ফ্লিট বাংলাদেশের খায়রুল আলম, ফ্রিল্যান্সিং করে মাল্টি-মিলিয়নিয়ার
ফ্রিল্যান্সিং করে মাল্টি-মিলিয়নিয়ার! ভাবতে অবাক লাগছে! অথচ এমন কীর্তিই করে দেখিয়েছেন রাজশাহীর খায়রুল আলম। মাত্র চার বছরের মাথায় ফ্রিল্যান্সিং করে শূন্য থেকে শুরু করে এখন মাল্টি-মিলিয়নিয়ার বনে গেছেন তিনি। তিনজন নিয়ে যাত্রা শুরু করা খায়রুল আলমের প্রতিষ্ঠানে এখন কাজ করেন ৫৫০ জন।
একসময় কম্পিউটার কেনার টাকা না থাকলেও এখন তিনি প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের প্রতি মাসে বেতন দেন এক কোটি থেকে দেড় কোটি টাকা। রাজশাহীতে বসেই কাজ করেন অ্যামাজন, ওয়ালমার্টের মতো জায়ান্ট কোম্পানির সাথে। ফ্রিল্যান্সিংয়ের পাশাপাশি তিনি রিয়েল এস্টেট, ই-কমার্সসহ নানা ধরনের ব্যবসা গড়ে তুলছেন। তার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার গল্প ফোর্বস, আন্ট্রাপ্রেইনারের মতো বিশ্ব সাময়িকীতেও স্থান পেয়েছে।
খায়রুল আলমের প্রতিষ্ঠানের নাম 'ফ্লিট বাংলাদেশ'। ২০১৭ সালের ২৮ ডিসেম্বর রাজশাহীতে 'ফ্লিট বাংলাদেশের' যাত্রা শুরু হয়। প্রতিষ্ঠার মাত্র চার বছরের মাথায় গড়ে তুলেছেন বিশাল ফ্রিল্যান্সার সাম্রাজ্য।
তবে খায়রুল আলমের শুরুটা অতটা মসৃণ ছিলো না। অনেক কাঠখড় পেরিয়ে তাকে এই অবস্থানে আসতে হয়েছে। নিতে হয়েছে নানামুখী ঝুঁকি।
খায়রুল আলম বলেন, "২০১৭ সালে আমার স্ত্রী অসুস্থ হয়ে পড়ে। তখন বাধ্য হয়েই আমাকে ঢাকা ছাড়তে হয়। ঢাকা থেকে রাজশাহীতে এসে জমানো ১২ লাখ টাকা পুঁজি দিয়ে নগরীর নওদাপাড়ায় ২০১৭ সালের ডিসেম্বরের ২৮ তারিখ ফ্লিট বাংলাদেশ গড়ে তুলি। পুরো টাকাটাই অফিস তৈরিতে বিনিয়োগ করি। সব সম্বল দিয়ে বিনিয়োগ করার পর আমার এমন অবস্থা হয়ে গিয়েছিলো যে, আমার একমাত্র বাচ্চাটার দুধ কেনার টাকা ছিলো না। কিন্তু তিনদিনের মাথায় দুই হাজার ডলারের একটা কাজ পেয়ে যাই। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। তখন আমার কর্মী ছিলো ২০ জন। তবে ২০১৫ সাল থেকেই তিনজন নিয়ে অল্প অল্প করে কাজ করতাম।"
খায়রুল আলম বলেন, "প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলার পর আমার টার্গেট ছিলো কিভাবে আমার কর্মীদের লাইফস্টাইল পাল্টে ফেলা যায়। যাতে তারা ফ্লিট বাংলাদেশের জন্য প্রচুর সময় দিতে পারে। এজন্য কর্মীদের কাজে নিয়োগ দেওয়ার পর তাদেরকে স্কিলড হিসেবে গড়ে তোলার পাশাপাশি প্রচুর আউটিং করতাম। এখানে সেখানে খেতে নিয়ে যেতাম, ঘুরতে যেতাম। এমনও সময় গেছে, যখন আমরা সপ্তাহে তিন থেকে চারদিন আউটিং করতাম। এর ফলে তাদের মধ্যে একটা ব্যাপক পরিবর্তন ঘটে। তারা ফ্লিট বাংলাদেশে প্রচুর সময়ও ব্যয় করতে শুরু করলো। কারণ তারা যতবেশি ফ্লিট বাংলাদেশে সময় দিতো আয়ও করতো বেশি। এজন্য আমার প্রতিষ্ঠান থেকে এমন কর্মীও পেয়েছি যারা মাসে ১২ লাখ টাকার মতো কমিশন পেয়েছে।"
খায়রুল আলম বলেন, "আমি মনে করতাম কর্মীরাই আমার প্রাণ। এজন্য তাদের সাথে বেতন নিয়ে কখনো বৈষম্য করিনি। ভালো পারফরমেন্স যারা করতো তাদের আইফোন, মোটর সাইকেল গিফটও করতাম। এছাড়া এমনিতেই বেতন বাড়িয়ে দিতাম।"
"আমি মনে করতাম, তাদের লাইফস্টাইল পরিবর্তন করতে পারলে তারা প্রচুর শ্রম দিবেন। এজন্য তাদের পিছনে প্রচুর খরচ করতাম। তার ফিডব্যাকও তারা দিতো আমাকে। এইজন্য চার বছরে আজ এই অবস্থানে এসে দাঁড়িয়েছে ফ্লিট বাংলাদেশ," যোগ করেন তিনি।
ফ্লিট বাংলাদেশের ইউএসএতে একটি ওয়্যারহাউস ও একটি সুপারশপ আছে। যা ফ্লিট ইউএসএ নামে পরিচিত। এছাড়া বনানীতে নিজস্ব অফিস রয়েছে। যার কার্যক্রম আগামী ফেব্রুয়ারি মাস থেকে শুরু হবে। সাব অফিস মিলে ৯টি অফিস রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির। কর্মী ৫৫০ জন। যার ২০ শতাংশ কর্মী স্থায়ী আর সবাই কমিশন বেইজড কাজ করেন। এছাড়া খায়রুল আলম ফ্লিট রিয়েল এস্টেট নামের একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন যার মাধ্যমে ইতিমধ্যে সাতটি বহুতল ভবনের কাজ শেষ করেছেন। তিনি তার বিশ্বস্ত কর্মীদের জন্য নগরীর খড়খড়ি বাইপাস এলাকায় ৩০ বিঘা জমিতে ফ্লিট সিটি গড়ে তুলছেন। এছাড়া ফ্লিট প্রোপার্টিজের মাধ্যমে ভবন তৈরি করেও ভাড়া দিচ্ছেন। তৈরি করেছেন 'ফ্লিট বাই' নামের একটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান। আমেরিকাতে যার একটি সুপারশপ রয়েছে। রাজশাহীতেও দ্রুত ফ্লিট বাইয়ের কার্যক্রম শুরু করবেন।
শূন্য থেকে শুরু
পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে সবার ছোট খায়রুল আলম। বাবা ছিলেন রাজশাহী পোস্টাল একাডেমির সরকারি চাকুরিজীবী। পড়তেন রাজশাহীর হামিদপুর নওদাপাড়া পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে। সেখান থেকে ২০০৫ সালে এসএসসি ও ২০০৭ সালে নিউ গভর্নমেন্ট ডিগ্রী কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় চান্স না পাওয়ায় ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটি চিটাগাংয়ের ঢাকা ক্যাম্পাসে বিবিএতে ভর্তি হন ২০০৭ সালে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির তিনমাসের মাথায় তার বাবা মারা যান। ফলে লেখাপড়ার সব খরচ তার কাঁধে এসে পড়ে। স্কুল জীবন থেকেই টিউশনি করতেন। ঢাকাতে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পরও টিউশনি শুরু করেন।
খায়রুল আলম বলেন, "বাবা অল্প বেতনের সরকারি চাকরি করতেন। ফলে ছোটবেলা থেকেই টিউশনি করে আমাকে রোজগার করতে হতো। ঢাকাতে এসেও টিউশনি করতাম। কিন্তু টিউশনির বাইরেও এমন কিছু খুঁজছিলাম যেখান থেকে বেশি আয় করা যায়। তখন ফ্রিল্যান্সিংয়ের ওপর প্রশিক্ষণ নেওয়ার চেষ্টাও করেছি। কিন্তু বেশি টাকা নেয় বলে আর প্রশিক্ষণ নেওয়া হয়নি।"
