ডায়াবেটিসের নতুন কারণ আবিষ্কার করেছেন বাংলাদেশি বিজ্ঞানীরা
জেনেটিক কারণ, ইনসুলিন রেজিস্টেন্স, কায়িক পরিশ্রমের ঘাটতিসহ বিভিন্ন কারণে হয় ডায়াবেটিস। তবে ডায়াবেটিসের নতুন একটি কারণ আবিষ্কার করেছেন বাংলাদেশি বিজ্ঞানীরা।
তারা জানিয়েছেন, ইনটেস্টিনাল (অন্ত্রে) অ্যালকাইন ফসফেট (আইপিএ) নামক একটি এনজাইমের ঘাটতিও ডায়াবেটিস রোগ সৃষ্টির অন্যতম কারণ।
ডায়াবেটিক সমিতির উপদেষ্টা এবং হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সহকারী অধ্যাপক মধু এস. মালোর নেতৃত্বে বাংলাদেশ ও বিদেশের কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা ২০১৫-২০ এই পাঁচ বছর ধরে অনুসন্ধানের মাধ্যমে কারণটি আবিষ্কার করেন। গবেষণায় অংশগ্রহণকারী ছিলেন ৩০-৬০ বছর বয়সী ৫৭৪ জন ব্যক্তি।
এতে অর্থায়ন করে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড রিসার্চ কাউন্সিল এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
বুধবার (২৩ মার্চ) এক সংবাদ সম্মেলনে আবিষ্কারের বিষয়ে জানান অধ্যাপক মধু এস. মালো। এসময় তিনি বলেন, আইপিএ স্বল্পতায় ভোগা ব্যক্তিদের মধ্যে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি- যারা এমন স্বল্পতায় ভোগেন না, তাদের চেয়ে ১৩.৮ গুণ বেশি হয়। যাদের অন্ত্রে এ এনজাইমটি কম ছিল এবং পরে বেড়েছে তাদের ডায়াবেটিস হয়নি। এনজাইমটি যাদের অন্ত্রে কম ছিল, তাদের ফাস্টিং সুগার বৃদ্ধির মাত্রা প্রায় দ্বিগুণ। এর মাত্রা বেশি হলে স্থুল বা মোটা মানুষেরও ডায়াবেটিস হয় না।
তিনি জানান, স্টুল (মল) টেস্ট করে, কারো শরীরে আইপিএ কম আছে কিনা- তা তিন মিনিটের মধ্যে জানা যাবে। এনজাইমটির স্বল্পতার কারণে যাদের ঝুঁকি রয়েছে, তারা প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিয়ে ডায়াবেটিস মুক্ত থাকতে পারবেন। স্টুল পরীক্ষার জন্য মাঠ পর্যায়ে তার প্রস্তুতকৃত কিট ব্যবহারের জন্য নীতিনির্ধারক ও সরকারের কাছে সহায়তা চেয়েছেন এই গবেষক।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্য গবেষকরা জানান, যাদের দেহে এ এনজাইমের পরিমাণ কম তাদেরকে এনজাইম দেওয়া সম্ভব হলে ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করা সম্ভব। ইঁদুরের ওপর পরীক্ষা করে দেখা গেছে, হলুদ ও লাল ক্যাপসিকাম খেলে আইপিএ অ্যানজাইম বাড়ে। তবে এখনো মানব দেহে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল করা হয়নি।
গবেষণাটি সম্প্রতি ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নাল ও আমেরিকান ডায়াবেটিস সমিতির যৌথ উদ্যোগে প্রকাশিত জার্নাল 'দি বিএমজে ওপেন ডায়াবেটিস রিসার্চ অ্যান্ড কেয়ার'-এ প্রকাশিত হয়েছে।
ডায়াবেটিক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ডা. এ কে আজাদ বলেন, "আমরা মনে করি, এ আবিষ্কার হবে যুগান্তকারী, যা ডায়াবেটিক প্রতিরোধে বড় অবদান রাখবে।"
উল্লেখ্য, সারা বিশ্বে বর্তমানে ৪৬ কোটি মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। এর মধ্যে বাংলাদেশে ডায়াবেটিক রোগীর সংখ্যা ৮৬ লাখেরও বেশি।