সুলভ মূল্যের বিক্রয়কেন্দ্রে ক্রেতাদের সাড়া বাড়ছে
রাজধানীতে সুলভ মূল্যে দুধ, ডিম ও মাংসের ভ্রাম্যমাণ বিক্রয় কার্যক্রমে ক্রেতাদের ভালো সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। আর এর ফলে বাড়ানো হয়েছে বিক্রয়কেন্দ্র । প্রথম রমজানে ১০টি ভ্রাম্যমাণ বিক্রয়কেন্দ্র নিয়ে চালু করলেও এখন সেটা বাড়িয়ে ১৫টি করা হয়েছে।
শুক্রবার মিরপুর ৬০ ফুট রাস্তার পাশে আগারগাঁও পরিবেশ অধিদপ্তরের অফিসের পাশে ভ্রাম্যমাণ গাড়ির জন্য সকাল ৯টা থেকে দীর্ঘ লাইন দেখা গেছে। সাড়ে ৯ টায় যখন গাড়ি আসলো তখন প্রায় ৪০ জন দাঁড়িয়েছিল পণ্য কিনতে।
আফজাল হোসেন প্রায় এক ঘন্টা দাড়িয়ে থেকেও গরুর মাংস কিনেতে পারলেন না।
তিনি বললেন, "১০ টায় এসেছিলাম। লাইন ধরে আসতে আসতে শেষ হয়ে গেছে। শেওড়াপাড়া থেকে এসেছি, এক ঘণ্টা দাঁড়িয়ে ছিলাম লাইনে।"
ক্ষোভ নিয়ে বলেন, "গরুর মাংস কিনবো তাই এসেছিলাম কিন্তু পেলাম না। সরকারের প্রয়োজন একটু বেশি করে বিক্রি করা।"
গরুর মাংস না পেলেও আফজাল হোসেন মুরগির মাংস ও দুধ কিনতে পেরেছেন।
এ এলাকায় সাড়ে ১১টার মধ্যেই সব বিক্রি শেষ হয়ে যায়। তখনও ১৫ জন ক্রেতা পণ্য কিনার জন্য অপেক্ষায় ছিলেন।
এখানে মোবাইল ফ্রিজিং ভ্যানগাড়িতে গরুর মাংস ১০০ কেজি, মুরগির মাংস ৩৫ কেজি, খাশির মাংস ১৫ কেজি, ১০০০ হাজার ডিম, ১৫০ লিটার দুধ বিক্রি হয়েছে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর এ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। সুলভ মূল্যে দুধ, ডিম ও মাংসের ভ্রাম্যমাণ বিক্রয় কার্যক্রমে জনসাধারণের ব্যাপক সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। একইসাথে বেড়েছে এ সব পণ্যের চাহিদাও।
খামারবাড়ি গোলচত্বর এলাকায় বিক্রি শুরু হয় বেলা ১১টায়। দুপুর ১২টার সময় প্রায় ৩০ জনের লাইন ছিল পণ্য কেনার জন্য।
মগবাজার রেলগেট এলকা থেকে মকবুল হোসেন এসেছেন পণ্য কিনতে। তিনি বলেন, "আমি একটি বাড়ির কেয়ারটেকার। ডিম, দুধ আর মুরগি কিনতে এসেছি আমি।
গরুর মাংস কিনবেন না জানিয়ে তিনি দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, ৫৫০ টাকা দিয়ে গরুর মাংস কেনার সামর্থ্য নেই। গরুর মাংস আমাদের জন্য না।"
২৫ বছর ধরে রাজধানীতে আছেন তিনি। এখন বেতন পান ১২ হাজার টাকা। এ টাকা দিয়ে ৪ জনের সংসার চালাতে হয় তার।
মকবুল হোসেন বলেন, "যেভাবে পণ্যের দাম বাড়ছে, তাতে সারা বছর সুলভ মূল্যের এই ভ্রাম্যমাণ বিক্রয়কেন্দ্র থাকলে ভাল হয়।"
আরেক ক্রেতা, আমেনা বেগম কিনেছেন ২ কেজি গরুর মাংস ও ৩ লিটার দুধ।
ফরহাদ হোসেন সাভার থেকে একটি কাজে এসেছেন ফার্মগেট। যাবার পথে ২ কেজি গুরুর মাংস ও ২ কেজি মুরগির মাংস কিনেছেন।
তিনি টিবিএসকে বলেন, "দেখলাম বিক্রি হচ্ছে তাই লাইনে দাঁড়ালাম। এমন ভ্রাম্যমাণ বিক্রয় কেন্দ্র সাভার এলাকাও চালু করা প্রয়োজন।"
খামারবাড়ি গোলচত্বর এলাকার মোবাইল ভ্যানের ইনচার্জ আখতার হোসেন বলেন, "আমরা আজকে ২০০ কেজি গরুর মাংস, ১৫ কেজি খাসির মাংস, ১৫০ কেজি মুরগি, ৫০০ লিটার দুধ ও ১৬০০টি ডিম বিক্রি করেছি।
প্রথম রমজানে চালু হওয়া এ কার্যক্রম (সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা) চলবে ২৮ রমজান পর্যন্ত।
আব্দুল গণি রোড, খামারবাড়ি গোলচত্বর, জাপান গার্ডেন সিটি, মিরপুর ৬০ ফুট রোড, আজিমপুর ম্যাটারনিটি, পুরান ঢাকার নয়াবাজার, আরামবাগ, নতুন বাজার, কালশী, যাত্রাবাড়ী, খিলগাঁও, নাখালপাড়ার লুকাস মোড়, সেগুনবাগিচা ও উত্তরার দিয়াবাড়িতে বিক্রয় কার্যক্রম চলছে।
মোবাইল ভ্যানে এক লিটার পাস্তুরিত দুধের দাম ৬০ টাকা, গরুর মাংস ৫৫০ টাকা, খাসির মাংস ৮০০ টাকা, ব্রয়লার মুরগির কেজি ২০০ টাকা এবং চারটি ডিম ৩০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহজাদা বলেন, "একজন ভোক্তা এক কেজি মাংস, দুই লিটার দুধ এবং ৩০ পিস ডিম পাবেন।"
এদিকে কারওয়ান বাজারসহ রাজধানীর কয়েকটি বাজারে দেখা গেছে, গরুর মাংস প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ৬৫০ টাকা ও ফার্মের মুরগির মাংস বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকা। যেটা প্রথম রমজানে ছিল যথাক্রমে ৭০০ ও ১৭০ টাকা।