মেহেরপুর থেকে ৩০ কোটি টাকার বাঁধাকপি রপ্তানি
মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানির সুবাদে মেহেরপুরের বাঁধাকপি চাষিরা তাদের উৎপাদিত পণ্যের জন্য ভালো দাম পাচ্ছেন। কেবল মেহেরপুর জেলা থেকেই এবার প্রায় ৩০ কোটি টাকার বাঁধাকপি রপ্তানি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন রপ্তানিকারকরা।
অতীতে, শীতের মৌসুমে বাঁধাকপির উৎপাদন বেশি থাকায় ও দাম কমে যাওয়ায় প্রায়শই ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হতেন কৃষকরা। এখন পরিস্থিতি পাল্টেছে। রপ্তানির সুবাদে স্থানীয় বাজারেও এখন আশানুরূপ দাম পাচ্ছেন তারা।
যেসব কৃষক জৈব পদ্ধতিতে বাঁধাকপি উৎপাদন করছেন তারা রপ্তানির সুবিধা ভোগ করছেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে শীতের সবজি হিসেবে বাঁধাকপি আবাদ করা হয় ২ হাজার হেক্টর জমিতে। এরমধ্যে ৮০০ হেক্টর জমি থেকে প্রায় ২৫০০ মেট্রিক টন কপি রপ্তানি হয়েছে ইতোমধ্যে। কৃষকদের কাছ থেকে প্রতি পিস বাঁধাকপি কেনা হচ্ছে ২০ থেকে ২৫ টাকায়।
নিরাপদ উপায়ে যারা উৎপাদন করছেন তারা রপ্তানির সুবিধার আওতাধীন। নিরাপদ সবজি রপ্তানি বাড়াতে রপ্তানিকারকদেরকে সরকার শতকরা ২০ ভাগ প্রণোদনা দিচ্ছে বলে জানান এক রপ্তানিকারক।
মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক স্বপন কুমার খাঁ বলেন, কৃষকের উদ্বুদ্ধ করার মাধ্যমে নিরাপদ সবজি উৎপাদনে জোর দেওয়া হয়েছে। এভাবে বিক্রির নিশ্চয়তা পেলে চাষিরা নিরাপদ সবজি উৎপাদনে আরও উৎসাহিত হবেন।
নিরাপদ বাঁধাকপি উৎপাদনকারী কৃষক মুজিবনগরের মানিকনগর গ্রামের শফি উদ্দীন জানান, "আগে এক বিঘা কপি বিক্রি করে আসত ১০-২০ হাজার টাকা। রপ্তানির ফলে এখন আসছে ৫০-৬০ হাজার টাকা। রপ্তানি এভাবে অব্যাহত থাকলে কৃষকরা আরও লাভবান হবে।"
"পূর্বে বাঁধা কপি চাষে সার, কীটনাশক ও অন্যান্য বিষয়ে অনেক খরচ হতো। তারপরেও দামের নিশ্চয়তা ছিল না। নিরাপদ উপায়ে সবজি তৈরি করায় খরচ যেমন কমেছে, তেমনি লাভও বেড়েছে," যোগ করেন তিনি।
রপ্তানিকারকরা জানান, রপ্তানির জন্য নির্দিষ্ট কিছু নিয়মনীতি মেনে চলতে হয়। তারমধ্যে প্রথম ও প্রধান শর্ত হচ্ছে, সবজি নিরাপদ হতে হবে। কৃষি কর্মকর্তারা এসে মাঠে মাঠে এসকল ক্ষেত পর্যবেক্ষণ করেন। কপি তোলার সময় তারা নিরাপদ হিসেবে সনদপত্র দেন।
জানা যায়, মালয়েশিয়া, তাইওয়ান, ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইনের মতো যাচ্ছে রপ্তানি হচ্ছে বাংলাদেশের বাঁধাকপি ও আলু। মেহেরপুর থেকে এখন পর্যন্ত ৩০ কোটি টাকার বাঁধাকপি রপ্তানি হয়েছে। ফেব্রুয়ারির শেষ নাগাদ আরও ২০ কোটি টাকার বাঁধাকপি রপ্তানি হবে বলে আশা করছেন রপ্তানিকারকরা।
রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান আলী এগ্রোটেকের প্রতিনিধি খাজা নাজিমুদ্দীন বলেন, বিদেশের বাজারে আমাদের সবজির কদর ও চাহিদা বাড়ছে। বিশেষ করে মালয়েশিয়াতে বিপুল পরিমাণ বাঁধা কপি ও আলু পাঠানো হচ্ছে। কৃষকদের কাছ থেকে কেনা ও বন্দর পর্যন্ত পৌঁছানোর প্রক্রিয়া খুবই ব্যয়বহুল। তবে সরকারের প্রণোদনার কারণে আমরা এই খরচকে সামলাতে সমর্থ হচ্ছি।
মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক স্বপন কুমার খাঁ বলেন, নিরাপদ সবজি উৎপাদনের জন্য কৃষককে প্রশিক্ষণ এবং মাঠ পর্যায়ে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে কৃষি অফিস সতর্ক আছে। রপ্তানি বাজার যদি এমন থাকে তাহলে নিরাপদ সবজি উৎপাদন অব্যাহত থাকবে।
আর এর মাধ্যমে আমাদের কৃষি অর্থনীতি সমৃদ্ধির শীর্ষে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।