ইউটিউব, ফেসবুকে বাণিজ্যিকভাবে গান-নাটক আপলোড করতে লাগবে অনুমতি
ইউটিউব, ফেসবুক, ওয়েবসাইট ও ই-মেইলসহ যেকোনো ডিজিটাল প্লাটফর্মে গান, নাটক, সাহিত্য, চলচ্চিত্রসহ শ্রবণ, দৃষ্টিগ্রাহ্য ও অনুধাবনযোগ্য সাংস্কৃতিক কনটেন্ট বাণিজ্যিকভাবে সম্প্রচার ও প্রদর্শনের ক্ষেত্রে কপিরাইট লাইসেন্স থাকতে হবে। দেশের মোবাইল অপারেটর কোম্পানিগুলোকেও কপিরাইট সনদের ভিত্তিতে সাংস্কৃতিক কনটেন্ট ব্যবহার করতে হবে।
ডিজিটাল প্লাটফর্মে সাংস্কৃতিক উপাদান ব্যবহারে শৃঙ্খলা আনা এবং কপিরাইট ও রিলেটেড স্বত্বাধিকারীদের রয়্যালিটি প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে এ উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ কপিরাইট অফিস। এতে সরকারের রাজস্ব আয় বাড়বে বলেও মনে করছেন তারা।
এরই অংশ হিসেবে ১ নভেম্বর সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদের সভাপতিত্বে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা ডাকা হয়েছে। বাংলাদেশ কপিরাইট অফিসের প্রস্তাবে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ কপিরাইট অফিসের রেজিস্ট্রার অব কপিরাইটস জাফর রাজা চৌধুরী দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'এখন যেকেউ, যেকারও গান, নাটক, সিনেমা, সাহিত্যসহ যে কোনো কালচারাল কনটেন্ট ইউটিউব, ইউটিউন, ফেসবুকসহ ডিজিটাল প্লাটফর্মে বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করে বিপুল অর্থ আয় করছেন। এসব গানের গীতিকার, সুরকার, কিংবা কপিরাইট স্বত্ত্বাধিকারী সেখান থেকে কোনো রয়্যালটি পাচ্ছেন না। এতে এক ধরনের বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে।'
'কপিরাইট আইনে ডিজিটাল প্লাটফর্মে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে আপলোডের ক্ষেত্রে কপিরাইট করা বা লাইসেন্স নেওয়ার বিষয়ে কিছু বলা নেই। সে কারণে আমরা আইন সংশোধন করে কপিরাইট নেওয়া বাধ্যতামূলক করতে যাচ্ছি। আইন হওয়ার পর এসব সাংস্কৃতিক কনটেন্ট আপলোডের ক্ষেত্রে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নেওয়া বাধ্যতামূলক হবে,' বলেন তিনি।
জাফর রাজা চৌধুরী আরও বলেন, 'মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলো রিংটোন, ভ্যালু অ্যাডেড সার্ভিস কিংবা মিউজিক কনটেন্ট ব্যবহার করছে। এতে সংশ্লিষ্ট শিল্পীরা যথাযথ হিস্যা পাচ্ছেন না। এক্ষেত্রে ইনটেলেকচুয়াল প্রপার্টি রাইটসের আওতায় শিল্পীদের হিস্যা নিশ্চিত করতে কপিরাইট বাধ্যতামূলক করে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমোদন সাপেক্ষে ফোন কোম্পানিগুলোকে তা ব্যবহার করতে হবে।'
সম্প্রতি সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে পাঠানো এক চিঠিতে বাংলাদেশ কপিরাইট অফিস বলেছে, বাংলাদেশে ডিজিটাল প্লাটফর্মের মাধ্যমে বিভিন্ন অনৈতিক চর্চা ও সাংস্কৃতিক উপাদানের অবৈধ বাণিজ্যেও উন্মুক্ত সুযোগ তৈরি হয়েছে। ফলে যে কেউ ইউটিউব, ইউটিউন ও ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মেও নিয়ন্ত্রণহীন ব্যবহারের মাধ্যমে কপিরাইট স্বত্বাধিকারীর অনুমতি ছাড়াই যখন-তখন নাটক, সিনেমা, গান, কম্পিউটার গেমস, ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান বাণিজ্যিকভাবে সম্প্রচার করে অবৈধভাবে প্রচুর অর্থ উপার্জন করছে। এজন্য সরকারের কোনো প্রতিষ্ঠান বা এজেন্সি হতে লাইসেন্স বা অনুমতি নিতে হচ্ছে না।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ভারতীয় কপিরাইট আইনে যেকোনো সাহিত্য, গান এবং শব্দ-ধ্বনি সম্প্রচারের ক্ষেত্রে কপিরাইট বোর্ডের মাধ্যমে লাইসেন্স নেওয়ার বিধান রয়েছে। ডিজিটাল প্লাটফর্মে অবৈধ কনটেন্ট ব্যবহারের নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি মোকাবেলায় ভারতীয় কপিরাইট আইনের মতো ধারা বাংলাদেশের কপিরাইট আইনে সংযুক্ত করা হবে।