করোনা-ভীতি বাড়তে থাকায় ব্যবসায়িক ক্ষতি বেসরকারি হাসপাতালের
- ২০২০ সালের মার্চে মহামারি শুরুর পর থেকে সাধারণ রোগীদের হাসপাতালে ভর্তির পরিমাণ কমেছে
- যে রোগীদের তাদের ডাক্তার এবং হাসপাতালের সাথে যোগাযোগ রাখতে হয়, তারা এখন বাড়ির বাইরে সংক্রমণের ঝুঁকি থাকায় আরও জটিলতার আশঙ্কা করছেন
- বর্তমানে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ২ লাখেরও বেশি সক্রিয় রোগী রয়েছে এবং তাদের মধ্যে ৮২ শতাংশ বাড়িতে চিকিৎসা নিচ্ছেন
- যারা হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন তাদের মধ্যে বিপুল সংখ্যক সরকারি সুযোগ-সুবিধা নিচ্ছেন
- সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত করোনা সংক্রমণের হার নিয়ন্ত্রণে থাকায় ব্যবসায়িক পতনের সম্মুখীন হয় প্রাইভেট হসপিটালগুলো। এসময় অন্যান্য রোগীও ভাইরাসে আক্রান্তের ভয়ে হাসপাতালে যাওয়া এড়িয়ে চলছিল।
মহামারিতে সাধারণ রোগী ভর্তির হার কমে গেলেও করোনা রোগীদের চিকিৎসা দিয়ে ২০২১ এর আগস্ট পর্যন্ত ভাল ব্যবসা করেছে প্রাইভেট হাসপাতালগুলো।
তবে সেপ্টেম্বর থেকে করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে এলেও সাধারণ রোগীদের করোনা ভীতি কাটেনি। তাই তারা হাসপাতালে যাচ্ছে না। এতে বেসরকারি হাসপাতালগুলো ব্যবসা হারাচ্ছে।
এদিকে ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের কারণে সংক্রমণ বাড়ায় কোভিড ওয়ার্ডের সক্ষমতা বাড়ানোর প্রস্তুতি নিয়েছিলো হাসপাতালগুলো। কিন্তু এই ভেরিয়েন্টের প্রভাব তুলনামূলক কম হওয়ায় অধিকাংশ রোগী বাড়িতে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে করোনাভাইরাসের অ্যাক্টিভ রোগী রয়েছে দুই লাখের বেশি। এর মধ্যে ৮২ শতাংশ রোগী বাড়িতে চিকিৎসা নিচ্ছে। যারা হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে তাদের একটি বড় অংশই সরকারি হাসপাতালে রয়েছে।
ল্যাব এইড গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. এ এম শামীম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পিরিয়ডে আমাদের হসপিটালে কোভিড রোগী শনাক্তের হার ২ শতাংশে নেমে গিয়েছিল। যেটা সেপ্টেম্বরের আগেও ৪০ শতাংশ ছিল।"
"আবার কোভিড সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর সাধারণ রোগীর যে হাসপাতাল ভীতি ছিল সেটা এখনও রয়েছে। তাই খুব সিরিয়াস না হলে রোগীরা হাসাপাতালে চিকিৎসা নিতে আসছে না," বলেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, এখন কোভিড রোগীর উপসর্গগুলোও খুব বেশি সিরিয়াস না। তাই বেশিরভাগেই হাসপাতালে আসে না। শুধুমাত্র কিছু সামর্থবান মানুষ কোভিড উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে আসে।
প্রাইভেট হসপিটালগুলোর মধ্যে একমাত্র শমরিতা হাসপাতাল শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত। এছাড়া তালিকাভুক্ত স্কয়্যার ফার্মার সহযোগী এসোসিয়েট কোম্পানি হিসেবে স্কয়্যার হসপিটালের আর্থিক হিসাব জানা যায়।
