উপাচার্যবিরোধী আন্দোলন: শাবিতে 'আলোকচিত্রে একদফা'
উপাচার্যবিরোধী আন্দোলনের অংশ হিসেবে সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে 'আলোকচিত্রে একদফা' শিরোনামে একটি আলোকচিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে।
সোমবার বিকেলে এ প্রদর্শনীর আয়োজন করেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা, যা চলবে মঙ্গলবার পর্যন্ত। বিশ্ববিদ্যালয়ের গোল চত্বরে আয়োজিত এ প্রদর্শনীতে আন্দোলনের উত্তাল দিনগুলোর প্রায় দেড়শ ছবি ঠাঁই পেয়েছে।
'আলোকচিত্রে একদফা' শিরোনামের এই প্রদর্শনীতে ১৩ থেকে ২৬ জানুয়ারি পর্যন্ত ১৪ দিনের উত্তাল ক্যাম্পাসের সব স্থিরচিত্র জায়গা করে নিয়েছে।
উপাচার্যের বাসার সামনে অনশনরত শিক্ষার্থীদের অসুস্থ অবস্থায় শুয়ে থাকা, পুলিশকে ফুল উপহার দেওয়া, শীতের রাতে জবুথবু হয়ে সড়কে হাজারও শিক্ষার্থীর বসে থাকা, উপাচার্যের পদত্যাগ দাবি করে সড়ক ও দেয়ালজুড়ে লিখে রাখা স্লোগান- এমন নানা ছবি ঠাঁই পেয়েছে প্রদর্শনীতে।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী শাহরিয়ার আবেদিন বলেন, উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে আমরা ১৫ দিন ধরে আন্দোলন চালিয়ে আসছি। এরই ধারাবাহিকতায় আমাদের আজকের কর্মসূচী 'আলোকচিত্রে একদফা' শীর্ষক প্রদর্শনী।
আন্দোলনের উত্তাল সময়ের দেড় শতাধিক ছবি এখানে প্রদর্শন করা হচ্ছে জানিয়ে শাহরিয়ার বলেন, শিক্ষার্থীদের তোলা আন্দোলনের নানা মুহূর্তের ছবি একসাথে করে আমরা এখানে প্রদর্শন করছি। এইভাবে ধারাবাহিক অহিংস কর্মসূচির মাধ্যমে আমরা উপাচার্যবিরোধী আন্দোলন চালিয়ে যাব।
এদিকে, ক্যাম্পাসের চেতনা '৭১ এর পাশে গিয়ে দেখা যায়, বাঁশ ও টিন দিয়ে টং দোকান নির্মাণ করেছে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের কয়েকজন। টংয়ের সামনেই চটের মাঝে লেখা, 'চাষাভুষার টং'।
শিক্ষার্থীরা জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় সমাবর্তনের সময় কিছু টং দোকান এবং করোনার ছুটির সময় বাকি সব টং দোকান বন্ধ করে দিয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এই দোকানগুলোতে শিক্ষার্থীরা স্বল্পমূল্যে খাবার খেতেন এবং আড্ডা দিতেন। শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন সময় বন্ধ টংয়ের দোকান পুনরায় খোলার দাবি জানালেও প্রশাসন অনুমতি দেয়নি।
গত ২৫ জানুয়ারি ভলিবল মাঠের পাশে অস্থায়ীভাবে 'চাষাভুষার টং' নামে একটি টং দোকান চালু করেন শিক্ষার্থীরা। কোনো স্থাপনা ছাড়াই খোলা আকাশের নিচে চলছিল ওই টংয়ের কার্যক্রম। এবার টং দোকানগুলোকে স্থায়ী রূপ দিচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। নির্মাণ করা হচ্ছে ৫টি স্থাপনা।
প্রসঙ্গত, গত ১৯ জানুয়ারি আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা নারী শিক্ষকদের নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেছে এমন অভিযোগ এনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটকে দাঁড়িয়ে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ জানান কিছু শিক্ষক। এ সময় অধ্যাপক ড. লায়লা আশরাফুন বলেন, "আমরা সাধারণ শিক্ষক। সম্মানের জন্যই শিক্ষকতা পেশায় এসেছি। আমরা বুদ্ধিজীবী শ্রেণি ধারণ করি, আমরা কোনো চাষাভুষা না যে আমাদের যা খুশি তাই বলবে।"
তার ওই মন্তব্যে দেশের কৃষিজীবী শ্রেণিকে ছোট করা হয়েছে বলে দাবি করেন শিক্ষার্থীরা। এ মন্তব্যের প্রতিবাদেই টং দোকানগুলোর নাম 'চাষাভুষার টং' দেওয়া হয়েছে বলে জানান আন্দোলনকারীরা।
গত ১৩ জানুয়ারি থেকে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রভোস্ট কমিটির পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা।
এরপর ১৬ জানুয়ারি বিকেলে তিন দফা দাবি আদায়ে উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইআইসিটি ভবনে অবরুদ্ধ করেন শিক্ষার্থীরা। পরবর্তীতে পুলিশ উপাচার্যকে উদ্ধার করতে গেলে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সেদিন থেকেই উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনে নামেন তারা। এই দাবিতে ১৯ জানুয়ারি থেকে আমরণ অনশন শুরু করেন কয়েকজন শিক্ষার্থী। তাদের টানা ১৬৩ ঘণ্টার অনশন গত বুধবার ভাঙান এই বিশ্ববিদ্যালয়েরই অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও অধ্যাপক ইয়াসমিন হক।