তেঁতুলতলা মাঠ তুমি কার!
সম্প্রতি দেশজুড়ে বিতর্কের সৃষ্টি করেছে রাজধানীর তেঁতুলতলা মাঠে কলাবাগান থানা ভবন নির্মাণের প্রতিবাদকারী এক মা ও তার সন্তানকে গ্রেপ্তারের ঘটনা। অথচ ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ১৭ নং ওয়ার্ডের অধীন তেঁতুলতলা খেলার মাঠটি দীর্ঘদিন ধরে শিশুদের খেলার মাঠ হিসেবে এবং জানাজার মতো অন্যান্য সামাজিক কর্মকাণ্ডের জন্য ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
এরপর, ২০২০ সালে একটি সাইনবোর্ড লাগিয়ে সেখানে থানার জন্য স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে উল্লেখ করে কলাবাগান পুলিশ। বাসিন্দারা অবিলম্বে সেই পদক্ষেপের প্রতিবাদ করে, সাইনবোর্ড অপসারণ করে এবং আগের মতো জায়গাটি ব্যবহার করতে থাকে।
মাঠ রক্ষার আন্দোলনকারীরা বলছেন, খেলার মাঠে কোনোভাবেই থানা ভবন করতে দেওয়া হবে না। এরমধ্যে, আন্দোলনকারী সৈয়দা রত্না ও তার ছেলেকে থানায় আটক রাখায় মাঠ রক্ষার আন্দোলন পেয়েছে আরও গতি। এমনকি মাঠের জায়গার মালিকানা ও থানাকে বরাদ্দ নিয়েও তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা। জায়গাটি কি মাঠ, না কারও ব্যক্তিগত সম্পত্তি; তা নিয়ে চলছে বিতর্ক।
এদিকে, আজ মঙ্গলবার (২৬ এপ্রিল) ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) জানিয়েছে, তেঁতুলতলা খেলার মাঠে কলাবাগান থানার জমি অধিগ্রহণে সব আইনি বিধি-বিধান অনুসরণ করা হয়েছে।
"কলাবাগান থানার জন্য অধিগ্রহণ করা জমিটি একটি জরিপ অনুসারে সরকারি সম্পত্তি এবং গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের মালিকানাধীন। যখন জমিটি ডিএমপিকে বরাদ্দ করা হয়েছিল, তখন এ বিষয়ে সব আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়েছিল," বলেন ডিএমপির উপকমিশনার (গণমাধ্যম ও জনসংযোগ)।
মঙ্গলবার (২৬ এপ্রিল) এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ কথা বলেন তিনি।
জাতীয় একটি দৈনিক সমকালের প্রকাশিত এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই মাঠের সঙ্গে কোনো সংযোগ থাকার বিষয়ে অস্বীকার করেছেন রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক), জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ও ঢাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের কর্মকর্তারা।
এমনকী, মাঠের মালিকানাও তাদের নয় এবং থানা ভবন করার জন্য সংশ্নিষ্ট সংস্থাগুলো বরাদ্দও দেয়নি। পুলিশের পক্ষ থেকে থানা ভবনের জন্য বরাদ্দ পাওয়ার দাবি করা হলেও তারা এ বিষয়ে কোনো দলিল বা প্রমাণ প্রকাশ করেনি।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক ড. আকতার মাহমুদ ওই গণমাধ্যমটিকে বলেন, "যতদূর জানি জায়গাটি এক বিহারির। কথা হলো, ওই এলাকায় ৩০ হাজার মানুষ বাস করে। তাদের জন্য কোনো মাঠ নেই। কোনো উন্মুক্ত স্থান নেই।"
ড. আকতার মাহমুদ আরও বলেন, "রাজধানীতে থানা বেড়েছে। মানুষ বেড়েছে। থানার জন্যও জায়গা প্রয়োজন। সেটা হয় অধিগ্রহণ করে কিংবা কিনে নিতে হবে। যে শহরে মাঠ-পার্ক-উন্মুক্ত স্থানের আকাল, সেই শহরে খেলার মাঠ বা উন্মুক্ত স্থান এভাবে বরাদ্দ দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।"
স্থানীয় কাউন্সিলর মাহবুবুর রহমানও একই কথা বলেছেন বলে জানা যায়। তিনি বলেন, "জায়গাটি মাঠ হিসেবেই দেখে আসছি। কিছুদিন আগে একজন লোক এসে বলল মাঠটা দখল করে পুলিশ থানা বানাচ্ছে। এটা একটু বন্ধ করার ব্যবস্থা করেন।"
"এখন আমি কোন দিকে যাব? একদিকে পুলিশ, অন্যদিকে জনতা। বিষয়টি নিয়ে আমিও ঝামেলায় আছি। কীভাবে যে কী হলো কিছু বুঝতে পারছি না," বলেন তিনি।
একইভাবে সৈয়দা রত্না ও তার সন্তানকে ধরে নিয়ে পুলিশ থানায় একদিন আটকে রাখে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
আন্দোলনকারীরা দাবি করেছেন, ষাটের দশকে কিছু সরকারি কর্মকর্তা নিজ উদ্যোগে ওই এলাকায় একটি আবাসিক এলাকা গড়ে তোলেন। এলাকার নকশা করেন নাজমা আছিরন জং জাকারিয়া নামের এক অবাঙালি প্রকৌশলী। ওই নকশার দাম হিসেবে তাকে ওই জায়গাটি দেওয়া হয়। তিনি কোনো স্থাপনা সেখানে তৈরি করেননি। ১৯৭১ এ স্বাধীনতার পর ওই ব্যক্তি দেশে ফেরেননি। তখন থেকেই জায়গাটি খেলার মাঠ ও লাশ গোসলের স্থান হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
আন্দোলনকারীরা বলছেন, পরিত্যক্ত জমি ব্যক্তিমালিকানায় সিটি জরিপে অন্তর্ভুক্ত হতে পারে না। এখানে থানা-পুলিশের কোনো কারসাজি থাকতে পারে।
পরিত্যক্ত সম্পত্তি হিসেবে ঘোষণার পর সেটা সরকারের কোন সংস্থার কাছে দেওয়া হয়েছে, সেটারও সুস্পষ্ট কোনো উত্তর নেই বলেও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ সিরাজুল ইসলামের বলা হয়েছে একটি জাতীয় গণমাধ্যমে।
ঢাকার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) ভাস্কর দেবনাথ বাপ্পী বলেন, "ওই মাঠ ডিসি অফিস অধিগ্রহণ করেছে বলে আমার জানা নেই। এমনকি থানার নামে বরাদ্দ দেওয়ার বিষয় ঘটেছে বলেও মনে হচ্ছে না। এমনটা হলে আমি জানতাম।"