ঢাকা সাবওয়ে: যানজটের দুর্ভোগ ২০৩০ সালের আগে কমছে না
যাত্রীদের কষ্ট লাঘবে প্রথম ধাপে ঢাকা সাবওয়ে চালু হবে ২০৩০ সাল নাগাদ। প্রথম ধাপে এ নেটওয়ার্কে ৬০ লাখ যাত্রী পরিবহন করা যাবে।
যাত্রীদের দুর্ভোগ লাঘবের জন্য পাতাল রেলই সবচেয়ে ভালো ব্যবস্থা কি না, সেটি অবশ্য অন্য বিতর্কের বিষয় বলে মন্তব্য করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
প্রস্তাবিত ১১টি রুটে ২৫৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের ঢাকা সাবওয়ে নেটওয়ার্কের প্রতি কিলোমিটার নির্মাণে বর্তমান মূল্যে ব্যয় হবে ৩ হাজার ৩৭৭ কোটি টাকা।
আর ঢাকা সাবওয়ের চূড়ান্ত খসড়া প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ প্রকল্পে মোট ব্যয় হবে ৮ লাখ ৭১ হাজার ২৭৩ কোটি টাকা।
তবে এই অর্থব্যয় সম্ভব বৃথা যাবে না।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, প্রথম ধাপ শেষে ৬০ লাখ এবং ২০৭০ সাল নাগাদ এ নেটওয়ার্কে ২ কোটি ৭০ লাখ যাত্রী পরিবহন করা যাবে।
প্রতিবেদনের প্রক্ষেপন অনুযায়ী, ২০৭০ সালে ঢাকার অধিবাসী হবে ৫ কোটি ৪০ লাখ। অর্থাৎ ওই সময়ে রাজধানীর প্রায় অর্ধেক বাসিন্দা নতুন নেটওয়ার্ক ব্যবহার করতে পারবে। ফলে কমে আসবে সড়কের তীব্র যানজট।
তবে এ বিনিয়োগকে শ্বেতহস্তি উল্লেখ করে যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ও বুয়েট অধ্যাপক শামসুল হক বলেন, এটি বাংলাদেশের জন্য বড় ঘটনা হলেও আর কেউই পাতাল রেল নির্মাণ করছে না।
প্রথম পর্যায়ে ১০৫ কিলোমিটারের চারটি সবওয়ের নির্মাণ কাজ ২০২২ সালে শুরুর লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে, যা শেষ হবে ২০৩০ সালে। এতে ব্যয় হবে ৩ লাখ ৫০ হাজার ৬৬ কোটি টাকা।
প্রথম পর্যায়ে বাস্তবায়ন হবে গাবতলী-মাস্তুল (রুট-বি), টঙ্গী-ঝিলমিল (রুট-ও), কেরানীগঞ্জ-কাঁচপুর (রুট-এস) এবং নারায়ণগঞ্জ-উত্তরা ১৩ (রুট-টি)।
ঢাকা সাবওয়ে প্রকল্পের আওতায় প্রাইমারি ডিজাইন ২০৩০ নেটওয়ার্ক-এ আপাতত মোট ৮৫টি ভূগর্ভস্থ স্টেশনের প্রস্তাব করা হয়েছে ।
দ্বিতীয় পর্যায়ে ২০৪০ সালের মধ্যে আরও চারটি এবং তৃতীয় পর্যায়ে ২০৫০ সালের মধ্য আরও তিনটি সাবওয়ে নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়েছে।
ইতোমধ্যে প্রথম পর্যায়ের ৯০ কিলোমিটারের নকশা প্রণয়নের কাজ শেষ হয়েছে।
স্পেনের প্রতিষ্ঠান টেকনিকা ওয়াই প্রয়েক্টোস এসএ (টিওয়াইপিএসএ)-র নেতৃত্বে জাপানের পিএডিইসিও ও বিসিএল অ্যাসোসিয়েটস যৌথভাবে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের সমীক্ষা করছে।
সম্প্রতি সেতু কর্তৃপক্ষের (বিবিএ) কাছে চূড়ান্ত খসড়া প্রতিবেদন জমা দিয়েছে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান। ২০১৮ সালে সাবওয়ে সাম্ভভ্যতা সমীক্ষা করতে এসব পরামর্শক প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ করে সেতু কর্তৃপক্ষ।
