শুক্রবার শাবি যাচ্ছেন শিক্ষামন্ত্রী, উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিপূরণ হওয়ার আশা শিক্ষার্থীদের
উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সাথে আলোচনা করতে শুক্রবার (১১ ফেব্রুয়ারি) সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে যাচ্ছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। শুক্রবার সকালে তিনি ক্যাম্পাসে আসতে পারেন বলে জানা গেছে।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের মুখপাত্র মোহাইমিনুল বাশার রাজ বলেন, 'কাল শিক্ষামন্ত্রী আমাদের ক্যাম্পাসে আসবেন। জাফর ইকবাল স্যারের মাধ্যমে আমরা এ তথ্য জেনেছি। এছাড়া প্রশাসনের পক্ষ থেকেও মন্ত্রীর আসার কথা জানানো হয়েছে। শুনেছি তিনি সকালের দিকে আসবেন। তবে ঠিক কখন আসবেন তা এখনও জানি না।'
তিনি বলেন, আমরা সংবাদ সম্মেলন করে আলোচনার জন্য শিক্ষামন্ত্রীকে শাবিতে আসার আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম। আমরাও তার অপেক্ষায় আছি। তিনি এলে উপচার্যের পদত্যাগসহ আমাদের দাবিগুলো পূরণ হবে বলে আশা করছি।
এদিকে, শিক্ষামন্ত্রীর সাথে আলোচনার প্রস্তুতি হিসেবে রাতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বৈঠকে বসবেন বলে জানা গেছে।
এব্যাপারে সিলেটের জেলা প্রশাসক মো মুজিবুর রহমান বলেন, 'শিক্ষামন্ত্রী কাল আসতে পারেন বলে শুনেছি। উনার সহকারী ফোনে জানিয়েছেন- কাল তারা সিলেট আসার পরিকল্পনা করছেন। সকালে এসে তিনি বিকেলে চলে যাবেন বলে শুনেছি। তবে এখনও চূড়ান্ত শিডিউল পাইনি।'
উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমদের পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলন করছেন শাবি শিক্ষার্থীরা। এই দাবিতে তারা অনশনে নামার পর গত ২৬ জানুয়ারি তাদের অনশন ভাঙান অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল।
সরকারের উচ্চমহল থেকে শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নেওয়া হবে এমন আশ্বাস দেওয়া হয়েছে বলে সেদিন অনশনকারীদের জানিয়েছিলেন জাফর ইকবাল।
ওইদিন বিকেলেই শিক্ষার্থীদের সাথে ভাচুর্য়াল বৈঠকে তাদের দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাসও দিয়েছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।
সেই আশ্বাসের ১৫দিন পেরিয়ে গেলেও- এখনও পুরণ হয়নি শিক্ষার্থীদের প্রধান দাবি। এখনও স্বপদে বহাল আছেন শাবি উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদ। নিজ কার্যালয়ে না গেলেও বাসা থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের দাপ্তরিক কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
এদিকে, আশ্বাস পেয়ে অনশন ভাঙলেও দাবি পুরণ না হওয়ায় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে। উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে প্রায় প্রতিদিনই ক্যাম্পাসে নানা কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার দাবি আদায়ে ক্যাম্পাসে আলোক প্রজ্জ্বলন করেন তারা। বুধবার বিকেলে তারা 'দাবি আদায়ের মিছিল' করেন।
শাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সূত্রপাত হয় গত ১৩ জানুয়ারি। ওই দিন রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রাধ্যক্ষ জাফরিন আহমেদে লিজার বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ এনে তার পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে আন্দোলনে নামেন হলের ছাত্রীরা। আন্দোলন চলাকালে গত ১৬ জানুয়ারি উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করে রাখেন তারা। ওই দিন সন্ধ্যায় শিক্ষার্থীদের ওপর লাঠিচার্জ করে পুলিশ। লাঠিচার্জের পর দুই পক্ষে সংঘর্ষ বেধে যায়।
এরপর রাবার বুলেট এবং সাউন্ড গ্রেনেড ছুঁড়ে শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করে উপাচার্যকে মুক্ত করে বাসায় নিয়ে আসে পুলিশ। ওই রাতে জরুরি সিন্ডিকেট সভা ডেকে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা ও শিক্ষার্থীদের পরদিন দুপুরের মধ্যে হল ছাড়ার নির্দেশ দেন উপাচার্য। নির্দেশনা উপেক্ষা করে ওই রাত থেকেই শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন।
পরদিন থেকে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে টানা অবস্থান নেন তারা। সেখানে অনশন শুরু করেন ২৮ শিক্ষার্থী। ২০ জানুয়ারি উপাচার্য ভবনের ফটকে ব্যারিকেড দিয়ে বাইরের কারও প্রবেশ বন্ধ করে দেন আন্দোলনকারীরা। গত ২৬ জানুয়ারি সকালে শাবির অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও তার স্ত্রী অধ্যাপক ইয়াসমিন হকের আশ্বাসে শিক্ষার্থীরা অনশন ভেঙে উপাচার্যের বাসভবনের ফটকের ব্যারিকেড তুলে নেন।
অনশন ভাঙানোর পর অধ্যাপক জাফর ইকবাল সাংবাদিকদের বলেন, এখানে আসার আগে আমার সঙ্গে সরকারের অনেক উচ্চমহল থেকে কথা বলেছে। তারা আমাকে শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। তাদের আশ্বাস পেয়েই আমি এখানে এসেছি। আমি তাদের অনুরোধ করব, তারা আমাকে যে কথা দিয়েছেন সে কথাগুলো যেন রক্ষা করেন। আমি আর এই ছাত্রদের ভেতর কোনো পার্থক্য নেই। আমাকে দেওয়া কথা না রাখলে- সেটা কেবল আমার সাথে না, এই দেশের সমস্ত প্রগতিশীল মানুষের সাথে প্রতারণা করা হবে।
অনশন ভাঙার পর ড. জাফর ইকবাল ও ড. ইয়াসমিন হকের হাতে শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের পদত্যাগসহ পাঁচটি দাবি সরকারের উচ্চপর্যায়ে পৌঁছে দেওয়ার জন্য তুলে দেন।
দাবিগুলো হলো- উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগসহ ছাত্র উপদেশ পরিচালক অধ্যাপক জহির উদ্দিন আহমেদ ও প্রক্টরিয়াল বডির অপসারণ, ক্যাম্পাসের সবগুলো আবাসিক হল সচল রাখার বিষয়ে উদ্যোগ, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের অর্থ সাহায্য দেওয়া ৫ সাবেক শিক্ষার্থীর জামিন, অজ্ঞাতনামা শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহার এবং অনশনরত শিক্ষার্থী ও উপাচার্যের নির্দেশে পুলিশের হামলায় আহত সকল শিক্ষার্থীর চিকিৎসার ভার বহন।
এরমধ্যে গত রোববার বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেশ ও নির্দেশনা পরিচালক পদ থেকে অধ্যাপক জহির উদ্দিন আহমদকে সরিয়ে নেওয়া হয়। যদিও সুস্থতার কারণে তাকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে জানানো হয়। শাবি রেজিস্ট্রার স্বাক্ষরিত এক আদেশে জহির উদ্দিনের বদলে সমাজকর্ম বিভাগের অধ্যাপক আমিনা পারভীনকে এই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।