"এরপর 'কম্পিউটার বিচিত্রা' নামে ম্যাগাজিন কিনে পড়তাম। যেহেতু নিজের কম্পিউটার ছিলো না তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবে ফ্রিল্যান্সিং করার ট্রাই করতাম। কিন্তু পারতাম না। ভুল হতো। ভুল করতে করতেই ফ্রিল্যান্সিং ডট কমের সন্ধান পাই। সেখানে ফিলিপাইনের এক বায়ারের ২০০ ডলারের কাজ পাই। কাজ পাওয়াতে নিজের কাছে জমানো চার হাজার টাকা আর টিউশনির চার হাজার টাকা মোট ৮ হাজার টাকা দিয়ে একটি পুরাতন ডেস্কটপ কিনি। সেই ডেস্কটপে দুইদিনে কাজ শেষ করে ফিলিপাইন বায়ারকে জমা দিই। কিন্তু কাজ জমা দেওয়ার পর ওই বায়ার আমাকে পেমেন্ট না দিয়ে ব্লক করে দেয়। ফলে খুব হতাশ হয়ে পড়ি। এর মধ্যে আমার এক বন্ধু ওডেক্স ডট কমে ট্রাই করার কথা বলে। এখন যেটা আপওয়ার্ক ডট কম নামে পরিচিত। সেখানে ঘণ্টাপ্রতি ২৯ সেন্টের একটা ডাটা এন্ট্রির কাজ পাই। সেখান থেকেই ২০০৮ সালের নভেম্বরে প্রথম ১৪ হাজার টাকা আয় করি।
এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনবন্ধু মিলে সবার নামের আদ্যক্ষর দিয়ে 'এ কিউব সল্যুশন' নামের একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলি ২০০৯ সালে। ক্যাসপ্যারেস্কির ডাটা ক্যাটাগরিজের একটি কাজ পাই, পাঁচ বছরের চুক্তিতে। আজিমপুরে থাকি, তিন বন্ধু মিলে লাখ টাকার মতো আয় করি। সেইসময় আমার দূর সম্পর্কের এক আত্মীয় একটি কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজারকে বলার পর তিনি আমাদেরকে মিরপুরে নিয়ে যান। সেখানে আরও একজন লোক নিয়ে পাঁচজনে মিলে কাজ করতে থাকি। কিন্তু তিনি আমাদের কাজ লিকেজ করায় তার সাথে আমাদের বনিবনা হয় না। আমরা তিনবন্ধু আবার আজিমপুরে ফিরে আসি। এখানে এসে আমাদের অনেক স্ট্রাগল করতে হয়। ২০১১ সালের কথা, একদিন রাতে দেখি, আমাদের সব প্রজেক্ট শেষ। তখন আমরা এক মাস শুধু আলু আর ভাত খেয়ে থেকেছি। কারণ আমরা শুধু কন্ট্রাক্টের এই কাজই করতাম। অন্য কাজ করতাম না। এরপর বিবিএ শেষ হলে আমরা তিনবন্ধু যার যার মতো চাকরিতে জয়েন করি।"
"চাকরিতে যোগ দেবার পর ওই বন্ধুরা ফ্রিল্যান্সিংয়ের কাজ ছেড়ে দিলেও আমি লেগে ছিলাম। আগে ডাটা এন্ট্রির কাজ করলেও পরে অল্প অল্প ড্রপশিপিংয়ের কাজ শুরু করি।
"পিএইচপিতে ছয় মাস কাজ করার পর আমি নিটল মটরসে সাড়ে ৫ বছর কাজ করি। এর মধ্যে ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে বিয়ে করি। স্ত্রীকে নিয়ে ঢাকার মিরপুরে বাসা নিই। তখন খরচ অনেক বেড়ে যায়। চাপও বেড়ে যায়। আমি নিটল মটরসে সকাল ৯ থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত অফিস করতাম। এরপর বাসায় এসে রাতে ড্রপশিপিংয়ের কাজ করতাম। অনেক