ঝালকাঠিতে লঞ্চে অগ্নিকাণ্ড: ইঞ্জিন বদলানোই দুর্ঘটনার প্রধান কারণ
ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পেছনে ইঞ্জিন বদলানোই ছিল প্রধান কারণ। দুর্ঘটনাটি তদন্তের জন্য গঠিত অনুসন্ধানী দলের একজন বিশেষজ্ঞ একথা জানিয়েছেন।
তিনি জানান, লঞ্চটিতে ১২০০ হর্সপাওয়ারের ইঞ্জিন ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হলেও, তা বদলে স্থাপন করা হয় ২৭০০ হর্সপাওয়ারের ইঞ্জিন। কিন্তু, আরও ভারি এ ইঞ্জিন লাগানোর সময় অন্যান্য সহায়ক যন্ত্রপাতি বদলায়নি লঞ্চের মালিকপক্ষ।
এমনই একটি সহায়ক যন্ত্রাংশ ছিল তেলের ট্যাঙ্ক ও ইঞ্জিনের মাঝে জ্বালানি সংযোগের পাইপ লাইন। ভারি ইঞ্জিনের জন্য আরও মজবুত পাইপলাইন দরকার হলেও পুরোনোটিই রেখে দেওয়ায়, সেটি ছিদ্র হয়ে ইঞ্জিনের ওপর তেল ছড়িয়ে পড়ে।
নাম না প্রকাশের শর্তে ওই বিশেষজ্ঞ বলেছেন, "ইঞ্জিন রুমে আগুনের সূত্রপাত হয় প্রধানত দুটি কারণে। একটি ছিল- ইঞ্জিন থেকে সামান্য দূরে রাখা ফুয়েল ট্যাঙ্কের সাথে ইঞ্জিনের সংযোগকারী পাইপলাইনের ক্ষতি।"
"ইঞ্জিনের তাপমাত্রা সাধারণত ৫০০ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড পর্যন্ত হতে পারে, এসময় কোনো প্রকার খোলা জ্বালানির স্পর্শে আসলে সঙ্গে সঙ্গে তাতে বিস্ফোরণ ঘটতে পারে। সংযোগ পয়েন্ট দুর্বল থাকায় পাইপ থেকে জ্বালানি পড়ে ইঞ্জিনের ওপর। উত্তপ্ত ইঞ্জিনের চারিদিকে এভাবে তেল ছড়িয়ে পড়া মাত্রই বিস্ফোরণ ঘটে।"
সম্প্রতি দুর্ঘটনা কবলিত লঞ্চটি পরিদর্শন করা ওই বিশেষজ্ঞের মতে, "আরেকটি কারণ ছিল ইঞ্জিনের ল্যুজ ঢাকনা। ফলে অন্তর্দাহ ইঞ্জিনের স্পার্ক বা স্ফুলিঙ্গ ট্যাঙ্ক থেকে লিক হয়ে আসা তেলের সংস্পর্শে এসে বিস্ফোরণ ঘটায়।"
"সেকেন্ডহ্যান্ড ইঞ্জিনটি কেনা হয়েছিল চট্টগ্রামে স্ক্র্যাপ করা একটি জাহাজ থেকে। এ ধরনের ইঞ্জিনে নানান ধরনের যান্ত্রিক সমস্যা থাকে। যেমন পেছনের অংশ বেশি ভারি হয়। ইঞ্জিনটি চালু করলে লঞ্চের সামনের অংশ কিছুটা উপরে উঠে ভারসাম্য নষ্ট হতো।" ভারসাম্য না থাকায় লঞ্চটি অস্বাভাবিক রকমভাবে দুলতো। বাড়তি এসব ঝাঁকুনির কারণে এমনিতেই দুর্বল তেলের পাইপ ও ইঞ্জিনের কর্ক (ঢাকনা) আরো ক্ষতিগ্রস্ত হয়- বলে উল্লেখ করেন তিনি।
ইঞ্জিন রূমে পর্যাপ্ত পরিমাণ জ্বালানি থাকায় আগুনের শিখা দ্রুত লঞ্চের উপরের দিকেও ছড়িয়ে পড়তে থাকে।
কিছু ফায়ার এক্সটিংগুইশার ইঞ্জিন রুমের ভেতরে থাকলেও, দ্রুত আগুন ছড়িয়ে পড়ায় কেউ সেগুলো ছিটানোর সুযোগ পায়নি বলে জানান তদন্তকারী দলের এ সদস্য।
দুই সপ্তাহের মধ্যেই তদন্ত প্রতিবেদন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দেওয়া হবে। তিনি জানান, লোভের বশে নৌযানের সকল ধরনের নিরাপত্তা নিশ্চিত না করায়- লঞ্চ মালিককে সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়ার সুপারিশ করবে তদন্তকারী টিম।
গেল ডিসেম্বর ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে বরগুনাগামী লঞ্চটিতে আগুন লেগে যায়। ১০ মিনিটের মধ্যে পুরো নৌযানটিকে গ্রাস করে আগুনের লেলিহান শিখা, এতে কমপক্ষে ৪৫ জন মারা যায় এবং আহত হয় অনেকে।
আহতদের মধ্যে ৪৬ জনকে বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। আর ২২ জনকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
এ দুর্ঘটনা নিয়ে ঝালকাঠি, বরগুনা ও ঢাকায় তিনটি মামলা করা হয়েছে। মামলায় এক মালিকসহ পাঁচজনকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।