চট্টগ্রামে সমন্বিত সরকারি অফিস কমপ্লেক্স, থাকছে প্রধানমন্ত্রীর জন্য আলাদা দপ্তর
দেশের প্রথম সমন্বিত সরকারি অফিস কমপ্লেক্স চূড়ান্ত নকশার কাজ শেষ হয়েছে। প্রায় ৪৪টি সরকারি অফিস নিয়ে গড়ে উঠতে যাওয়া চট্টগ্রামের এই প্রশাসনিক হাবে থাকছে প্রধানমন্ত্রীর জন্য আলাদা অফিস। পরিবেশগত সমীক্ষা শেষে এ প্রকল্পের কাজ শুরু হবে।
গত বৃহস্পতিবার এসব বিষয়ে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কে এম আলী আজম। তিনি এ দিন সকালে চট্টগ্রাম নগরের কালুরঘাট শিল্প এলাকার পাশে কর্ণফুলী নদীর তীরে জেগে ওঠা হামিদ চরে গিয়ে প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করেন।
সিনিয়র সচিব কে এম আলী আজম বলেন, "দেশের প্রথম সমন্বিত সরকারি অফিস কমপ্লেক্সের প্রকল্পের নকশার কাজ শেষ হয়েছে। এখানে প্রধানমন্ত্রীর জন্য আলাদা অফিস থাকবে। নাটোরে অবস্থিত উত্তরা গণভবনের মতো করে এটিকে গড়ে তোলা হবে। এতে প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রামে বসেই তার রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালন করতে পারবেন।"
জেলা প্রশাসক মো. মমিনুর রহমান বলেন, "গত মাসেই প্রকল্পের নকশা প্রধানমন্ত্রীর কাছে উপস্থাপনের কথা ছিল। কিন্তু সংশ্লিষ্টরা কিছু মতামত দেয়ায় এবং সে অনুযায়ী পরিবর্ধনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়ায় তা সম্ভব হয়নি। আশা করছি, চলতি মাসের শেষের দিকে আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে পরিবর্ধিত ও সংযোজিত নকশা উপস্থাপন করতে পারব। পরিবর্ধিত নকশায় প্রধানমন্ত্রীর জন্য আলাদা অফিস রাখা হয়েছে। এটি চট্টগ্রামের মানুষের জন্য গৌরবের।"
প্রকল্পের স্থপতি কাকলি বিশ্বাস দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "সমন্বিত সরকারি অফিস কমপ্লেক্সে প্রধানমন্ত্রীর জন্য একটি অফিসে স্পেস রাখার নীতিগত সিদ্ধান্তের কথা আমাদের জানিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। আমরা সে অনুযায়ী নকশা চূড়ান্ত করেছি।"
২০২১ সালের অক্টোবরে কর্ণফুলি নদীর তীর ঘেঁষে ১১০ একর জায়গার উপর দেশের প্রথম সমন্বিত সরকারি অফিস কমপ্লেক্স তৈরীর কথা প্রথম জানায় চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসন। প্রাথমিকভাবে এই কমপ্লেক্সের নাম দেওয়া হয় 'মিনি সেক্রেটারিয়েট ফর চট্টগ্রাম'। পরে এটিকে 'ইন্টিগ্রেটেড গবরমেন্ট অফিস' হিসেবে নাম চূড়ান্ত করা হয়। এটি প্রায় ৮৩টি ফুটবল মাঠের সমান জায়গা জুড়ে মালয়েশিয়ার প্রশাসনিক রাজধানী পুত্রজায়ার আদলে গড়ে তোলা হবে।
স্থপতি কাকলি বিশ্বাস জানান, মোট তিনটি নকশাকে ধাপে ধাপে সংযোজন-পরিবর্ধন শেষে বর্তমান নকশাটি চূড়ান্ত করা হয়েছে। এখানে ৪৪টি সরকারি দপ্তর ছাড়াও সরকারি কর্মচারী হাসপাতাল, সার্কিট হাউজ, সরকারি ট্রেনিং সেন্টার, ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টার, শপিং মল, মাল্টি স্টোরেড কার পার্কিং, সরকারি স্কুল-কলেজ, নার্সিং ইন্সটিটিউট, পরিবহন পুল, পেট্রোল পাম্প, স্মৃতিসৌধ, নভোথিয়েটার ও মসজিদসহ বিভিন্ন স্থাপনা থাকবে।
