার করতে আমার কোনো দ্বিধা নেই।"
প্রকৃত ঘটনার বর্ণনা দিয়ে হাসনাত বলেন, "সিটি গ্রুপের মালিকানাধীন সময় এবং এখন টিভির কয়েকজন সাংবাদিক আমাদের কিছুটা প্ররোচিত করে গত ১৭ ডিসেম্বর বিকাল চারটার সময় টিভির এমডি মো. হাসানের কার্যালয়ে নিয়ে যায়। এটা যে একটা চক্রান্ত ছিল, তা আমরা তখন বুঝতে পারি নি। আমরা সরল মনে মি.হাসানের সঙ্গে কথা বলতে গিয়েছিলাম।"
তিনি আরও বলেন, "সেখানে আমরা মাত্র ৩০ মিনিট ওনার সাথে আলাপ করে বেরিয়ে এসেছিলাম। অথচ বিবিসি বাংলার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে আমি ১৮ ডিসেম্বর গিয়েছিলাম। এটি থেকে পরিষ্কার যে এ ঘটনার সত্যতা বিবিসি বাংলা ভালোভাবে যাচাই করেনি।"
সময় টেলিভিশনের একজন সংবাদকর্মীর মাধ্যমে সিটি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মি. হাসানের সাথে পরিচয় হয়েছিল বলে জানান হাসনাত। ওইদিনের আলোচনার বিষয়ে হাসনাত বলেন, "আমাদের সংক্ষিপ্ত বৈঠকে ৫ আগস্টের পরবর্তী পরিস্থিতিতে সময় টেলিভিশনে চলমান বিভিন্ন ইস্যুতে আলোচনা হয়েছিল। সেখানে আমিসহ উপস্থিত ব্যক্তিরা সঠিক সংবাদ প্রচার করে ফ্যাক্ট ভিত্তিক সাংবাদিকতার আহ্বান জানিয়েছিলাম।"
ওই পাঁচজনকে চাকরিতে পুনর্বহালের দাবি জানিয়ে হাসনাত বলেন, যারা প্রকৃতভাবে এই ষড়যন্ত্রে জড়িত, তাদের চিহ্নিত করার জন্য একটি স্বাধীন তদন্ত কমিটি গঠন করতে হবে; সিটি গ্রুপের মালিক মো. হাসানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে; আর উনি যদি বিবিসিকে এমন বক্তব্য না দিয়ে থাকেন সেক্ষেত্রে গণমাধ্যমে প্রতিবাদ পাঠাতে হবে।
মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন অভিযোগের মাধ্যমে ব্যক্তিগত ও সামাজিক অবস্থান ক্ষুণ্ন করার চেষ্টা বন্ধ করার অনুরোধ জানান হাসনাত। এর পাশাপাশি গণমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষায় এবং সকলের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করতে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।
এদিকে হাসনাত আব্দুল্লাহর বিবৃতি প্রকাশের পর সময় টিভির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, "হাসনাত আবদুল্লাহ'র অবস্থানকালে সময় টেলিভিশনের শেয়ার লেনদেন বিষয়টি আলোচনায় আসেনি। তালিকা মাফিক সময় টেলিভিশনের কর্মী চাকরিচ্যুত করার হুমকি দেয়ার বিষয়টিও অপ্রাসঙ্গিক।"
তারা আরও জানান, "সময় টেলিভিশনের সহকর্মীসহ সকলের স্মরণে থাকার কথা, পরিচালনা বোর্ডের দায়িত্বে পরিবর্তন আসার পর, সময় টেলিভিশনের পরিচালনা বোর্ডের পক্ষ থেকে স্পষ্ট জানিয়ে দেয়া হয়েছিল, দেশ ও সময় টিভির স্বার্থের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হয়, এমন কোনো কাজের সঙ্গে জড়িতদের স্বাগত জানান হবে না। তারই ধারাবাহিকতায় কয়েকজন সহকর্মী সময় টিভি থেকে অব্যাহতি নেন বা দেয়া হয়। যেখানে কোনো রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের সংযুক্তি ছিলো না। সর্বশেষ সিদ্ধান্তের সঙ্গেও এমন কোনো সম্পৃক্ততা খুঁজতে চাওয়া অমূলক "