বন্দর থেকে পণ্য খালাস সহজীকরণ করতে আরো বেশি প্রতিষ্ঠানকে সুবিধা দিতে যাচ্ছে এনবিআর
ট্রাস্টেড আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানকে আমদানিকৃত পণ্য বন্দরে পরীক্ষার জন্য সময় নষ্ট না করে সরাসরি ওয়্যারহাউজ কিংবা কারখানায় নিয়ে যাওয়ার সুযোগ দেওয়া সংক্রান্ত অথোরাইজড ইকোনমিক অপারেটর (এইও) সুবিধা বিস্তৃত করতে যাচ্ছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাস্টমস বিভাগ।
এ লক্ষ্যে আগ্রহী প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে গত এপ্রিল মাসে আবেদন চায় কাস্টমস বিভাগ। কাস্টমস বিভাগের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ইতিমধ্যে প্রায় ৩০টি প্রতিষ্ঠান এইও হওয়ার জন্য আবেদন করেছে। চলতি মাসের শেষ নাগাদ আবেদনকারীদের মধ্য থেকে নির্দিষ্ট ক্রাইটেরিয়া পূরণ করা প্রতিষ্ঠানগুলোকে এই সুবিধার আওতায় আনা হবে।
সুবিধার আওতায় থাকা প্রতিষ্ঠানগুলো আমদানিকৃত পণ্য তাদের ঘোষণার ভিত্তিতে বন্দরে কাস্টমস সংক্রান্ত পরীক্ষা ছাড়াই সরাসরি তাদের গুদামে কিংবা কারখানায় নিতে পারবে। প্রয়োজন মনে করলে কাস্টমস বিভাগের কর্মকর্তারা ওই আমদানিকারকের কারখানায় গিয়ে পণ্য পরীক্ষা করবেন।
এতে আমদানিকারকের পণ্য পরীক্ষার জন্য যে বাড়তি সময় বন্দরে থাকতে হতো, তা লাগবে না। ফলে আমদানিকারকের খরচ কমে যাবে, যা দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য সহজ করার ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।
২০১৯ সালে পরীক্ষামূলকভাবে তিনটি ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিকে এ সুবিধা দেওয়ার মাধ্যমে এইও পদ্ধতি চালু করে এনবিআর। এগুলো হলো স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড এবং ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড।
তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চার বছর পার হলেও আলোচ্য প্রতিষ্ঠানগুলো এ সুবিধা তেমন নিতে পারেনি। এর পেছনে প্রতিষ্ঠানগুলোর পাশাপাশি এনবিআরের কাস্টমস বিভাগেরও প্রস্তুতির ঘাটতি ছিল।
এমন পরিস্থিতিতে নতুন করে প্রতিষ্ঠানগুলোকে এইও সুবিধার আওতায় আনার পর যথাযথভাবে কার্যকর করা যাবে কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
তিনটি প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া এ সুবিধার অতীত অভিজ্ঞতা কেমন, এমন প্রশ্নে এনবিআরের কাস্টমস বিভাগের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'তিনটি প্রতিষ্ঠান পুরোদমে এ কাজ শুরু করতে পারেনি।
তবে বিদ্যমান সমস্যাগুলো সমাধান করে তা বিস্তৃত করার জন্য সম্প্রতি এনবিআর চেয়ারম্যান মহোদয় আমাদের নির্দেশনা দিয়েছেন।'
এনবিআরের এইও সংক্রান্ত কার্যক্রম দেখভাল করছে বাংলাদেশ শুল্ক মূল্যায়ন ও অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা কমিশনারেট। এই অফিসের কমিশনার মোহাম্মদ এনামুল হক দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'এইও বাস্তবায়ন করার জন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর নিজস্ব ভ্যাট (ভ্যালু অ্যাডেড ট্যাক্স) সফটওয়্যার থাকার শর্ত রয়েছে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানগুলোর এই সফটওয়্যার ছিল না।'
'আবার এজন্য আমাদের যে নিজস্ব প্রস্তুতির দরকার ছিল, বিশেষত কাস্টমস হাউজগুলোতে ডেডিকেডেট টিম থাকার দরকার, তা ছিলো না। এখন ওইসব সমস্যা ওভারকাম করেছি।'
তিনি বলেন, 'এখন এসব সমস্যার সমাধান করে আগামী অর্থবছর নাগাদ পুরোদমে এ কাজ শুরু করা যাবে বলে আশা করছি। ইতিমধ্যে নতুন করে প্রায় ৩০টি প্রতিষ্ঠানের আবেদন এসেছে। চলতি মাস শেষে যাচাই-বাছাই করে শর্ত পূরণ করা আবেদনকারীদের এইও হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হবে।'
মূলত ট্রাস্টেড ব্যবসায়ীদেরকে এ সুবিধা দিচ্ছে এনবিআর। কিছু ক্রাইটেরিয়ার ভিত্তিতে তা ঠিক করা হয়। কাস্টমস, ভ্যাট ও আয়কর আইনের আওতায় স্যাটিসফ্যাকটরি কমপ্লায়েন্স রেকর্ড থাকা, আবেদনকারীর পূর্ববর্তী তিন বছর প্রমাণিত অপরাধমুক্ত থাকা, কোন রাজস্ব বকেয়া নেই এবং কোন মামলায় জরিমানার পরিমাণ মোট মূল্যের এক শতাংশের কম থাকা এর মধ্যে অন্যতম।
এছাড়া আবেদনকারী প্রতিষ্ঠানের অনুমোদিত মূলধন ১৫ কোটি এবং পরিশোধিত মূলধন হতে হবে ৫ কোটি টাকা, আর আমদানির পরিমাণ হতে হবে বছরে কমপক্ষে ৫ কোটি টাকা।
এনবিআর সূত্র জানায়, এইও হলে আমদানিকৃত পণ্য চালান সরাসরি বন্দর থেকে তারা কারখানা বা গুদামে নিয়ে যেতে পারবেন। তার দেওয়া ঘোষণা অনুযায়ী শুল্কায়ন হবে। আমাদের কোন অবজারভেশন থাকলে কর্মকর্তারা ওই প্রিমিজেস এ গিয়ে পণ্য কায়িক পরীক্ষা করতে পারবেন। এর বাইরেও তারা কিছু সুবিধা পাবেন।
বাংলাদেশের যদি বিশ্বের অন্য কোন দেশের সঙ্গে এইও সংক্রান্ত মিউচ্যুয়াল রিকগনিশন এগ্রিমেন্ট থাকে – সেক্ষেত্রে এইও সুবিধাভোগী অন্য দেশেও একই সুবিধা পাবেন।
ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সাবেক সভাপতি শামস মাহমুদ এনবিআরের এমন উদ্যোগকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন। তার মতে, এ সুবিধা অন্যান্য প্রতিষ্ঠান পেলে তা ব্যবসা সহজ করার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখবে।