শাবিপ্রবি সংকট: আলোচনায় সমাধান মিলছে না, দাবিতে অনড় শিক্ষার্থীরা
সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) আন্দোলরত শিক্ষার্থীদের সাথে শিক্ষামন্ত্রীর বৈঠকেও অচলাবস্থা কাটেনি। শনিবার মধ্যরাতে শিক্ষার্থীদের সাথে ভার্চুয়াল বৈঠকে অংশ নেন শিক্ষামন্ত্রী। এতে কোন সুরাহা না হওয়ায় রোববার (২৩ জানুয়ারি) দুপুরে ফের বৈঠক হওয়ার কথা থাকলেও- তা হয়নি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, শিক্ষামন্ত্রী অন্য সকল দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিলেও উপাচার্যের পদত্যাগের বিষয়ে কিছু বলেননি। পরবর্তী আলোচনার আগে শিক্ষার্থীদের অনশন থেকে সরে আসারও আহ্বান জানান তিনি।
অন্যদিকে শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, দাবিপূরণ না হওয়া পর্যন্ত তারা অনশন ভাঙবেন না। উপাচার্যের পদত্যাগের দাবি থেকেও সরে আসবেন না।
উপাচার্যের পদত্যাগ ইস্যুতে দুই পক্ষের এই বিপরীতমুখী অবস্থানের কারণে অনেকটাই ভেস্তে যেতে বসেছে আলোচনার উদ্যোগ। এতে শাবিপ্রবি সঙ্কট আরও ঘণীভূত হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
অনশনকারী শিক্ষার্থীদের সাথে রোববার নতুন করে যোগ দিয়েছেন আরও ৫ জন। ফলে অনশনকারীদের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৮-এ। এদের মধ্যে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে আছেন ১৬ জন।
শনিবার শিক্ষামন্ত্রীর প্রতিনিধি হিসেবে শাবিপ্রবি ক্যাম্পাসে এসেছিলেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল। রাত সাড়ে ১২টা থেকে ২টা পর্যন্ত শিক্ষার্থী-শিক্ষামন্ত্রীর বৈঠক সমন্বয় করেন তিনি।
রোববার বিকেলে শফিউল আলম নাদেল বলেন, 'শিক্ষামন্ত্রীর সাথে কিছুক্ষণ আগেও আমার আলাপ হয়েছে। তিনি শিক্ষার্থীদের অনশন ভেঙ্গে আলোচনায় আসার অনুরোধ জানিয়েছেন। অনশনরত শিক্ষার্থীদের কষ্ট তিনি মেনে নিতে পারছেন না।'
নাদেল বলেন, শিক্ষামন্ত্রী সব সময় আলোচনায় বসতে প্রস্তুত। তিনি শিক্ষার্থীদের জন্য আলোচনা করতে উদগ্রীব হয়ে আছেন। কিন্তু আলোচনা যৌক্তিকভাবে করতে হবে। শিক্ষার্থীরা যদি নিজ দাবিতে অনড় থাকেন তাহলে আলোচনা কতটুকু ফলপ্রসু হবে- সেই প্রশ্ন থেকে যায়।
'শনিবারের আলোচনায় মন্ত্রী শিক্ষার্থীদের একটি ছাড়া বাকিসব দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। বাকি দাবি লিখিত আকারে দিতে বলেছেন। তাদের আইনগত ও একাডেমিক সমস্যা যাতে না হয়- তা দেখবেন বলেছেন। এই অবস্থায় শিক্ষার্থীদেরও কিছুটা এগিয়ে আসা উচিত।'
এখনও শিক্ষার্থীদের সাথে যোগাযোগ রেখে চলছেন জানিয়ে নাদেল বলেন, আমি আজকে দুপুরেও আন্দোলনকারীদের সাথে কথা বলেছি। তাদের শিক্ষামন্ত্রীর অনুরোধের কথা জানিয়েছি। আশা করছি তারা মন্ত্রীর অনুরোধ রাখবেন।
আলোচনায় দুই পক্ষকেই ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে আসতে হবে বলে মন্তব্য করেন নাদেল।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ইয়াছির সরকার বলেন, 'আজ দুপুরে শিক্ষামন্ত্রীর প্রতিনিধির সঙ্গে আমাদের সর্বশেষ আলাপ হয়েছে। তিনি আমাদের সম্ভব হলে অনশন ভেঙে আলোচনায় আসার আহ্বান জানিয়েছেন। তবে আমরা তাকে বলেছি, এতগুলো মানুষের জীবনের চাইতে একজনের পদ রক্ষা করা কি বেশি জরুরি! তিনি এ প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেননি। এরপর তাদের সঙ্গে আমাদের আর কোনো আলাপও হয়নি।'
ইয়াসির বলেন, আমরা এখনো শিক্ষামন্ত্রীর সাথে আলোচনায় আগ্রহী। তবে দাবি পুরণ না হওয়া পর্যন্ত আমরা অনশন ভাঙব না।
আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, শিক্ষার্থীরা তাদের অবস্থান থেকে কিছুটা সরে না এলে; পুনরায় আলোচনা না-ও হতে পারে।
শনিবারের আলোচনা প্রসঙ্গে শাবিপ্রবির আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলেন, মন্ত্রীকে আমাদের আন্দোলনের শুরু থেকে যা যা হয়েছে, সব জানিয়েছি। তিনি আমাদের সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন।
উপাচার্যকে পূর্ণ অবরুদ্ধের হুঁশিয়ারি:
অনশনের পরও উপাচার্য পদত্যাগ না করলে তাকে পূর্ণ অবরুদ্ধ করে রাখা হবে বলে জানিয়েছেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।
রোববার সন্ধ্যায় আন্দোলনকারীদের পক্ষে সংবাদ সম্মেলন করে এমনটি জানান শিক্ষার্থী মোহাইমিনুল বাশার রাজ।
এরআগে শিক্ষার্থীরা তাদের ঘোষণা মঞ্চ থেকে ঘোষণা দেন, আজকের পর থেকে উপাচার্যের বাসভবনে পুলিশ ছাড়া আর কেউ প্রবেশ করতে পারবেন না।
পরে সংবাদ সম্মেলনে এসে শিক্ষার্থীদের পক্ষে ইয়াসির সরকার বলেন, 'শিক্ষার্থীরা প্রায় ১০০ ঘন্টা ধরে অনশন করছেন। অথচ এখন পর্যন্ত উপাচার্যের পদত্যাগের কোন লক্ষণ নেই। এ অবস্থা চলতে থাকলে আমরা উপাচার্যকে পূর্ণ অবরুদ্ধ করতে বাধ্য হব। তখন তার বাসার জরুরি পরিষেবাও বন্ধ করে দেবো আমরা। আর আজ থেকে পুলিশ ছাড়া আর কেউ তার বাসায় প্রবেশ করতে পারবেন না।'
শিক্ষার্থীরা গত ১৭ জানুয়ারি থেকে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে তার পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলন করছেন। গত বুধবার থেকে একইস্থানে অনশন শুরু করেন ২৩ শিক্ষার্থী। রোববার থেকে তাদের সাথে যুক্ত হয়েছেন আরও ৫ জন।
বাসবভনের সামনে অবস্থানের কারণে গত ১৭ জানুয়ারি থেকেই কার্যত অবরুদ্ধ অবস্থায় আছেন উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদ। তবে তার বাসায় প্রতিদিনই শিক্ষক, কর্মকর্তা, পুলিশ ও সাংবাদিকরা যাওয়া আসা করছেন। চালু রয়েছে তার বাসার সকল জরুরি পরিষেবাও।
তবে আজকের পর থেকে পুলিশ ছাড়া আর কাউকেই উপাচার্যের বাসায় প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। উপাচার্যের বাসার সামনে মানবপ্রাচীর গড়ে তোলা হবে বলেও জানিয়েছেন তারা।
আন্দোলনে সংহতি জানাতে ঢাবি থেকে শাবিতে:
উপাচার্যবিরোধী চলমান আন্দোলনে সংহতি জানাতে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছেন ঢাকা বিশ্ববিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী।
রোববার দুপুরে শাবি ক্যাম্পাসে এসে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সাথে সংহতি জানান ব্যাংক ও ইন্সুরেন্স বিভাগের শিক্ষার্থী মাহফুজুর রহমান এবং গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী নাঈম হাসান।
'বর্বর ভিসির অপসার চাই। সংহতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়'- এমন লেখা সম্বলিত প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে তারা উপাচার্য ভবনের সামনে অনশনরত শিক্ষার্থীদের পাশে অবস্থান করেন।
এসময় নাঈম হাসান বলেন, শিক্ষার্থীদের ওপর ক্যাম্পাসের ভেতরে পুলিশ দিয়ে যে হামলা চালানো হয়েছে তা অত্যন্ত জঘন্য অপরাধ। ওই ঘটনার পর থেকেই শাবির শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলন করছেন। এই দাবিতে অনশনও করছেন তারা।
'আমরা শিক্ষার্থীদের দাবি সাথে পূর্ণ সহমত। এই অযোগ্য উপাচার্যের পদত্যাগের দাবি জানাচ্ছি। শাবির শিক্ষার্থীদের সাথে সংহতি জানাতেই আমরা এখানে এসেছি'- বলছিলেন নাঈম।
রাতেই তারা ঢাকায় ফিরে যাবেন জানিয়ে মাহফুজুর রহমান, আজকের মধ্যে দাবি পুরণ না হলে; কাল আমরা ঢাবির রাজু ভাস্কর্যের সামনে আন্দোলন করবো।