হাসিনার শাসনামলে কর্মরত পুলিশ সুপারদের তথ্য চেয়েছে গুম কমিশন
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে কর্মরত সব জেলার পুলিশ সুপার ও থানার পুলিশ সদস্যদের তথ্য চেয়েছে গুম-সংক্রান্ত তদন্ত কমিশন।
একইসঙ্গে হাসিনা সরকারের পতনের পর ভারত থেকে বাংলাদেশে পুশ ইন করা ব্যক্তিদের বিষয়ে দেশের সীমান্তবর্তী ৩১ জেলার পুলিশ সুপার ও বিজিবির ১৬ সেক্টর কমান্ডারদের কাছ থেকে তথ্য চাওয়া হয়েছে।
গত ২ জানুয়ারি কমিশনের সচিব আশিকুল খবির স্বাক্ষরিত পৃথক তিনটি চিঠিতে পুলিশ হেডকোর্য়াটার ও বিজিবি হেডকোয়ার্টারের মাধ্যমে এ তথ্য চাওয়া হয়।
চিঠিতে পত্রপ্রাপ্তির ১৫ দিনের মধ্যে তথ্য প্রদান করার জন্য পুলিশ সুপার ও বিজিবি সেক্টর কমান্ডারদের বলা হয়। টিবিএসের হাতে চিঠিগুলো রয়েছে।
কয়েকটি সূত্র গতকাল (২৩ জানুয়ারি) টিবিএসকে জানিয়েছে, এখনও চিঠিগুলোর উত্তর দেওয়া হয়নি।
২০২৪ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে অন্তর্বর্তী সরকার গুম কমিশন গঠন করে। ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত সরকারের বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী সংস্থা বা সরকারের মদদে গুম হওয়া ব্যক্তিদের সন্ধান, শনাক্ত, গুমের উদ্দেশ্য ইত্যাদি বিষয়ে গুমের শিকার ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যসহ যেকোনো ব্যক্তি বা সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে তথ্য-প্রমাণাদি সংগ্রহ করার জন্য এই কমিশন গঠন করা হয়েছে।
পুলিশ হেডকোয়ার্টারে পাঠানো একটি চিঠিতে বলা হয়, গুম কমিশনে আসা অভিযোগের অনুসন্ধানের জন্য ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত দেশের সব জেলায় কর্মরত পুলিশ সুপারদের নাম, বিপি নাম্বার, মোবাইল নম্বর, বর্তমান কর্মস্থল, বাবার নাম ও স্থায়ী ঠিকানা প্রয়োজন।
ওই চিঠিতে একই সময়ে (২০০৯-২০২৪) দেশের বিভিন্ন থানায় কর্মরত পুলিশ সদস্যদের নাম, পদবি, বিপি নাম্বারসহ প্রয়োজনীয় তথ্যাদি সংশ্লিষ্ট ডাটাবেজ থেকে দ্রুত পাওয়ার জন্য একজন কর্মকর্তাকে ফোকাল পার্সন হিসেবে মনোনয়ন করতেও বলা হয়। পরবর্তীতে ওই ফোকাল পার্সনের হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বার ও ইমেইল আইডি কমিশনের কাছে পাঠাতে বলা হয়।
আরেকটি চিঠিতে বলা হয়, সম্প্রতি ভারত থেকে গুমের শিকার ব্যক্তিদের বাংলাদেশে পুশ ইন করার তথ্য কমিশনের নজরে এসেছে।
গুম হওয়া ব্যক্তিদের সন্ধান ও শনাক্ত করার জন্য দেশের সীমান্তবর্তী ৩১ জেলা দিয়ে গত ৫ আগস্ট থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ভারত থেকে বাংলাদেশে পুশ ইন হওয়া ব্যক্তিদের নাম, পিতার নাম, ঠিকানা ও পরিবারের একজন সদস্যের জাতীয় পরিচয়পত্র ও মোবাইল নম্বর প্রয়োজন।
সীমান্তবর্তী জেলাগুলো হলো—সাতক্ষীরা, যশোর, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, কুষ্টিয়া, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ, জয়পুরহাট, ঝিনাইদহ, নীলফামারী, দিনাজপুর, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, শেরপুর, জামালপুর, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ, সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা, ফেনী, চট্টগ্রাম, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান।
বিজিবি হেডকোয়ার্টারে পাঠানো অন্য এক চিঠিতে বলা হয়, সম্প্রতি ভারত থেকে গুমের শিকার ব্যক্তিদের বাংলাদেশে পুশ ইন করার তথ্য কমিশনের নজরে এসেছে। গুম হওয়া ব্যক্তিদের সন্ধান ও শনাক্ত করার জন্য দেশের ১৬টি বিজিবি সেক্টর দিয়ে ২০২৪ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ভারত থেকে বাংলাদেশে পুশ ইন হওয়া ব্যক্তিদের বিষয়েও একই তথ্য চাওয়া হয়েছে চিঠিতে।
চিঠিতে উল্লেখিত ১৬টি সেক্টর হলো: ময়মনসিংহ, সিলেট, শ্রীমঙ্গল, দিনাজপুর, কুমিল্লা, রংপুর, ঠাকুরগাঁও, রাজশাহী, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান, কুষ্টিয়া, খুলনা, গুইমারা, রামু ও বাঘাইছড়ি।
এ বিষয়ে বিজিবি সদর দপ্তরের উপমহাপরিচালক (মিডিয়া) কর্নেল মোহাম্মদ শরীফুল ইসলামকে টিবিএসের পক্ষ থেকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
গুম কমিশনের সদস্য ও মানবাধিকারকর্মী নূর খান লিটনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি টিবিএসকে বলেন, কমিশনের পক্ষ থেকে যা জানানো, সেগুলো সংবাদ সম্মেলন করে জানানো হবে। এর বাইরে কমিশনের সদস্য হিসেবে তিনি কোনো কথা বলবেন না।
পুলিশ হেডকোয়ার্টারের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের অ্যাডিশনাল আইজিপি ইনামুল হক সাগর টিবিএসকে বলেন, গুম কমিশন থেকে তথ্য চেয়ে চিঠি দেওয়ার বিষয়টি তিনি অবগত নয়।
'বিভিন্ন দপ্তরে আলাদা আলাদা চিঠি আসে। আমাদের বিভাগে সব চিঠি আসে না। গুম কমিশন থেকে পুলিশ সদস্যদের তথ্য চেয়ে চিঠি দেওয়ার বিষয়টি আমরা অবগত না।'
পুলিশ, বিজিবি ও গুম কমিশনের আর কোনো সদস্য এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি।