অন্তর্বর্তী সরকারকে নিয়ে বিতর্কিত প্রতিবেদন প্রত্যাহার ব্রিটিশ এমপিদের
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারকে সমালোচনা করে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন 'বিতর্কিত' হওয়ার অভিযোগ ওঠায়— সেটি প্রত্যাহার করে নিয়েছেন একদল ব্রিটিশ এমপি।
আজ রোববার (১৯ জানুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ান।
গার্ডিয়ান জানায়, বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের পক্ষ নিয়ে ওই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে- এমন অভিযোগ আসার পর তারা সেটি সরিয়ে নেন। অভিযোগ উঠেছে, প্রতিবেদনটি 'ত্রুটিযুক্ত' ও বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের পক্ষে পক্ষপাতদুষ্ট।
যুক্তরাজ্যের কমনওয়েলথ বিসয়ক অল-পার্টি পার্লামেন্টারি গ্রুপ (এপিপিজি) গত বছরের নভেম্বরে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সেখানে ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংকটের পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করা হয়।
এতে অভিযোগ করা হয়, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ, সাংবাদিক ও সাবেক কর্মকর্তাদের দমন করতে দেশের আইন ব্যবস্থাকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। একইসঙ্গে তুলে ধরা হয় কথিত ইসলামি উগ্রপন্থিদের ক্রমবর্ধমান প্রভাবকে।
এপিপিজির প্রতিবেদন সরিয়ে নেয়ার পর একজন মুখপাত্র বলেছেন, এটি আর প্রকাশ করা হচ্ছে না, এবং একজন লেবার এমপি হাউস অব কমন্সে এ সম্পর্কে অভিযোগ করার পরে— এটি 'পর্যালোচনার অধীনে' রয়েছে। এটি ব্যাপকভাবে প্রচারের উদ্দেশ্যে করা হয়নি এবং এপিপিজি বিষয়টিকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাবে না বা কোনো ফলো-আপ করবে না।
সম্প্রতি ব্রিটিশ এমপি রূপা হক প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নিয়ে 'একতরফা বর্ণনা' উপস্থাপনের সমালোচনা করেছেন।
তিনি অভিযোগ করেছেন, এটি অল-পার্টি পার্লামেন্টারি গ্রুপ (এপিপিজি) ফর দ্য কমনওয়েলথের ব্যানারে ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে, যা বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেছে।
রুপা হক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স (পূর্বের টুইটার)-এ দেয়া এক পোস্টে বলেছেন, 'গত শরতে এপিপিজি ফর দ্য কমনওয়েলথের নামে বাংলাদেশের ইউনূস সরকার সম্পর্কে প্রকাশিত 'একতরফা বর্ণনা' ভুল তথ্য প্রচার করেছে এবং যুক্তরাজ্যে সরকারের নীতিকেও বিভ্রান্ত করেছে।।'
যুক্তরাজ্যের এই আইনপ্রণেতা আরও বলেন, 'আমি নিশ্চিত হয়েছি হাউসঅফকমন্স-এ এর কোনো আনুষ্ঠানিক প্রাসঙ্গিকতা নেই।'
মূলত ভারতের নয়াদিল্লিভিত্তিক থিংক-ট্যাংক রাইটস অ্যান্ড রিস্ক অ্যানালাইসিস গ্রুপের তথ্য-প্রমাণের ওপর ভিত্তি করে বিতর্কিত এই প্রতিবেদনটি লেখা হয়েছিল। ব্রিটিশ এমপিদের প্রত্যাহার করে নেওয়া এই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছিল, "আমরা প্রমাণ পেয়েছি, সাবেক মন্ত্রী, আওয়ামী লীগ নেতা, এমপি, সাবেক বিচারক, স্কলার, আইনজীবী ও সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে এতো বেশি সংখ্যায় হত্যার অভিযোগ আনা হচ্ছে যে, সেগুলোর গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।"
এপিপিজির প্রতিবেদনের প্রতিক্রিয়ায় ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশের স্থিতিশীলতার গুরুত্ব তুলে ধরেন। যুক্তরাজ্যের সাথে বাংলাদেশের শক্তিশালী সম্পর্ক রয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
এরপরে গত ৪ ডিসেম্বর, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বাংলাদেশের সংখ্যালঘু পরিস্থিতি এবং জুলাই-আগস্ট ছাত্র আন্দোলনের বিষয়ে যুক্তরাজ্য সরকারকে সঠিক তথ্য প্রদানের জন্য বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুকের প্রতি আহ্বান জানান।
উপদেষ্টা এপিপিজি রিপোর্টে মূল তথ্যের অনুপস্থিতির কথা তুলে ধরেন। এক্ষেত্রে তিনি ৫ আগস্টের আগে বহু ছাত্রের রাস্তায় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হওয়ার ঘটনা উল্লেখ না করার বিষয়টি তুলে ধরেন।
তৌহিদ জোর দিয়ে বলেন, বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিভ্রান্তিকর তথ্য মোকাবিলায় এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বাংলাদেশে সংঘটিত নির্মমতা ও সামগ্রিক পরিস্থিতি সম্পর্কে প্রকৃত সত্য জানাতে বদ্ধপরিকর।