সিনিয়র সচিব কে এম আলী আজম বলেন, "প্রাথমিকভাবে ৭৫ একর জমি নিয়ে সমন্বিত সরকারি অফিস কমপ্লেক্স তৈরীর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পরে প্রয়োজন অনুযায়ী আরও জায়গা প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। এটি প্রধানমন্ত্রীর একটি নির্দেশনা।"
"সমন্বিত সরকারি অফিস কমপ্লেক্সে যারা সেবা নিতে আসবেন, তাদের কী কী প্রয়োজনীয়তা রয়েছে তা বিবেচনা করে আমরা এখানে সকল অবকাঠামো গড়ে তুলবো," যোগ করেন কে এম আলী আজম।
কর্ণফুলির চরে গড়ে উঠতে যাওয়া সমন্বিত সরকারি অফিস কমপ্লেক্স তৈরির লক্ষ্যে ইতোমধ্যেই ভূতাত্ত্বিক জরিপ শেষ হয়েছে। সিনিয়র সচিব জানান, পরিবেশগত জরিপ শেষে অনুমোদনের পর প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শুরু হবে।
সম্প্রতি সরকারের অনুশাসনের আলোকে চট্টগ্রামের ঐতিহ্যের ধারক কোর্ট হিল বা পরীর পাহাড় থেকে চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়সহ বিভিন্ন সরকারি অফিস এবং আদালত ভবন সরিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ নেয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। ইতোমধ্যে পরীর পাহাড়কে সংরক্ষিত পুরাকীর্তি সম্পদ হিসেবে ঘোষণা করেছে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর।
চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার কামরুল হাসান বলেন, "বর্তমানে চট্টগ্রামে সরকারি অফিসগুলো যেখানে রয়েছে, সেখানে সেবাটা স্বাচ্ছন্দে দেওয়া যাচ্ছে না। তাই সুন্দর ব্যবস্থাপনায় শহরের বাইরে এই অফিস কমপ্লেক্স তৈরি হচ্ছে। স্বাচ্ছন্দে যাতে সেবাপ্রার্থীরা সেবাটি পায় সেই জন্যই এই স্থান নির্বাচন করা হয়েছে। এখানে নদীপথসহ সহজ যোগাযোগের ব্যবস্থা রয়েছে।"
চট্টগ্রাম শহরের জিরো পয়েন্ট থেকে মাত্র সাত কিলোমিটার দূরে গড়ে উঠছে 'ইন্টিগ্রেটেড গবরমেন্ট অফিস' নামের এই প্রকল্প। কালুরঘাট সেতুর এক কিলোমিটার পশ্চিমে বঙ্গবন্ধু মেরিটাইম ইউনিভার্সিটির পাশের ৭৩ দশমিক ৪২ একর জমি ইতোমধ্যেই চিহ্নিতকরণের কাজ শেষ করেছে জেলা প্রশাসন। এর একপাশ দিয়ে বয়ে চলেছে স্রোতস্বিনী কর্ণফুলি আর অন্যপাশ দিয়ে এগিয়ে চলেছে মেরিন ড্রাইভ সড়কের নির্মাণকাজ।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোমিনুর রহমান বলেন, "প্রকল্প এলাকায় যাতায়াতের জন্য বর্তমানে দুটি রাস্তা রয়েছে। তবে আগামী ৫০ বছরের নাগরিক সুবিধাকে মাথায় রেখে ভবিষ্যতের এই সমন্বিত সরকারি অফিস কমপ্লেক্সে যেতে মেরিন ড্রাইভ ও লিংক রোডসহ মোট পাঁচ ধরনের বিকল্প যোগাযোগ ব্যবস্থা তৈরি করা হবে।