এই হাসপাতালগুলোর আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২০১৯-২০ বছরের মে মাস পর্যন্ত প্রাইভেট হসপিটালগুলোর ব্যবসায় ব্যাপক ধস নামে।
হসপিটালগুলোর পরিচালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, করোনা মহামারির কারণে রোগী ভর্তির সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে কমে যায়। তবে, মে মাসে সরকার বেসরকারি হাসপাতালগুলোকে করোনার চিকিৎসা করার অনুমতি দিলে তাদের ব্যবসা ফিরে আসে।
২০২০ সালের ২৪ মে কোভিড -১৯ রোগীদের চিকিৎসার জন্য ৫০ বা তার বেশি শয্যা বিশিষ্ট সব সরকারি এবং বেসরকারি হাসপাতালকে নির্দেশ দেয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
ফলে ২০২০-২১ হিসাব বছরে শমরিতা হাসপাতালের মুনাফা ১২ গুণ এবং স্কয়্যার হসপিটালের মুনাফা ২১৭ শতাংশ বাড়ে। এই বৃদ্ধির ধারা ২০২১-২২ হিসাব বছরের প্রথম প্রান্তিক পর্যন্ত ছিল।
হসপিটালগুলো জানায়, কোভিডের চিকিৎসা সাধারণ রোগের তুলনায় ব্যয়বহুল। কারণ, কোভিডের চিকিৎসায় বিভিন্ন স্বাস্থ্যবিধি মানতে গিয়ে বাড়তি খরচ হয়। আর এই খরচ রোগীকেই বহন করতে হয়।
এদিকে সরকারের দ্বিতীয় দফা লকডাউন এবং ভ্যাকসিনেশনের ফলে গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে করোনা সংক্রমণের হার নিয়ন্ত্রণে ছিল। তাই ডিসেম্বর পর্যন্ত বেসরকারি হাসাপাতালগুলো রোগীও কম পেয়েছে।
এতে অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত তিন মাসে শমরিতা হাসপাতালের মুনাফা এর আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৮২ শতাংশ কমেছে। পাশাপাশি স্কয়্যার হসপিটালের আয়ও কমেছে।
এর জের ধরে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে শমরিতা হসপিটালের শেয়ার দর গত পাঁচদিনে ২২ শতাংশ কমে সর্বশেষ ৯৬.৮০ টাকায় লেনদেন হয়েছে।
শমরিতা হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ডা. এবিএম হারুন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "হাসপাতালে করোনা রোগী ভর্তির সংখ্যা কমেছে। আবার করোনা সংক্রমণের ভয়ে রেগুলার রোগীও কম আসছে। তাই ব্যবসা কমেছে।
এদিকে বাংলাদেশ প্রাইভেট ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিসিডিওএ) সভাপতি ডা. মনিরুজ্জামান ভূঁইয়া টিবিএসকে বলেন, "করোনার সেকেন্ড ওয়েভের পর সেপ্টেম্বর মাস থেকে হাসপাতালগুলোতে কোভিড রোগী ভর্তি কমতে থাকে। একেবারে সিভিয়ার বা ইমার্জেন্সি না হলে নন কোভিড রোগীও হাসপাতালে কম ভর্তি হয়েছে।"
"এখন ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের কারণে সংক্রমণ বাড়লেও সিভিয়ারিটি কম হওয়ায় হাসপাতালে কোভিড রোগী ভর্তির হার কম। আর সংক্রমণ বাড়ায় অন্য রোগীও এখন হাসপাতালে কম আসছে। এছাড়া ডিসেম্বর থেকে মার্চ মাস হাসপাতাল ব্যবসায় ডাল সিজন," বলেন তিনি।
দেশে বর্তমানে মোট নিবন্ধিত বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকের সংখ্যা ৫ হাজার ৩২১। বিপিসিডিওএ অনুসারে, অনিবন্ধিতসহ এই সংখ্যা ১৫ হাজারেরও বেশি।