শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছে অন্যান্য ক্যাম্পাসেও
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) উপাচার্যের বিরুদ্ধে চলমান আন্দোলন অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসেও ছড়িয়ে পড়েছে।
একের পর এক দেশের বিভিন্ন সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকরা শাবিপ্রবির শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করছেন।
বৃহস্পতিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ও কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নিজেদের ক্যাম্পাসে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সাথে সংহতি জানিয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের আয়োজন করে।
সাস্টের উপাচার্যের পদত্যাগ ও আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিএনপির ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের আয়োজন করে।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের ঘটনার পুলিশ এবং উপাচার্যের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেন ছাত্রদল সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন। তিনি বলেন, "আমরা অবিলম্বে মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানাই"।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের নিয়ে শাবিপ্রবির ভিসির 'আপত্তিকর মন্তব্যে'র নিন্দা জানিয়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি।
সম্প্রতি প্রকাশিত এক অডিও ক্লিপে শাবিপ্রবি উপাচার্যকে বলতে শোনা যায়, "জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের কেউ সহজে বিয়ে করতে চায় না"।
শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক লায়েক সাজ্জাদ এন্দেলাহ এক বিবৃতিতে বলেন, "জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের সম্পর্কে তার বক্তব্য অত্যন্ত অসম্মানজনক। আমরা তার আপত্তিকর মন্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানাই। আমরা চাই উপাচার্য তার অশালীন মন্তব্য প্রত্যাহার করে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাক।"
এর আগে বুধবার তার বক্তব্যের প্রতিবাদে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা শাবিপ্রবি উপাচার্যের কুশপুত্তলিকা দাহ করে। ক্যাম্পাসে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনেও মানববন্ধনের আয়োজন করে তারা।
শাবিপ্রবি শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের হামলার প্রতিবাদে মশাল মিছিল করেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বামপন্থী রাজনৈতিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এসময় শাহজালালের শিক্ষার্থীদের সকল দাবির প্রতি আন্দোলনকারীরা পূর্ণ সমর্থন প্রকাশ করে।
এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা একই দাবিতে ক্যাম্পাসের শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিফলকে মানববন্ধনের আয়োজন করে।
খুলনা ও কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও বৃহস্পতিবার শাবিপ্রবির আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একাত্মতা জানিয়ে নিজ নিজ ক্যাম্পাসে সমাবেশের আয়োজন করে।
গত ১৩ জানুয়ারি শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সিরাজুন্নেসা হলের প্রাধ্যক্ষ জাফরিন লিজার বিরুদ্ধে খাবারের খারাপ মান, অব্যবস্থাপনা ও দুর্ব্যবহারের অভিযোগ এনে প্রাধ্যক্ষের পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আন্দোলন শুরু করে।
কিন্তু গত রোববার আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশ টিয়ারশেল, রাবার বুলেট ও হামলায় কমপক্ষে ৩০ জন বিক্ষোভকারী গুরুতর আহত হওয়ার পরে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন দ্রুত উপাচার্য বিরোধী আন্দোলনে পরিণত হয়।
দাবি মানায় বাধ্য করতে সেদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. ওয়াজেদ মিয়া আইসিটি ভবনের ভেতর উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করে শিক্ষার্থীরা। তাকে মুক্ত করতে উপাচার্যের নির্দেশে পুলিশ এই হামলা চালায় বলে অভিযোগ ওঠে।
এর মাঝে পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগ এনে বিশ্ববিদ্যালয়ের অজ্ঞাতপরিচয় ২০০ থেকে ৩০০ শিক্ষার্থীকে আসামি করে সোমবার রাতে সিলেটের জালালাবাদ থানায় মামলা করে পুলিশ।
ঘটনার তদন্ত শুরু করার কথা জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
শাবিপ্রবির অর্থনীতি বিভাগের একজন অধ্যাপক বলেন, এর আগে কখনো ক্যাম্পাসের শান্তিপূর্ণ ছাত্র আন্দোলনে পুলিশি হামলার ঘটনা ঘটেনি। এমনকি ছাত্র বিক্ষোভের মুখে এর আগে পদত্যাগ করা শাবিপ্রবির সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক মুসলেহ উদ্দিন আহমেদও শিক্ষার্থীদের হয়রানির জন্য পুলিশ ডাকেননি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে ওই শিক্ষক বলেন, "অথচ রোববার তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ছাত্রদের মারধর করা হয়। পুলিশি হামলার পর ছাত্রদের আন্দোলন অত্যন্ত যৌক্তিক।"