অর্থায়নের ঝুঁকি কমানোর জন্য সাবওয়ে নির্মাণে সরকারি-বেসরকারি অংশিদারিত্বে (পিপিপি) মডেল অনুসরণের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে সম্ভাব্যতা সমীক্ষায়। এর মাধ্যমে একদিকে যেমন দীর্ঘমেয়াদি আর্থিক প্রয়োজন মিটবে, অন্যদিকে বিনিয়োগের ঝুঁকি কমবে বলে মন্তব্য করা হয় প্রতিবেদনে।
বিবিএর কর্মকর্তারা বলেন, প্রথম পর্যায়ে চারটি সাবওয়ে রুট নির্মাণে প্রতি বছর গড়ে ৫ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করতে হবে। তবে ২০২৫ থেকে ২০২৭ সাল পর্যন্ত এই তিন বছরই কেবল অর্থব্যয়ের একটু চাপ থাকবে। এ সময় ৮ থেকে ১০ বিলিয়ন ডলার করে অর্থ ব্যয় করতে হবে। বাকি সময়ে খরচ কমে যাবে। প্রথম ধাপে বিনিয়োগের মাধ্যমে ২০২৯ সালে সাবওয়ে মেট্রো চালু করা সম্ভব হবে।
বিবিএর প্রধান প্রকৌশলী ও ঢাকা সাবওয়ে প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক কাজী মোহাম্মদ ফেরদৌস বলেন, চূড়ান্ত খসড়া প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর সাবওয়ে নির্মাণে অর্থ সংগ্রহের বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। জি-টু-জি পদ্ধতিতে বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার কাছে অর্থায়নের প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।
এছাড়াও পিপিপি ভিত্তিতে সাবওয়ে নির্মাণে কোরিয়া, জাপানসহ বিভিন্ন দেশের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। স্বল্প সময়ের মধ্যে বিনিয়োগ নিশ্চিত হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
যানজট লাঘব ছাড়া আরও যেসব লাভ
ঢাকা সাবওয়ের কারণে সময় বাঁচার সঙ্গে সঙ্গে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বাড়বে এবং ঢাকা একটি সুপরিকল্পিত নগরীতে পরিণত হবে বলে মন্তব্য করা হয়েছে সমীক্ষা প্রতিবেদনে।
এতে আরও বলা হয় যে, উচ্চ প্রবৃদ্ধির হারসহ ঘনবসতিপূর্ণ জনসংখ্যার পরিবর্তনশীল চাহিদা মেটাতে সক্ষম উচ্চ-ক্ষমতাসম্পন্ন পরিবহনব্যবস্থা গড়ে তোলার চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি ঢাকা। আর বর্তমান প্রবণতা অনুযায়ী, এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার সেরা হাতিয়ার হলো পাতাল রেল ব্যবস্থা।
উল্লেখযোগ্য জনসংখ্যা বৃদ্ধিকে বিবেচনায় নিয়ে ভবিষ্যত পরিস্থিতির জন্য সম্পূর্ণ নেটওয়ার্ককে পরিকল্পনার মধ্যে আনা হয়েছে, যা জনসংখ্যা বন্টন এবং যাতায়াতের ধরন বদলে দেবে।
সাবওয়ে মেট্রো রেল সিস্টেমকে ঢাকা ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট (এমআরটি) বা এলিভেটেড মেট্রোরেল এবং বাস র্যাপিড ট্র্যানজিট (বিআরটি) লাইনের সঙ্গে সমন্বয় করা হবে। এর ফলে ঢাকার যানজট প্রায় শূন্যের কোঠায় নেমে আসবে।
চূড়ান্ত খসড়া প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাবওয়ের কিছু পরিবেশগত উপকারিতাও পাওয়া যাবে। কারণ সাবওয়েতে বায়ু ও শব্দদূষণ হবে অনেক কম। এছাড়াও সাবওয়ে নগরের অধিবাসীদের স্বাস্থ্য ও জীবনমানও উন্নত করতে পারে।