সময় কাজ করতে করতে আমার টেবিলেই রাত পার হয়ে যেত। মিরপুর থেকে মহাখালী অফিসে যেতে-আসতে অফিসের বাসেই ঘুমিয়ে নিতাম। তখন নিটল মটরস থেকে পঁচিশ থেকে ত্রিশ হাজার টাকা স্যালারি পেতাম আর অ্যামাজনে ড্রপশিপিং করে আয় করতাম আরও ৮ থেকে ১০ হাজার। ড্রপশিপিং হচ্ছে এমন একটি কাজ যেখানে অ্যামাজন, ওয়ালমার্টের পণ্য তৃতীয় পক্ষ হয়ে কাস্টমারদের কাছে বিক্রি করা।"
বিশ্বখ্যাত অনলাইন বিকিকিনির প্রতিষ্ঠান অ্যামাজন, ওয়ালমার্ট কিংবা ই-বেতে অনেক অনেক 'মার্চেন্ট স্টোর'। সারা বিশ্ব থেকে স্টোরগুলোর মার্চেন্টরা তাদের পণ্য এই প্ল্যাটফর্মগুলোর মাধ্যমে বিক্রি করেন। কিন্তু স্টোর ব্যবস্থাপনা, কাস্টমার সার্ভিস, উপাত্ত বিশ্লেষণের কাজ করতে গেলে স্টোরগুলো তাদের পণ্য উৎপাদন বা মূল কাজে পিছিয়ে পড়ে। এ কারণে তারা খোঁজে খায়রুলের মতো তরুণদের—যারা কিনা তাদের হয়ে গ্রাহকসেবা তথা অর্ডার গ্রহণ ও প্রক্রিয়াকরণ করা, গ্রাহকের অবস্থানভেদে লজিস্টিক বা কুরিয়ার সার্ভিস ঠিক করা, স্টোর থেকে শিপিং করার জন্য শিপিং লেবেল প্রিন্ট করে সেটি যথাযথ প্যাকেজে সেঁটে দেওয়া, তদারকি করা—এই কাজগুলো করবে। একই সঙ্গে তারা তাদের হয়ে কল সেন্টারও চালাবে। প্রতিটি স্টোরের পক্ষে একা একা এই কাজগুলো করা কঠিন ও কষ্টসাধ্য।
খায়রুল ও তার দল কাজগুলো তাদের হয়ে করে দেন। বিনিময়ে নির্ধারিত ফি ছাড়া বিক্রির ওপর কমিশনও পাওয়া যায়। এই সেবাগুলোর পোশাকি নাম হলো ভেন্ডর ও স্টোর ম্যানেজমেন্ট, ফুলফিলমেন্ট বাই অ্যামাজন, ডেটা অ্যানালিটিকস ইত্যাদি। কাজেই খায়রুলের কর্মীসংখ্যা বাড়তে থাকে। সঙ্গে সুনামও। এরই মধ্যে ফনেক্স গ্রুপ, অ্যাশলি ফার্নিচার, টমি রড্রিগেজ, টিঅ্যান্ডটি ইন্ডাস্ট্রিজ—এ রকম প্রতিষ্ঠানের সরাসরি গ্রাহকসেবার কাজও পেয়ে গেছে খায়রুলের প্রতিষ্ঠান।
প্রায় ১ হাজার ২০০ স্টোরের কাজ করছে ফ্লিট বাংলাদেশ। কাজ করতে গিয়ে নতুন একটি ক্ষেত্রও পেয়ে যান খায়রুল। লক্ষ্য করলেন, এসব স্টোরের অনেক পণ্য ডেলিভারির পর গ্রাহক ফেরত দেয়।
"তখন তাদের রিটার্ন লেবেল পাঠাই আমরা। কিন্তু দেখা গেল কোনো কোনো পণ্য উৎপাদক আর ফেরত নেয় না। তারা টাকাটা রিফান্ড করে কিন্তু আমাদের বলে তোমরা প্রোডাক্টের একটা কিছু করো।"
রিটার্ন প্রোডাক্ট ম্যানেজ করার জন্য প্রথমে একটা গোডাউন ভাড়া করলেন খায়রুল। পরে ভাবলেন, এগুলো নষ্ট করার চেয়ে একটা স্টোরই তো করে ফেলা যায়। কাজেই যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় একজন পার্টনার নিয়ে চালু করে ফেললেন ফ্লিট ডিপার্টমেন্টাল স্টোর।
