এবার শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে পাল্টা আন্দোলনে শাবি শিক্ষকরা
শিক্ষকদের নিয়ে কুরুচিপূর্ণ ও অশালীন মন্তব্যের অভিযোগ এনে এবার শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। বুধবার দুপুর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটকে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন প্রায় অর্ধশতাধিক শিক্ষক।
তাদের অভিযোগ, শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নেমে শিক্ষকদের বিরুদ্ধে অশোভন ও কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করছে। তবে অশালীন মন্তব্যের অভিযোগ নাকচ করেছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। তাদের আন্দোলন ব্যাহত করতেই শিক্ষকরা মাঠে নেমেছেন বলেও অভিযোগ শিক্ষার্থীদের।
এদিকে, উদ্ভুত পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট নির্বাচন স্থগিত করেছেন উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমদ। ২ ফেব্রুয়ারি এ নির্বাচন হওয়ার কথা ছিলে।
দুপুরে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে ফটকে বিক্ষোভ কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের অধ্যাপক ড. লায়লা আশরাফুন বলেন, 'শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের খুবই অসভ্য ভাষায় গালাগাল করছে। অশালীন মন্তব্য করছে। আমরা এটা কিছুতেই মেনে নিতে পারি না।"
তিনি বলেন, 'বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতে এসেছি গালি খেতে নয়। শিক্ষার্থীদের এ ধরনের ভাষা ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে। তাদের ক্ষমা চাইতে হবে।'
আন্দোলনের স্লোগানে ও ফেসবুকে শিক্ষকদের কটাক্ষ করে মন্তব্য করা হচ্ছে অভিযোগ করে অধ্যাপক হিমাদ্রি শেখর রায় বলেন, 'শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন দাবি নিয়ে আন্দোলন করতেই পারে। প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে নিশ্চিতভাবে এসবের একটি সমাধান হবে। কিন্তু আন্দোলনের নামে শিক্ষকদের বিরুদ্ধে অশালীন ও কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য কখনও কাম্য নয়। আমরা আমাদের শিক্ষার্থী ও সন্তানদের এ রকম শিক্ষা কখনই দেইনি।'
তবে শিক্ষকদের এমন অভিযোগের ভিত্তি নেই দাবি করে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী সাব্বির আহমদ বলেন, আমাদের আন্দোলন ব্যাহত করতেই উপাচার্যের মদদে কিছু সংখ্যক শিক্ষক মাঠে নেমেছেন। তবে অপপ্রচার চালিয়ে আন্দোলন ব্যাহত করা যাবে না।
এদিকে সংঘাতময় পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমদ বুধবার সকালে বলেন, ২ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভা হওয়ার কথা ছিল। তবে উদ্ভুত পরিস্থিতির কারণে নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে।
তার পদত্যাগের দাবি প্রসঙ্গে ফরিদ উদ্দিন জানান, এ ব্যাপারে সরকার তদন্ত কমিটি করে কোনো সুপারিশ করলে সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নেবেন।
আন্দোলনের বিষয়ে তিনি বলেন, 'প্রতিদিন শিক্ষক প্রতিনিধিরা গালিগালাজ সহ্য করে আলোচনা করার প্রস্তাব করছেন, কিন্তু শিক্ষার্থীরা তা প্রত্যাখ্যান করছে। এছাড়া সমস্যা সমাধানের চূড়ান্ত সময়ে এসে কারা সাংঘর্ষিক পরিস্থিতি তৈরি করে পুলিশকে চড়াও হতে বাধ্য করেছিল, তা তদন্তে কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।'
এদিকে সপ্তম দিনের মতো বুধবার সকাল থেকে উপাচার্য ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছে শিক্ষার্থীরা। আজ থেকে তারা আমরণ অনশন শুরু করবেন বলেও জানান।
এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সিরাজুন্নেসা হলের প্রাধ্যক্ষ জাফরিন লিজার বিরুদ্ধে খাবারের খারাপ মান, অব্যবস্থাপনা ও দুর্ব্যবহারের অভিযোগ আনেন আবাসিক শিক্ষার্থীরা। তারা প্রাধ্যক্ষের পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে বিক্ষোভ শুরু করেন। শুক্রবার সন্ধ্যায় ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়ে সরে যান। দাবি পূরণ না হওয়ায় শনিবার সন্ধ্যায় ফের বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের সড়ক আটকে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ শুরু করেন।
এরপর মধ্যরাতে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দিয়ে সরে গেলেও রোববার সকাল থেকে ফের শুরু হয় তাদের বিক্ষোভ। বিকেলে তারা উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমদকে অবরুদ্ধ করলে পুলিশ তাদের লাঠিপেটা করে। শিক্ষার্থীরাও ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে। এরপর শুরু হয় ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া।
পুলিশ-শিক্ষার্থী সংঘর্ষের পর রোববার অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়। শিক্ষার্থীদের সোমবার দুপুর ১২টার মধ্যে হল ছাড়ার নির্দেশ দেয় কর্তৃপক্ষ।
জরুরি সিন্ডিকেট সভা শেষে রোববার রাতে উপাচার্য ফরিদ প্রাধ্যক্ষ জাফরিনের পদত্যাগের বিষয়টি জানান। এরপর থেকেই শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে নামেন।
এর মাঝে পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগ এনে বিশ্ববিদ্যালয়ের অজ্ঞাতপরিচয় ২০০ থেকে ৩০০ শিক্ষার্থীকে আসামি করে সোমবার রাতে সিলেটের জালালাবাদ থানায় মামলা করে পুলিশ।
মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে সংবাদ সম্মেলন করে উপাচার্যের পদত্যাগের সময় বেঁধে দেন শিক্ষার্থীরা। বুধবার দুপুর ১২টার মধ্যে এ দাবি মানা না হলে আমরণ অনশনে যাওয়ার ঘোষণা দেন।