'এত সাদা মেয়ে মিডিয়ায় কাজ করবে কীভাবে?'
সৈয়দ রুমা। ফ্যাশন মডেলিংয়ের এক পরিচিত মুখ। সিনিয়র র্যাম্প মডেল। ক্যারিয়ারের শুরু থেকে এ পর্যন্ত পাঁচ শতাধিক র্যাম্পে ক্যাটওয়াক করে আলো ছড়িয়েছেন। কোরিওগ্রাফার হিসেবেও খ্যাতি আছে তার।
করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে দেশে র্যাম্প মডেলিংয়ের ভবিষ্যৎ, ব্যক্তিগত পরিকল্পনা ইত্যাদি প্রসঙ্গে তিনি কথা বলেছেন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের সঙ্গে।
আপনার বেড়ে ওঠা?
সৈয়দ রুমা: ঢাকার ওয়ারিতে আমার জন্ম। এখানেই বেড়ে উঠেছি।
র্যাম্প মডেলিংয়ে প্রথম শুরু কী ভাবনা থেকে এবং কবে ও কীভাবে?
রুমা: আমার ইচ্ছা ছিল না। তবে বড় বোন সৈয়দ রেশমার ইচ্ছা ছিল মডেলিং করার। তার অনুপ্রেরণায় শুরু। আমাদের এক বন্ধু বলেছিল মডেলিংয়ের কথা।
প্রথম দিকের স্ট্রাগল কেমন ছিল?
রুমা: আমার বোন ছাড়া অন্য কেউ আমাকে কোনো সহযোগিতা করেনি। প্রথম দিকে সবাই বলত, এত সাদা মেয়ে, এত শুকনো মেয়ে, এত ছোট মেয়ে কীভাবে মিডিয়ায় কাজ করবে? প্রথম দুই বছর অনেক কষ্ট করতে হয়েছে কাজের জন্য। ইন্ডাস্ট্রির কাউকে তেমন চিনতাম না। বুঝতাম না, কার সঙ্গে কাজ করলে ভালো হবে।
কোনো বিশেষ বাধা বা ঘটনার স্মৃতি মনে পড়ে? কীভাবে সামলিয়েছেন?
রুমা: প্রথমত আমার পরিবার রাজি ছিল না। আমি মডেলিং শুরু করার পর রাগ করে মামারা প্রায় দুই বছর আমাদের বাসায় আসেননি। আম্মার ওপর দাদী রাগ করে ছিলেন। র্যাম্প মডেলিং কতটা সম্মানজনক, আম্মুও বুঝতেন না। আমার বোন তাকে অনেক বোঝানোর পর কাজ করতে দিতে রাজি হয়েছেন।
এ পর্যন্ত আনুমানিক কতগুলো শো করেছেন?
রুমা: ঠিক হিসেব করে বলতে পারব না; তবে পাঁচ শ'র ওপরে হবেই।
উল্লেখযোগ্য শো কোনগুলো?
রুমা: ব্রাইডাল এশিয়া ২০০৫, পাকিস্তান; ঢাকা ফ্যাশন উইক ২০১১-এ 'মডেল অব দ্য ইয়ার' হওয়া; দিল্লি ফ্যাশন উইক ২০১৮... প্রভৃতি মনে পড়ে।
র্যাম্পে সবচেয়ে আনন্দের স্মৃতি?
রুমা: র্যাম্প আমাকে অনেক কিছুই দিয়েছে। আমি আজকে সৈয়দ রুমা- এই শোয়ের জন্যই। এ কারণে র্যাম্প শুনলেই আমার মন আনন্দে ভরে ওঠে। অনেক, অনেক, অনেক আনন্দে...!
সবচেয়ে বেদনার স্মৃতি?
রুমা: র্যাম্প আমাকে কখনো কষ্ট দেয়নি। তবে শো ক্যানসেল হলে কষ্ট পাই। অনেক ভালো শো যদি একটা মডেল বা কারও জন্য নষ্ট হয়, তখন খুব খারাপ লাগে।
সর্বশেষ কবে শো করেছেন? কোথায়?
রুমা: ফেব্রুয়ারিতে। তবে কোথায় করেছি, করোনাভাইরাসের এই বিরতিতে ঠিক মনে পড়ছে না!
বিদেশে শোয়ের অভিজ্ঞতা?
রুমা: দেশের বাইরের অভিজ্ঞতা অনেক ভালো। কারণ বিদেশের ইন্ডাস্ট্রি অনেক বড়, অনেক সুন্দর, অনেক মানুষ কাজ করে; তারা অনেক বেশি অভিজ্ঞ ও হেল্পফুল। আমি যতগুলো দেশে শো করেছি- পাকিস্তান, ভারত, নেপাল, ভূটান... সবগুলো অভিজ্ঞতা বিভিন্ন ধরনের। সবগুলোর আইডিয়া, ক্যাটাগরি- বিভিন্ন ধরনের। অনেক কিছু শেখার আছে তাদের কাছ থেকে। তারা অনেক প্রফেশনাল। আমার অনেক ভালো লাগে বাইরের দেশে কাজ করতে। বিদেশে ভিন্ন ভিন্ন ক্যাটাগরিতে, ভিন্ন ভিন্ন কোরিওগ্রাফারের সঙ্গে কাজ করে আমি অনেক কিছু শিখেছি। তাই বিদেশের অভিজ্ঞতা আমার সবসময়ই ভালো ছিল। আশা করি, ভবিষ্যতেও ভালো থাকবে।
বাংলাদেশের র্যাম্প মডেলিং নিয়ে অভিজ্ঞতা থেকে আপনার মূল্যায়ন?