খায়রুল ভাবেন, কী করে আরও বেশি লোকের কর্মসংস্থান করা যায়। সে লক্ষ্যে দেশের মধ্যে কাজ করার জন্য আরও চারটি উদ্যোগ নিয়েছেন। এগুলো হলো ফিক্স অ্যাপের মাধ্যমে সব ধরনের সেবা দেওয়া। ফ্লেক্স ডট এআই নামে প্রতিষ্ঠানটি কাজ করছে কৃত্রিম বৃদ্ধিমত্তা নিয়ে। রাজশাহীতে শুরু করেছেন ভিন্ন রকমের ই-কমার্স ফ্লিট-বাই এবং আইটি কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ফ্লিট সফট।
সাফল্যের রহস্য জানতে চাইলে এই উদ্যোক্তা বলেন, "আমার সিক্রেট বলে কিছু নেই। আমি কী কাজ করি, কীভাবে করি সবাই জানে। ফলে অনেক বেশি মানুষ কাজের সাথে যুক্ত হতে পারছে। এতে কাজের পরিধি বাড়ছে। রাজশাহীতে আমার প্রতিষ্ঠানে হাজার হাজার ছেলেমেয়ে কাজ করেছে আবার বের হয়ে গিয়ে নিজেরাই প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলছে। এখন রাজশাহীতে ফ্রিল্যান্সিংয়ের একটি বিশাল কর্মযজ্ঞ চলছে। ঘরে ঘরে ফ্রিল্যান্সার তৈরি হচ্ছে। তবে এর কিছু খারাপ প্রভাবও আছে। অনেকে স্কিলড না হয়ে কাজ করায় বাংলাদেশের সুনাম নষ্টও করছে।"
খায়রুল আলম বলেন, "ফ্রিল্যান্সিংয়ের জগত হচ্ছে সমুদ্রের মতো। আপনার কাজ হচ্ছে আপনি কীভাবে সেখান থেকে জল তুলবেন- বালতি দিয়ে নাকি চামচ দিয়ে না শ্যালো মেশিন দিয়ে, সেটা আপনার বিষয়। আমি মনে করি, কোনো কাজে সফলতার মূলমন্ত্র দুইটি। ডেডিকেশনের সাথে কাজে লেগে থাকতে হবে আর সৎ-নীতিবান হতে হবে। তাহলে অবশ্যই সফলতা আসবে।"
তবে কিছু আক্ষেপের কথাও বললেন খায়রুল আলম। বললেন ফ্রিল্যান্সিংয়ের সংকট ও সম্ভাবনার কথাও।
"ফ্রিল্যান্সারদের কোনো মর্যাদা নেই। আমরা বিদেশ থেকে এত রেমিটেন্স নিয়ে আসছি, অথচ আমাদের কোনো মর্যাদা নেই। বাংলাদেশে এখন সাড়ে ৬ লাখ ফ্রিল্যান্সার আছে। আমি ফ্রিল্যান্সার ছিলাম। কিন্তু আমি এখন প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছি। আমার অধীনে এখন ৫৫০ জন কাজ করেন। এজন্য ফ্রিল্যান্সারদের উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। সরকারিভাবে তাদের মর্যাদা দেওয়ার ব্যবস্থাও করতে হবে। যারা মাসিক বা বাৎসরিক ১০ কোটি টাকা আয় করছেন তাদেরকে সিআইপি, ভিআইপির মতো ক্যাটাগরিতে ফেলে করে কার্ড প্রদানের ব্যবস্থাও করতে পারে।"
খায়রুল আলম বলেন, "ফ্রিল্যান্সারদের ব্যাংক লোন পাওয়ারও অসুবিধা রয়েছে। আমি ভিআইপি ক্লায়েন্ট। রাজশাহীর প্রধান পাঁচটি ব্যাংকের সাথে আমার লেনদেন হয়। তারা আমার অফিসে এসেই কাজ করে। অথচ তারা আমার কাজের জন্য কোনো ব্যাংক লোন দিবে না। তারা ব্যাংক লোন দিবে তাদের ব্যাংকে আমার যে এফডিআর আছে সেইজন্য। আমি ফ্লিট বাংলাদেশের ২০ তলা অফিস গড়ে তুলতে চাই। অথচ ব্যাংক আমাকে লোন দিতে চায় না। তারা শুধু আমার এফডিআর আছে সেইজন্য লোন দিতে চায়।"
"রাজশাহীতে শিল্পকারখানা গড়ে তোলা কঠিন। কিন্তু সিলিকন সিটি গড়ে তোলা সম্ভব। উদ্যোক্তাদের জন্য ওয়ান স্টপ সল্যুশন কার্যক্রম শুরু করা উচিত। যাতে তাদের কোনো বিড়ম্বনার মধ্যে পড়তে না হয়," যোগ করেন তিনি।