শাবিপ্রবি শিক্ষার্থীদের সাথে আলোচনার প্রস্তাব শিক্ষামন্ত্রীর
সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সাথে আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।
আন্দোলনকারীদের প্রতিনিধিদের ঢাকায় এসে তার সাথে আলোচনার প্রস্তাব দেন শিক্ষামন্ত্রী। শিক্ষার্থীরা প্রথমে এই প্রস্তাবে রাজি হলেও পরে জানান, শিক্ষামন্ত্রীকে সিলেটে এসে আলোচনা করতে হবে। ভার্চুূয়ালিও আলোচনায়ও সম্মতি জানিয়েছেন তারা।
শুক্রবার বিকেলে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনকারীদের সাথে ফোনে কথা বলেন। ফোনের লাউড স্পিকারে তাদের সাথে আলাপকালে গণমাধ্যমকর্মীরাও উপস্থিত ছিলেন।
আলাপকালে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি শিক্ষার্থীদের বলেন, আমরা চাই আমাদের সন্তানেরা ভালো থাকবে। তাদের যেন কষ্ট না হয়। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসও ঠিক থাকবে।
তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্ত্বশাসনের ব্যাপার আছে। আমরা তাতে দ্রুত হস্তক্ষেপ করতে চাই না। তবে শিক্ষার্থীরা কষ্ট পাবেন, এটাও চাই না।
মন্ত্রী বলেন, সব সমস্যারই একটা সমাধান আছে। এই সমস্যারও নিশ্চয়ই সমাধান আছে। তবে আলোচনার মাধ্যমেই সেই সমাধান খুঁজে বের করতে হবে।
তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের ৪/৫ জনের দল যদি আসেন, শিক্ষক সমিতির নেতারা যদি আসেন, তবে আমরা আলাপ করে একটা সমাধানে পৌঁছাতে পারবো।
মন্ত্রী আরও বলেন, আপনারা নিজেদের মধ্যে কথা বলে আসবেন, পরে নিজেদের মধ্যে যেন ঝামেলা না হয়।
শিক্ষামন্ত্রীর সাথে আলাপকালে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের পক্ষে সাদিয়া আফরিন বলেন, আমরা শিক্ষামন্ত্রীর সাথে আলোচনায় আগ্রহী। সন্ধ্যার আগেই আমাদের ৫ জন প্রতিনিধি ঢাকায় শিক্ষামন্ত্রীর কাছে যাবেন। আমরা আলোচনা করে কিছুক্ষণের মধ্যে ৫ জন প্রতিনিধি ঠিক করবো। আশা করছি, মন্ত্রী আমাদের দাবি মেনে নেবেন।
তিনি বলেন, শিক্ষামন্ত্রীর সাথে আলোচনায় গেলেও আমাদের অনশন যথারীতি চলবে।
তবে সন্ধ্যায় মত পাল্টে সাদিয়া বলেন, আন্দোলনকারীদের এভাবে ফেলে আমরা ঢাকায় যেতে পারবো না। আমরা শিক্ষামন্ত্রীর সাথে আলোচনায় আগ্রহী। তবে আলোচনা করতে হলে তাকে সিলেটে আসতে হবে। অথবা ভার্চুয়ালি আলোচনা হতে পারে।
এর আগে শুক্রবার বেলা দেড়টার দিকে শিক্ষামন্ত্রীর আলোচনার প্রস্তাব নিয়ে ক্যাম্পাসে যান আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আশফাক, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেনসহ কয়েকজন নেতা।। তারা শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলেন।
শিক্ষার্থীদের সাথে আলোচনার পরই আওয়ামী লীগ নেতারা উপাচার্য ফরিদ উদ্দিনের বাসভবনে তার সাথে আলাপের জন্য যান।
এসময় শফিউল আলেম নাদেল সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে বলেন, এভাবে অচলাবস্থা দীর্ঘদিন চলতে পারে না। আমাদের সন্তানদের এই কষ্ট আমরা মেনে নিতে পারছি না।
তিনি বলেন, শিক্ষামন্ত্রীর বার্তা নিয়ে এখানে এসেছি। দুই পক্ষের সাথে আলোচনা করে একটি সমাধানের পথ বের করার চেষ্টা করবো।
উপাচার্যও আন্দোলনকারীদের সাথে দেখা করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন বলে জানান নাদেল।
আওয়ামী লীগ নেতারা উপাচার্যের বাসভবনে আলাপ করে ফিরে আসার পর বিকেল ৩টায় শফিউল আলম চৌধুরীর মুঠোফোনে শিক্ষামন্ত্রীর সাথে কথা বলেন আন্দোলনকারীরা।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী মোহাইমিনুল বাশার বলেন, আমাদের একটাই দাবি, উপাচার্যের পদত্যাগ। এই দাবি আদায় না হলে আমরা আন্দোলন থেকে সরছি না। প্রয়োজনে আমরা জীবন দেব।
এদিকে অনশনকারীদের মধ্যে অসুস্থের সংখ্যা বাড়ছে। শুক্রবার অনশনকারী ১২ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। উপাচার্য ভবনের সামনে অনশনে থাকা বাকি সবার হাতেও স্যালাইন চলছে। আর হাসপাতালে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীরাও সেখানে অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন। ডায়াবেটিকস থাকায় তাদের একজনের অবস্থা ঝুঁকিপূর্ণ বলে জানা গেছে।
অনশনকারী শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম অপূর্ব বলেন, মৃত্যু অথবা দাবি আদায়- এ দুটি ছাড়া অনশন ভাঙব না।
উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে গত বুধবার থেকে আমরণ অনশন শুরু করেছেন সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৪ শিক্ষার্থী। বাবা হার্ট অ্যাটাক করায় একজন বাড়ি চলে গেছেন। এখন উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অনশনে আছেন ১১ জন। তাদেরও শারীরিক অবস্থার অবনতি হচ্ছে।
অনশনরত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসাসেবা দিচ্ছে ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ ছাত্রলীগের একটি দল। এই দলের সদস্য নাজমুল ইসলাম বলেন, শীতেই বেশি কাতর হয়েছেন অনশনকারীরা। তাদের অনেকের শ্বাসকষ্ট দেখা দিয়েছে। জ্বরও আসছে। দেখা দিয়েছে পানিশূন্যতা।
নগরের রাগীব রাবেয়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অনশনকারী শিক্ষার্থী কাজল দাস বলেন, আমি বৃহস্পতিবার দুপুরে এখানে ভর্তি হয়েছি। তবে এখনও অনশন ভাঙিনি। এই ভিসি পদত্যাগ করার আগ পর্যন্ত অনশন চালিয়ে যাব।