জমি না থাকায় চাকরি হবে না, এটাতো হতে পারে না: হাইকোর্ট
পুলিশের ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) পদে সাধারণ নারী কোটায় মেধা তালিকায় শীর্ষে থেকেও জেলায় জমি না থাকায় খুলনার মিম আক্তার পুলিশে চাকরি না পাওয়া নিয়ে হাইকোর্ট বলেছেন, 'জমি না থাকায় চাকরি হবে না, এটাতো হতে পারে না।'
একইসাথে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে মেধাতালিকায় প্রথম হওয়ার পরেও জমি না থাকায় চাকরি না হওয়া মিম আক্তারের বিষয়ে খোঁজ-খবর নিয়ে চেয়েছেন হাইকোর্ট।
সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে আজকের মধ্যে (১৫ ডিসেম্বর) আদালতকে মিমের বিষয়ে জানাতে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
মিমের বিষয়ে বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন আদালতের নজরে আনেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী চঞ্চল কুমার বিশ্বাস।
এর পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এই আদেশ দেন বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ।
পরে চঞ্চল কুমার বিশ্বাস সাংবাদিকদের বলেন, "জমি না থাকায় চাকরি হয়নি খুলনার মিমের- এ ঘটনায় গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন উচ্চ আদালতের নজরে আনি। আদালত বিষয়টি দেখে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলকে খোঁজ নিয়ে আগামীকালের (বুধবার) মধ্যে জানাতে বলেছেন।"
এ সময় আদালত বলেন, "জমি না থাকায় চাকরি হবে না, এটাতো হতে পারে না। পরীক্ষায় প্রথম হয়েছে এতে তো তাকে আরও উৎসাহ দেওয়া উচিত। প্রতিবছর প্রায় ২ হাজার মানুষ নদীভাঙনের শিকার হয়। তারা কি চাকরি পাবে না!"
এদিকে মঙ্গলবার বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে বলা হয়, পুলিশের প্রতিবেদনে 'ভূমিহীন' মিম আক্তারের চাকরি হওয়া নিয়ে জটিলতার অবসান ঘটছে এবার। তার পরিবারকে প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্প থেকে ঘর ও জমি দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে খুলনা জেলা প্রশাসন।
একই ঘটনার শিকার বরিশালের হিজলা উপজেলার আসপিয়া ইসলাম। পুলিশের ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) পদে উত্তীর্ণ হওয়ার পর পুলিশ ভেরিফিকেশন প্রতিবেদনে তাকে 'ভূমিহীন' উল্লেখ করা হয়। পরে তাকে জানানো হয় ' জমি না থাকায়, চাকরি হচ্ছে না'।
বিষয়টি নিয়ে দেশব্যাপী আলোচনা শুরু হলে তার পরিবারকে প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্প থেকে ঘর ও জমি দেওয়ার উদ্যোগ নেয় বরিশাল জেলা প্রশাসন।
এর আগে আইন বিশেষজ্ঞরাও বলেছেন, নিজেদের জমি না থাকায় বরিশালের আসপিয়া ইসলাম ও খুলনার মিম আক্তারকে পুলিশের ট্রেইনি কনস্টেবল পদে নিয়োগ না দিতে যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তা সংবিধান ও আইনের সাথে সাংঘর্ষিক।
সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে ব্যক্তি বা পরিবারের ভূ-সম্পত্তি থাকার কোনও বাধ্যবাধকতা নেই। এমনকি বাধ্যবাধকতা নেই স্থায়ী ঠিকানারও। কেবল বাংলাদেশের নাগরিক হলেই যে কেউ প্রজাতন্ত্রে নিয়োগ লাভের অধিকারী হবেন।
এছাড়াও জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন বিধিমালা-২০১৮ অনুযায়ী, দেশের কোনো নাগরিক কোনো জেলায় তিনবছর বসবাস করলেই তিনি সেই জেলার স্থায়ী নাগরিক বলে গণ্য হবেন।