রুমা: ২০০২ সাল থেকে আমি শুরু করলেও ২০০৫ সাল থেকেই আমার অভিজ্ঞতা বেশি। কারণ এ সময়েই আমি প্রফেশনালি কাজ করা শুরু করেছি। কীভাবে কোরিওগ্রাফি করা, কীভাবে স্টাইল করা, কীভাবে র্যাম্পে দাঁড়ানো, কীভাবে ড্রেস পরা, মেকআপ করা... সবকিছু আস্তে আস্তে শিখেছি। আমি এখন কোরিওগ্রাফি করি। ইন্টারন্যাশনাল নিউজপেপারে ফ্যাশন অ্যাডভাইজার হিসেবেও কাজ করি। আমার একটা গ্রুমিং স্কুলও রয়েছে। সব মিলিয়ে র্যাম্পে আমার অভিজ্ঞতা ইতিবাচক। এই মিডিয়া থেকে যতটুকু আশা করিনি, তারচেয়ে অনেক বেশি মূল্যায়ন পেয়েছি। এ কারণে আমৃত্যু আমার কাছে র্যাম্পই সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য পাবে।
র্যাম্পে কাজ করতে আগ্রহী নতুনদের প্রতি পরামর্শ?
রুমা: অবশ্যই তাদের কমিটমেন্ট রাখতে হবে, টাইম মেইনটেইন করতে হবে, আত্মবিশ্বাস রাখতে হবে। এখন কিন্তু মিডিয়ায় অনেক সহজেই প্রবেশ করা যায়। আগের মতো অত কঠিন না। তবে তাদের প্রপার গ্রুমিং দরকার। কাজ কখনোই ছোট-বড় না; যে কোরিওগ্রাফারের কাজই হোক, মনোযোগ দিয়ে করতে হবে। আমরা যেহেতু অনেক বছর ধরে এ মিডিয়ায় কাজ করছি, সেই অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, কাজটি অবশ্যই সম্মানজনক। তাই ধৈর্য ধরে, পুরো মনোযোগ দিয়ে কাজ করতে হবে, যেন ক্যারিয়ার দীর্ঘ হয়।
করোনা পরবর্তী র্যাম্প মডেলিং ইন্ডাস্ট্রি কীভাবে ঘুরে দাঁড়াতে পারবে বলে মনে করেন?
রুমা: করোনার কারণে দেশ-বিদেশ... পুরো দুনিয়ার অবস্থাই খারাপ। র্যাম্পের অবস্থা যে কী দাঁড়াবে- আসলে বুঝতে পারছি না! আমার মনে হচ্ছে না, এ বছর কোনো কাজ হবে। তবে আমরা অবশ্য অনলাইন ফটোশুট করছি। তাই করোনা খুব বেশি অ্যাটাক করার কথা না। কারণ, আমরা খুব একটা বসে নেই। ভার্চুয়াল ফটোশুট করছি। এভাবে অনেকগুলো ফ্যাশন হাউসেরও ফোন আসছে, বাসায় বসে ফটোশুট করানো। মডেলের বাসায় ড্রেস পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। জুমের সাহায্যে ফটোগ্রাফার ফটোশুট করছে। করোনার কারণে মিডিয়ায় অবশ্যই অনেক বেশি প্রভাব পড়েছে। সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে র্যাম্পে। কারণ, র্যাম্পে শো'ই হয় অডিয়েন্সের জন্য। অডিয়েন্স যেহেতু একত্র হতে পারবে না, প্রভাবটা অবশ্যই পড়বে। তবে আমার মনে হয়, আমরা খুব তাড়াতাড়ি রিকভার করতে পারব।
র্যাম্প ঘিরে আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা?
রুমা: র্যাম্প ঘিরে আমার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা অনেক বেশি। আমি র্যাম্প ছাড়া নিজেকে ভাবতেই পারি না। জানি, এক পর্যায়ে মডেল হিসেবে আমাকে র্যাম্প ছাড়তে হবে। তাই কোরিওগ্রাফি শুরু করেছি; তখন এটা নিয়েই থাকব। আমার ধারণ, আমরা বলিউডেও কাজ করতে পারব। র্যাম্প নিয়ে আমার অনেক স্বপ্ন। যেমন, আমি এখন কোয়ারেন্টিনে, তবে পরবর্তী শোগুলো কীভাবে হবে, কোরিওগ্রাফি কীভাবে হবে, দেশের বাইরের শোগুলো কীভাবে করব, বিদেশ থেকে মডেল এলে কীভাবে সামলাব... এসব নিয়ে পরিকল্পনা করছি। র্যাম্পের পরিসর আরও বাড়ানো যায় কীভাবে, আরও পরিচিত করা যায় কীভাবে... সব মিলিয়ে অনেক ভাবনা ও পরিকল্পনা আমার। র্যাম্পকে আকাশ ছোঁয়াব- এটাই আমার স্বপ্ন।