ঠিকানা বদলে ১৬ বছর আত্মগোপনে ছিলেন হুজি নেতা আবদুল হাই
বিভিন্ন জঙ্গি হামলার ঘটনায় হরকাতুল জিহাদের (হুজি-বি) জড়িতের বিষয় প্রকাশ্যে এলে ২০০৬ সালে সংগঠনটির সাবেক আমির ও প্রতিষ্ঠাতা সদস্য মুফতি আবদুল হাই আত্মগোপনে চলে যান। হুজিবির এই নেতার বাড়ি কুমিল্লায় হলেও পরিবার থাকত নারায়ণগঞ্জে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাত থেকে বাঁচতে ২০০৬ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত কুমিল্লার গৌরীপুরে শ্বশুরের দোকানে কর্মচারী সেজে ছিলেন আবদুল হাই। পরে কৌশলে তিনি নারায়ণগঞ্জ থেকে ভোটার কার্ড সংগ্রহ করেন। এরপর ২০০৯ সাল থেকে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতে শুরু করেন।
বুধবার নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থেকে মুফতি আবদুল হাইকে গ্রেপ্তারের পর বৃহস্পতিবার কারওয়ানবাজারে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানায় র্যাব।
গ্রেপ্তারকৃত আব্দুল হাই রমনার বটমূলে বোমা হামলা এবং গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় ৭৬ কেজি ওজনের বোমা পুঁতে রেখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি। তার বিরুদ্ধে সাতটি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে, যার মধ্যে দুটি মৃত্যুদণ্ড ও দুটি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। তিনি মোট ১৩টি মামলার আসামি।
সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, আবদুল হাই নারায়ণগঞ্জের দেওভোগ মাদ্রাসায় ১৯৭২ থেকে ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত পড়েছেন। ১৯৮১ সালে দেওবন্দ দারুল উলুম মাদ্রাসায় পড়তে অবৈধভাবে পাশের দেশে যান। ১৯৮৫ সালের শেষে পার্শ্ববর্তী দেশের নাগরিক হিসেবে পাসপোর্ট বানিয়ে তিনি আবার বাংলাদেশে ঢোকেন। এক বছর পর আবার চলে যান পাশের দেশে। পরে সেখান থেকে ভিসা নিয়ে করাচিতে গিয়ে মুফতি টাইটেল নেন। ১৯৮৯ সালে ওই মাদ্রাসায় একাধিক বাংলাদেশিসহ বেশ কয়েকজন পাকিস্তানি মিরানশাহ বর্ডার দিয়ে আফগানিস্তানে মুজাহিদ হিসেবে ঢোকেন। সেখানে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের কয়েক জঙ্গি মিলে অস্ত্র চালনার প্রশিক্ষণ নেন।
এরপর ১৯৯১ সালে আবদুল হাই আবার বাংলাদেশে ফিরে আসেন। সে বছরই জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে 'হরকাতুল জিহাদ' নামে প্রচার শুরু করেন। ১৯৯২ সালের প্রথম দিকে কক্সবাজারের উখিয়া মাদ্রাসায় চালু করেন জঙ্গি কার্যক্রম প্রশিক্ষণ ক্যাম্প। ১৯৯৬ সালে যৌথ বাহিনীর অভিযানে এ ক্যাম্প থেকেই গ্রেপ্তার করা হয় ৪১ জনকে।
র্যাব জানায়, ২০০১ সালের ১৪ এপ্রিল রমনার বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বোমা হামলায় ১০ জনের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় করা মামলায় ২০১৪ সালের ২৩ জুন হরকাতুল জিহাদের শীর্ষ নেতা মুফতি হান্নানসহ ৮ জনকে মৃত্যুদণ্ড ও ৬ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন বিচারিক আদালত। এর আগে ২০০০ সালের ২২ জুলাই গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় জনসভাস্থলে বোমা পুঁতে রেখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়। ওই মামলায় ২০২১ সালে ১৪ জঙ্গিকে মৃত্যুদণ্ড দেন আদালত। এ দুই মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের মধ্যে ছিলেন মুফতি আবদুল হাই। এছাড়া ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে গ্রেনেড হামলা মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি তিনি।