আলেশা মার্টের গ্রাহকদের টাকা ফেরত দেওয়া শুরু হচ্ছে আজ
পেমেন্ট গেটওয়ে 'এসএসএল কমার্জ'-এ আটকে থাকা আলেশা মার্টের ৪৮৫ জন গ্রাহকের ৪২ কোটি টাকা আজ বৃহস্পতিবার থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ফেরত দেওয়া শুরু হচ্ছে।
প্রথম দিনে ১০ জন গ্রাহককে তাদের পাওনা ফেরত দেওয়া হবে বলে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানিয়েছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ই-কমার্স সেলের প্রধান এ এইচ এম শফিকুজ্জামান।
৩০ জুন এসক্রো সার্ভিস চালুর আগে আলোচিত ই-কমার্স প্লাটফর্ম আলেশা মার্টের গ্রাহকদের ৩২ কোটি টাকা এবং এরপরে ১০ কোটি টাকা এসএসএল কমার্জে আটকে যায়। এর বাইরেও আলেশা মার্টের কাছে গ্রাহকদের প্রায় ২৭০ কোটি টাকা আটকে রয়েছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, আটকে থাকা ৪২ কোটি টাকা ১১৪৩ ট্রানজেকশনে দিয়েছেন ৪৮৫ জন গ্রাহক। এদের মধ্য থেকে ১০ জন গ্রাহকের পরিশোধ করা অর্থ আনুষ্ঠানিকভাবে আজ ফেরত দেওয়া হবে।
এ এইচ এম শফিকুজ্জামান জানান, "আলেশা মার্ট এসব গ্রাহকদের অগ্রিম চেক বিতরণ করেছে। আলেশা গ্রাহকদের কাছ থেকে ডিসকাউন্ট মূল্য গ্রহণ করলেও গ্রাহকদের দেওয়া চেক দিয়েছে এমআরপি হিসেবে। পেমেন্ট গেটওয়ে থেকে গ্রাহকদের পাওনা ফেরত দেওয়া হলে তাদের কাছে আলেশার দেওয়া চেকও থেকে যাবে। এতে জটিলতা তৈরি হবে।"
এ জটিলতা এড়াতে গ্রাহকদের আলেশার কাছে চেক ফেরত দিতে বলা হয়েছে। চেক ফেরত নিয়ে আলেশা গ্রাহকদের একটি অনাপত্তিপত্র দেবে, যা জমা নিয়ে এসএসএল কমার্জ গ্রাহকের টাকা ফেরত দেবে।
শফিকুজ্জামান বলেন, "আলেশার কাছে গ্রাহকদের পাওনা বাকি টাকা ফেরত দিতে কোম্পানিটিকে ব্যাংক ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করার জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে বাংলাদেশ ব্যাংককে চিঠি দেওয়া হয়েছে।"
গত ৬ ফেব্রুয়ারি এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে রেজুলেশন গ্রহণসহ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ওই সভার রেজুলেশনসহ আলেশা খুব শিগগিরই ব্যাংকে ঋণের আবেদন করবে।
কিউকমের টাকা ফেরত দিতে জটিলতা
পেমেন্ট গেটওয়ে ফস্টারে আটকে থাকা ৩৯৭ কোটি টাকা ফেরত দেওয়ার কাজ শুরু করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। ২৪ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে কিউকমের ৬ হাজার ৭২১ জন গ্রাহককে ৫৯.০৫ কোটি টাকা ফেরত দেওয়া শুরু করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। গত ২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ২ কোটি টাকা ফেরত দেওয়া সম্ভব হয়েছে।
গ্রাহকদের পাওনা অর্থ ফেরত দিতে দেরি হওয়ার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে এ এইচ এম শফিকুজ্জামান টিবিএসকে বলেন, "কোন একজন গ্রাহক হয়তো ৫ লাখ টাকা অগ্রিম পরিশোধ করেছেন, যার মধ্যে কিছু টাকা হয়তো তিনি নিজের ওয়ালেটের বাইরে দোকান থেকে এমএফএস এর মাধ্যমে দিয়েছেন।"
"কিন্তু এসক্রো সার্ভিসের নিয়ম হলো, যে মাধ্যম থেকে গ্রাহক টাকা পরিশোধ করেছেন, ওই মাধ্যমেই টাকা ফেরত দেওয়া হবে। এভাবে টাকা ফেরত দিলে তা গ্রাহকের বদলে বিকাশ, নগদ, রকেটের দোকানদারদের অ্যাকাউন্টে চলে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে", তিনি বলেন।
এ প্রেক্ষিতে গ্রাহকের টাকা ফেরত দেওয়ার আগে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। প্রত্যেকের কাছে জানতে চাওয়া হচ্ছে, যে মাধ্যম থেকে তারা টাকা পরিশোধ করেছেন, সে মাধ্যমে ফেরত দিলে কোনো সমস্যা আছে কি-না। কোন গ্রাহকের সমস্যা না থাকলে তা ওই মাধ্যমেই ফেরত দেওয়া হচ্ছে।
আর যে গ্রাহক এতে আপত্তি জানাচ্ছেন, তাদের বলা হচ্ছে সংশ্লিষ্ট দোকানদারসহ ফস্টারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে। যে মাধ্যমে টাকা ফেরত দিতে দুইজনই সম্মতি দিচ্ছে, সে মাধ্যমেই টাকা ফেরত দেওয়া হচ্ছে। আর এ কারণে দেরি হচ্ছে বলে জানান শফিকুজ্জামান।
তিনি বলেন, "কিউকমের সকল গ্রাহক হয় টাকা, অথবা পণ্য পাবেন। কারণ, কিউকমের ওয়্যারহাউজে ১০০ কোটি টাকার মালামাল রয়েছে, ফস্টারের কাছেও তাদের ৩৯৭ কোটি টাকা রয়েছে।"
তবে নির্ধারিত ৬ হাজার ৭২১ জন ছাড়া বাকি গ্রাহকদের পাওনা দিতে হলে কিউকমের সিইও রিপন মিয়ার জামিন প্রয়োজন। কারণ, গ্রাহকদের সঙ্গে লেনদেনের সব হিসাব রিপন মিয়ার কাছে।
ই-অরেঞ্জ, ধামাকার গ্রাহকদের পাওনা ফেরতের সম্ভাবনা কম
শফিকুজ্জামান বলেন, "ই-অরেঞ্জ, ধামাকাশপিংসহ যেসব ই-কমার্স কোম্পানির বিরুদ্ধে অর্থপাচারের অভিযোগ রয়েছে, তাদের বিষয়ে আমরা কোনো কাজ করছি না। এসব কোম্পানির অ্যাকাউন্টে কোনো টাকাও নেই, পেমেন্ট গেটওয়েতেও গ্রাহকের অর্থ তেমন নেই। ফলে তাদের গ্রাহকদের কি হবে, তা বলা সম্ভব হচ্ছে না।"
"যেসব কোম্পানির অ্যাকাউন্টে ৫ থেকে ১০ কোটি টাকা রয়েছে কিংবা পেমেন্ট গেটওয়েতেও কিছু টাকা আটকে আছে, আমরা চেষ্টা করছি, সেসব টাকা গ্রাহকদের মাঝে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য। কিন্তু ই-অরেঞ্জ ও ধামাকার অ্যাকাউন্ট ফাঁকা", যোগ করেন তিনি।