রাজশাহী মেডিকেলের ল্যাবে করোনা পরীক্ষা বন্ধ
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আরটি-পিসিআর ল্যাবে করোনা পরীক্ষা বন্ধ হয়ে গেছে। মূলত হাসপাতালের আরটি-পিসিআর ল্যাবে কর্মরত দুজন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নেওয়ায় গত শুক্রবার থেকে হাসপাতালের করোনা পরীক্ষা বন্ধ।
হাসপাতালের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী জানান, "বাংলাদেশের কোনো সরকারি হাসপাতালে আরটি-পিসিআর ল্যাব নেই। আমরাই চালু করেছিলাম। যেহেতু হাসপাতালের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা নেই তাই বিভাগীয় ফরেনসিক ডিএনএ ল্যাবের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তাদের দ্বারা এতো দিন ল্যাব পরিচালিত হচ্ছিলো। তারা নিজেদের ল্যাবের কাজের পাশাপাশি করোনা পরীক্ষার কাজও করতেন। যেহেতু তাদের কাজের চাপ বেড়ে গেছে তাই তারা অব্যাহতি নিয়েছেন। এর আগেও তারা অব্যাহতি নিতে চেয়েছিলেন আমরাই অনুরোধ করে রেখেছিলাম।"
পরিচালক আরও বলেন, "এখন সাময়িক করোনা পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে। তবে দক্ষ লোক পেলে আবার ল্যাব চালু করবো। এজন্য বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে আমরা চিঠি দিয়েছি।"
তিনি বলেন, "এখন রাজশাহীতে করোনার প্রাদুর্ভাব নেই বললেই চলে। ল্যাবে নমুনা পরীক্ষাও খুবই কম হচ্ছিলো। গড়ে ৪০ থেকে ৫০টির মতো। সেসব নমুনা এখন রাজশাহী মেডিকেল কলেজের ল্যাবে পাঠানো হচ্ছে। ফলে ল্যাব বন্ধ হলেও তার ক্ষতিকর কোনো প্রভাব পড়ছে না। তবে করোনা বেড়ে গেলে তখন আবার ল্যাব চালু করা ছাড়া উপায় থাকবে না।"
অব্যাহতি নেওয়া দুই কর্মকর্তা হলেন এস এম হাসান এ লতিফ ও হামিদ আহমেদ। রামেক হাসপাতালের পিসিআর ল্যাব চালু করার জন্য ২০২০ সালের মার্চে তাদের ডিএনএ ল্যাব থেকে আনা হয়।
সম্প্রতি হাসপাতালে করোনার নমুনা পরীক্ষার কিট নিয়ে বিশৃঙ্খলার অভিযোগ ওঠে। বিষয়টি তদন্তে গঠিত কমিটি কিট গায়েবের ব্যাপারে উচ্চতর তদন্তের সুপারিশ করে। একই সঙ্গে দুই কর্মকর্তাকে অন্যত্র সরিয়ে দেওয়ার সুপারিশ করা হয়। তবে এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নেওয়ার আগেই তারা দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নিলেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ল্যাবের টেকনোলজিস্টরা সম্প্রতি এই দুই বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অর্ধেক রিঅ্যাকশন ব্যবহার করে করোনা পরীক্ষার পর বাকি অর্ধেক সরিয়ে দেওয়ার অভিযোগ করেন। কাগজপত্রেও গড়মিলের প্রমাণ পাওয়া যায়। কিন্তু ল্যাব থেকে কোনোকিছু সরিয়ে নেওয়ার প্রমাণ পায়নি তদন্ত কমিটি। তবে অভিযোগকারীদের দাবি, অন্তত ২ হাজার কিট গায়েব করে দেওয়া হয়েছে।
এ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গত ৯ নভেম্বর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। কমিটির প্রধান করা হয় রাজশাহী মেডিকেল কলেজের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের প্রধান শাহ আলমকে। এ কমিটি কিট গায়েবের প্রত্যক্ষ প্রমাণ পায়নি। তবে শুধু অভিযোগকারীদের সাক্ষ্যের ভিত্তিতে দুই কর্মকর্তাকে অন্যত্র সরিয়ে দেওয়ার সুপারিশ করে।
গত ২১ নভেম্বর হাসপাতাল পরিচালকের কাছে এ তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়।
তদন্ত কমিটি সুপারিশ করলেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দুই বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তাকে সরিয়ে দেয়নি। তবে গত ১১ নভেম্বর দুই বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানীর কাছে অব্যাহতি চেয়ে চিঠি দেন। এরপর হাসপাতাল পরিচালক অনুরোধ করে গত ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত তাদের ল্যাবে কাজ করান। ১৭ ডিসেম্বর থেকে তারা আর ল্যাবে কাজ করেননি।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজের ল্যাব ইনচার্জ ডা. সাবেরা গুল নাহার জানান, "করোনার উচ্চ সংক্রমণের সময় আমরা প্রতিদিন তিন থেকে চার শিফটে নমুনা পরীক্ষা করেছি। গড়ে ৩৬০ থেকে ৪০০টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এখন করোনার প্রাদুর্ভাব না থাকায় হাসপাতালের পাঠানো নমুনা ধরে ২৫০টির মতো নমুনা পরীক্ষা করা হয়। আক্রান্তের সংখ্যা পাওয়া যায় ৩ থেকে ৫।"