মহামারিতে এসএসসিতে রেকর্ড পাস ৯৩ শতাংশ, জিপিএ-৫ বেড়েছে ৪৭ হাজার
এ বছর প্রায় ২২ লক্ষ পরিক্ষার্থী এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। কোভিড-১৯ মহামারির সংকটে এবার স্কুল ছিল বন্ধ, শিক্ষার্থীরা স্কুলে যেতে পারেনি। অনলাইনে ক্লাস চললেও তা নিয়ে উঠে নানা প্রশ্ন। কিন্তু এবার এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় পাস করেছে রেকর্ড ৯৩ শতাংশ শিক্ষার্থী। জিপিএ-৫ এও রেকর্ড ভেঙেছে শিক্ষার্থীরা।
চলতি বছরের মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) এবং সমমানের পরীক্ষায় প্রায় ৯৩ দশমিক ৫৮ শতাংশ পরিক্ষার্থী পাস করেছে। এসএসসিতে এটিই সর্বোচ্চ পাসের হার। গত বছর ৮২ দশমিক ৮৭ শতাংশ পরীক্ষার্থী পাস করে।
এ বছর জিপিএ-৫ এর সংখ্যা বেড়েছে ৪৭ হাজার ৪৪২। জিপিএ-৫ ও পাসের হারে এবার এগিয়ে আছে মেয়েরা। দেশব্যপী ১ লাখ ৩ হাজার ৫৭৮ জন মেয়ে এবং ৭৯ হাজার ৭৬২ জন ছেলে জিপিএ-৫ পেয়েছে। মোট জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ লাখ ৮৩ হাজার ৩৪০ জন।
আজ বৃহস্পতিবার (৩০ ডিসেম্বর) পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়াল মাধ্যমে ফলাফল ঘোষণা করেন। এসময় তিনি বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ কর্মসূচিরও উদ্বোধন করেন।
পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ফলাফল সম্পর্কে বিস্তারিত জানাবেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।
সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে সর্বকালের সেরা সাফল্য
দীর্ঘ প্রায় ৯ মাস পর ১৪ নভেম্বর শুরু হয় ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) ও সমমানের পরীক্ষা।
দেশে করোনাভাইরাসের প্রকোপ শুরু হলে ২০২০ সালের মার্চে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়। দেড় বছর পর চলতি বছরের ১২ সেপ্টেম্বর দেশের সব স্কুল কলেজ খুলে দেওয়া হয়। অনলাইনে ক্লাস চললেও সর্বসাকল্যে আড়াই মাস শ্রেণীকক্ষে ক্লাস করার সুযোগ পায় এবারের এসএসসি পরীক্ষার্থীরা।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণের ঝুঁকি কমাতে এ বছর পরীক্ষাও হয়েছে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে। তিন ঘন্টার পরিবর্তে পরীক্ষা হয়েছে দেড় ঘন্টায়। কেবল তিনটি নৈর্বচনিক বিষয়ের পরীক্ষায় বসতে হয়েছে শিক্ষার্থীদের। বাংলা, ইংরেজির মত আবশ্যিক বিষয়গুলোতে এবার পরীক্ষা না নিয়ে আগের পাবলিক পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে মূল্যায়ন করা হয়েছে।
বিজ্ঞান বিভাগের পরীক্ষার্থীরা প্রতি বিষয়ে ৩২ নাম্বারের পরীক্ষায় বসে। অন্যদিকে বাণিজ্য ও মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থীরা ৪৫ নাম্বারের পরীক্ষা দেয়।
কোভিড-১৯ মহামারির কারণে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় বলে জানায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
ফলাফল পাবেন যেভাবে
বাংলাদেশ আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটি বুধবার (২৯ ডিসেম্বর) এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইট, সংশ্লিষ্ট পরীক্ষা কেন্দ্র, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং এসএমএস সার্ভিসের মাধ্যমে একযোগে ফলাফল প্রকাশ করা হবে।
ফলাফল পেতে টাইপ করুন, এসএসসি/দাখিল (স্পেস) সংশ্লিষ্ট বোর্ডের প্রথম তিনটি অক্ষর (স্পেস) রোল নম্বর (স্পেস) ২০২১ এবং পাঠিয়ে দিন ১৬২২২ নম্বরে। ফিরতি এসএমএসে ফলাফল জানানো হবে।
কুমিল্লা বোর্ডে পাসের হার ৯৬ দশমিক ২৭ শতাংশ। এই বোর্ডে জিপিএ-৫ পেয়েছে ১৪ হাজার ৬২৬ জন পরিক্ষার্থী।
কুমিল্লা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ড. মোঃ আসাদুজ্জামান এ খবর নিশ্চিত করে বলেন, এ বছর প্রায় ২ লাখ ১৯ হাজার ৭০৪ জন পরীক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছে। এর মধ্যে পাস করে দুই লাখ ১১ হাজার ৫০৩ জন।
মোট পরীক্ষার্থীর মধ্যে ছিলেন ৯৫ হাজার ৮৮৯ জন ছাত্র এবং এক লাখ ২৩ হাজার ৮১৫ জন ছাত্রী। ছাত্রের চেয়ে ছাত্রীর সংখ্যা ২৭ হাজার ৯২৬ জন বেশি।
বিজ্ঞান বিভাগে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে ৫৪ হাজার, পাস করে ৫৩ হাজার ৪০২ জন। পাসের হার ৯৮ দশমিক ৮৯ শতাংশ। জিপিএ-৫ পায় ১৩ হাজার ৩৪ জন।
মানবিকে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে ৮৬ হাজার ৫৩৫, পাস করে ৮৩ হাজার ২১৪ জন। পাসের হার ৯৬ দশমিক ১৬ শতাংশ। জিপিএ-৫ পায় ৫০৯জন।
বাণিজ্যে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে ৭৯ হাজার ১৬৯ জন, পাস করে ৭৪ হাজার ৮৮৭ হন। পাসের হার ৯৪ দশমিক ৫৯ শতাংশ। জিপিএ-৫ পায় এক হাজার ১০৩জন।
এ বছর প্রায় ২২ লক্ষ প্রার্থী এসএসসি এবং সমমানের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করলেও বাল্যবিবাহ, শিশুশ্রম এবং পরিবারের আয় কমে যাওয়ায় এ বছর অনুপস্থিত ছিল ৭৯ হাজার পরিক্ষার্থী।
কোভিড-১৯ মহামারির কারণে এবারের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা পিছিয়ে দেয় সরকার। এই পরীক্ষাগুলো সাধারণত ফেব্রুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিত হয়।
গত বছর, এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল তাদের পূর্ববর্তী এসএসসি এবং জেএসসি ফলাফলের ভিত্তিতে নির্ধারিত হয়। এছাড়া অন্যান্য শ্রেণির শিক্ষার্থীরা স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরবর্তী ক্লাসে উন্নীত হয়েছিল।