নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচন: কেন্দ্রগুলোতে বাড়ছে তরুণ ও নারী ভোটার
চলছে আলোচিত নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন (নাসিক) নির্বাচন। সকাল ৮টা থেকে নগরীর ২৭টি ওয়ার্ডের ১৯২টি ভোটকেন্দ্রে ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে; বিরতিহীনভাবে এ ভোটগ্রহণ চলবে বিকাল ৪টা পর্যন্ত।
সকাল থেকে ভোটকেন্দ্রগুলোতে বয়স্ক ও মধ্যবয়সী ভোটারদের আধিক্য দেখা গেলেও দুপুর থেকে বাড়তে শুরু করেছে তরুণ ও নারী ভোটারের সংখ্যা। নগরীর জয় গোবিন্দ হাই স্কুল কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, ধীরে ধীরে এখানে নারীদের ভিড় বাড়ছে। তাছাড়া তরুণ ভোটারদের অনেকেই এসেছেন প্রথমবারের মতো ভোট দিতে।
এদিকে নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) পদ্ধতিতে ভোট দেওয়া নিয়ে ভোটারদের মিশ্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা গেছে। একাধিক ভোট কেন্দ্রে ইভিএমে ভোট দিতে সমস্যায় পড়েছেন কয়েকজন ভোটার।
২৫ নং ওয়ার্ডের ফজলুর রহমান উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের ১ নং বুথে সকাল থেকে দুপুর ১২টা ২০ পর্যন্ত ভোট দিয়েছেন ৩৭৮ জনের মধ্যে ১০৫ জন।
কেন্দ্রের সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার হাবিবুর রহমান টিবিএসকে বলেন, "কোনো কোনো ভোটার ১০-১৫ মিনিট পর্যন্ত সময় নিচ্ছে। অনেককে বার বার বুঝানোর পরেও সঠিকভাবে ভোট দিতে পারছেন না।"
পোলিং অফিসার আব্দুল আজিজ বলেন, "আমরা প্রত্যেক ভোটারকে বুঝিয়ে দিচ্ছি এরপরেও অনেক সঠিকভাবে পারছেন না। ১ নং বুথে প্রথম ১ ঘণ্টায় মাত্র ৮ জন ভোট দিতে পেরেছিলেন।"
৭০ বছর বয়সী বৃদ্ধ শামসুল হক টিবিএসকে বলেন, "আগে দুই মিনিট লাইনে দাঁড়িয়ে ১ মিনিটের মধ্যে সিল মেরে ভোট দিয়ে এসেছি। এখন লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে প্রায় ২ ঘণ্টা। ভোট দিতেও সময় বেশি লেগেছে। আঙ্গুলের ছাপ প্রথমে না মেলায় ভ্যাসলিন দিয়ে মুছে অনেক কষ্টে মিলেছে।"
তিনি বলেন, "এভাবে মেশিনে ভোট দিলে কার ভোট কোথায় যায়, কে জানে!"
ভোট দিতে আসা জমিরন বিবি টিবিএসকে বলেন, "এমন মেশিনে ভোট দিতে গেলে হাত কাঁপে। তারপরেও আমার ভোট দিতে ১০ মিনিটের মতো লেগেছে। মেশিনে নাকি ফিঙ্গার কাজ করতেছিল না।"
দেওভোগের বাসিন্দা ৯৪ বছর বয়সী পদ্মা বালা ছেলে ভোলানাথের কোলে চড়ে এসেছেন ভোট দিতে। ভোট দিতে পেরে খুব খুশি তিনি।
তার কাছে প্রশ্ন করা হয় ইভিএমে ভোট দিতে কেমন লেগেছে; উত্তরে পদ্ম বালা বলেন, "খুবই ভালো লেগেছে। অল্প সময়ে ভোট দেয়া গেছে। আগে তো অনেক ঝামেলা করতে হত। সিল মেরে ভোট দেওয়া হতো। সিল কোনভাবে এদিক-সেদিক হয়ে গেলে ভোটটা নষ্ট হতো। আবার ব্যালট পেপারটি ভালোভাবে ভাঁজ করতে হতো, সেটা না করতে পারলেও ভোট নষ্ট হতো। কিন্তু ইভিএমে এত ঝামেলা করতে হয়নি।"
এত কষ্ট করে ভোট দিতে আসার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, "আমি আজ পর্যন্ত কখনো ভোট দেয়া থেকে বিরত থাকি নি। যেহেতু বেঁচে আছি তাই ভোটটা দিয়ে গেলাম।"
ভোট দিতে প্রায় দুই ঘণ্টা দাঁড়িয়ে ছিলেন ঝর্ণা বেগম। তিনি টিবিএসকে বলেন, "ভিতরে ভোট দিতে সময় বেশি নিচ্ছে। রোদের মধ্যে দাঁড়িয়ে আছি, তাদের কোনো তৎপরতা দেখছি না। অনেককে লাইনের মাঝ থেকে নিয়ে নাম্বার ডেকে ভোট দেওয়াচ্ছেন।"
আরেক নারী ভোটার সায়েরা বেগম দীর্ঘক্ষণ রোদের মধ্যে লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে গাছের ছায়ায় এসে বসেন। তিনি টিবিএসকে বলেন, "আগেই ভালো ছিলো। সিল মেরে চলে যেতাম। এখন এ মেশিনে নাকি ঝামেলা ভোট দিতে। এতো সময় লাগবে বুঝলে পরে আসতাম।"
সহকারী পোলিং অফিসার আশ্রাফ উদ্দিন টিবিএসকে বলেন, "নারীদের ভোট দিতে একটু সময় লাগে তাই দেরি হচ্ছে। অনেকেই আবার একজন প্রার্থীকে ভোট দিয়েই বেরিয়ে যান পরে আবার তাকে দিয়ে ভোট সম্পন্ন করতে হচ্ছে।"