২৭ দিন পর আন্দোলন প্রত্যাহারের ঘোষণা শাবি শিক্ষার্থীদের
উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে টানা ২৭ দিন আন্দোলনের পর তা প্রত্যাহার করে নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।
শনিবার সন্ধ্যা ৭ টায় সংবাদ সম্মেলন করে এ ঘোষণা দেন তারা। এর আগে এদিন বিকেলে তারা ক্যাম্পাসে নিজেদের মধ্যে বৈঠক করেন।
সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের মুখপাত্র মোহাইমিনুল বাশার রাজ বলেন, 'শুক্রবার শিক্ষামন্ত্রীর সাথে আমাদের খুবই ফলপ্রসু আলোচনা হয়েছে। তিনি আমাদের প্রায় সব দাবি পূরণের আশ্বাস দিয়েছেন। আর আমাদের প্রধান দাবি উপাচার্যের পদত্যাগের বিষয়ে আচার্যের সাথে আলাপ করবেন বলেও জানান।
'তার আশ্বাসের প্রেক্ষিতে আমরা আন্দোলন আপাতত স্থগিত করছি। আমরা চাই কাল থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস কার্যক্রম শুরু হোক। শিক্ষার্থীদের যাতে সেশনজটে পড়তে না হয়।'
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ স্বাভাবিক করতে তারা সহযোগিতা করবেন জানিয়ে রাজ বলেন, আমরা আশা করি দ্রুত এই উপাচার্যকে সরিয়ে নেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, গত ১৬ জানুয়ারি থেকে উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলনে নামেন শাবি শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনকারীদের সাথে আলোচনা করতে গত শুক্রবার সিলেট যান শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। বিকেলে মন্ত্রীর সাথে বৈঠকে শিক্ষার্থীরা ৮ দফা দাবি ও ১৩টি সুপারিশ জানান।
সবগুলো দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিলেও শিক্ষার্থীদের মূল দাবি উপাচার্যের পদত্যাগ বা অপসারণের বিষয়টি আচার্যকে অবহিত করবেন বলে জানান শিক্ষামন্ত্রী।
উপাচার্যের দুঃখ প্রকাশ
এদিকে শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশি হামলার ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন শাবি উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদ।
হামলার ঘটনার ২৭ দিন পর শনিবার এক বিবৃতির মাধ্যমে উপাচার্য দুঃখপ্রকাশ করে বিবৃতি দেন। শিক্ষামন্ত্রীর পরামর্শেই দুঃখ প্রকাশ করেন তিনি।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতেই শুক্রবার ক্যাম্পাসে আসেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি ও শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান নওফেল।
পরে শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন তিনি। দীর্ঘ ২৬ দিন পর নিজ বাসভবন থেকে বেরিয়ে এসে এই আলোচনায় অংশ নেন উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ। এ সময় শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের হামলাসহ চলমান ঘটনাগুলোর জন্য উপাচার্যকে দুঃখ প্রকাশ করার পরামর্শ দেন দীপু মনি।
ওই বৈঠকের পর শাবি কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আনোয়ারুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, 'শিক্ষার্থীদের উপর হামলার ঘটনায় উপাচার্যকে দুঃখ প্রকাশ করতে বলেছেন শিক্ষামন্ত্রী। উপাচার্যকে উদ্দেশ্য করে মন্ত্রী বলেছেন, আপনার জায়গায় আমি থাকলে এতদিনে দুঃখপ্রকাশ করতাম।'
এরপরই আজ বিবৃতি দিলেন উপাচার্য।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, 'আমাদের প্রিয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘটে যাওয়া অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ যারা আহত হয়েছেন, তাদের সবার প্রতি আমার আন্তরিক সমবেদনা ও সহমর্মিতা প্রকাশ করছি।
'বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ অভিভাবক হিসেবে ঘটে যাওয়া অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্য আমি আন্তরিকভাবে গভীর দুঃখপ্রকাশ করছি। উক্ত ঘটনার ধারাবাহিকতায় সৃষ্ট অচলাবস্থা কাটিয়ে উঠতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারী- যারা আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।'
উপাচার্য আরও বলেন, 'বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক অবস্থা দ্রুত ফিরিয়ে আনতে শিক্ষামন্ত্রীর নেতৃত্বে শিক্ষা উপমন্ত্রীসহ সরকারের সবস্তরের দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গ, কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাসহ সিলেটের সুশীল সমাজের সবাইকে এবং বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের জানাই আমার আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা। সংকট নিরসনে মিডিয়া কর্মীদের যারা দায়িত্বশীল ভূমিকা রেখেছেন, তাদেরকেও ধন্যবাদ জানাই।'
গত ১৬ জানুয়ারি শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী হলের প্রভোস্টকে প্রত্যাহারের দাবিতে শিক্ষার্থীরা উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করে রাখেন। ওইদিনই শিক্ষার্থীদের লাঠিপেটা করে উপাচার্যকে মুক্ত করে পুলিশ। এতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ প্রায় ৫০ জন আহত হন। এরপর থেকেই উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা।