কলাবাগান খেলার মাঠ: ছাড়া পেলেন আন্দোলনকারী রত্না ও তার ছেলে
রাজধানীর কলাবাগানের 'তেঁতুলতলা মাঠ রক্ষা'র অন্যতম আন্দোলনকারী সৈয়দা রত্না ও তার ছেলে, ১৭ বছর বয়সী মোহাম্মদ ঈসা আবদুল্লাহকে গতকাল (২৪ এপ্রিল) আটক করে পুলিশ। পরবর্তীতে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়।
কলাবাগান থানার ওসি পরিতোষ চন্দ্র দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, রত্না ও তার ছেলেকে এই প্রতিশ্রুতি দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে যে তারা ভবিষ্যতে কোনো সরকারি কাজে বাধা দেবে না।
১০ ঘণ্টারও বেশি সময় আটকে থাকার পর তাদের হেফাজতে নেয় রত্নার বোন।
এর আগে একই অভিযোগে দুজনের বিরুদ্ধে মামলা করার চেষ্টা করে কলাবাগান থানা পুলিশ।
গত রাত সাড়ে ৯টার দিকে একটি মামলায় তাদের আসামি করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) নিউমার্কেট জোনের সহকারি কমিশনার শরীফ মোহাম্মদ ফারুকুজ্জামান।
বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মা-ছেলেকে কলাবাগান থানায় নিয়ে আসা হয়। আলাদা হেফাজতে রাখা হয় তাদেরকে।
১৭ বছর বয়সী আব্দুল্লাহকে প্রাপ্তবয়স্কদের হাজতে আটক রাখায় এ নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে বিতর্কের সৃষ্টি হয়।
কলাবাগান পুলিশ জানিয়েছে, গ্রেপ্তারকৃত দুজনকেই আজ সোমবার আদালতে সোপর্দ করা হবে।
যোগাযোগ করা হলে ডিএমপির রমনা জোনের উপ-কমিশনার সাজ্জাদুর রহমান জানান, তিনি কার্যালয়ের বাইরে থাকায় এ বিষয়ে কথা বলতে পারছেন না, ওসির সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন তিনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলাবাগান থানার একজন কর্মকর্তা টিবিএসকে বলেন, সৈয়দা রত্না ও তার ছেলেকে সকালে গ্রেপ্তার করে থানায় আনা হয়েছিল কারণ 'কলাবাগান খেলার মাঠে থানা কমপ্লেক্সের নির্মাণ প্রক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টি করে তারা'।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ১৭ নং ওয়ার্ডের অধীন তেঁতুলতলা খেলার মাঠটি দীর্ঘদিন ধরে শিশুদের খেলার মাঠ হিসেবে এবং জানাজার মতো অন্যান্য সামাজিক কর্মকাণ্ডের জন্য ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
এরপর, ২০২০ সালে একটি সাইনবোর্ড লাগিয়ে সেখানে থানার জন্য স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে উল্লেখ করে কলাবাগান পুলিশ। বাসিন্দারা অবিলম্বে সেই পদক্ষেপের প্রতিবাদ করে, সাইনবোর্ড অপসারণ করে এবং আগের মতো জায়গাটি ব্যবহার করতে থাকে।
পরবর্তীতে, এ বছরের ৩১ জানুয়ারি কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে জায়গাটি চিহ্নিত করে পুলিশ। কলাবাগান থানা পুলিশের কয়েকজন সদস্যকেও নিয়মিত সেখানে পাহারা দিতে দেখা গেছে।
এর আগে মার্চে ডিএমপি কর্মকর্তারা বলেন, কলাবাগান থানা কমপ্লেক্স শিগগিরই নির্মাণ করা হবে এবং স্থানীয় জনগণের দাবির সঙ্গে আপস করে জমি ফেরত দেওয়ার সুযোগ নেই।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের একটি সূত্র জানায়, তেঁতুলতলা খেলার মাঠ তাদের খেলার মাঠের তালিকায় নেই। এলাকাবাসী এটিকে খেলার মাঠ হিসেবে ব্যবহার করছিলেন।
গত বছরের ২৪ আগস্ট ঢাকা জেলা প্রশাসনের জারি করা এক নোটিশে উল্লেখ করা হয়, সেখানে ডিএমপি কলাবাগান থানা ভবন নির্মাণের জন্য খেলার মাঠটি সরকার অধিগ্রহণের প্রস্তাব করে। নোটিশে জমিটিকে পতিত হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
পরে ১১ সেপ্টেম্বর নোটিশের প্রতিবাদে কলাবাগানের বাসিন্দা, পরিবেশবাদী, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও উন্নয়নকর্মী এবং শিশু-কিশোররা আন্দোলন শুরু করে।
সৈয়দা রত্না ও এলাকাবাসী দীর্ঘদিন ধরে থানা ভবন নির্মাণের প্রতিবাদে আন্দোলন চালিয়ে আসছেন।