বোসম্যানের জন্য শোকগাথা
ব্ল্যাক প্যান্থার ছিলেন না চ্যাডউইক বোসম্যান। ছিলেন না থারগুড মার্শাল। ছিলেন না তিনি জ্যাকি রবিনসন। ছিলেন না জেমস ব্রাউন। তিনি ছিলেন ভীষণ সুদক্ষ এক অভিনেতা, যিনি প্রখরতা, জাদুমন্ত্র ও প্যাশনের এক অতুলনীয় সংমিশ্রণ ঘটিয়ে এইসব ব্যক্তিত্বের প্রতিমাগুলোকে চলচ্চিত্রের গণ্ডি ছাড়িয়ে আরও বহুদূর পর্যন্ত বিস্তৃত করার সক্ষমতা দেখিয়েছিলেন।
যখন কৃষ্ণাঙ্গ নায়কদের কথা ভাবি, আমাদের মনে বোসম্যানের মায়াবি অথচ দৃঢ়চেতা মুখ ভেসে ওঠে; তার মতোই দরদি অথচ ঝাঁজাল কণ্ঠস্বর শুনতে পাই আমরা।
তিনি সেই বিরল অভিনেতাদের একজন ছিলেন, যাদের কাজ এক বিনম্র প্রাণোচ্ছল অভিজ্ঞতা; আর সেটিই আমাদের তার প্রতি আকৃষ্ট করেছে। জিমি স্টুয়ার্টও এ রকম ছিলেন। সিডনি পইটিয়ারও। আমরা জানতাম, তাদের কাজ যত্নে ভরা। আমাদের প্রতি যত্নশীল ছিলেন তারা।
অভিনেতা আর খেলোয়াড়েরা তো স্রেফ বিনোদনদাতা; তবু তারা সমাজে এক অনুপাতহীন প্রভাব বিস্তার করেন। লোকেরা তাদের দেখে, প্রায়সময়ই তাদের কাজের সঙ্গে প্রতিভা গুলিয়ে ফেলে; আনন্দ, বেদনা, অনুপ্রেরণা, বিষণ্নতার গভীরতর আবেগ দর্শকের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার সক্ষমতা রাখে তারা। আর সেটিই তাদের প্রশংসা এনে দেয়।
পরিণামে অবশ্য অভিনেতা ও খেলোয়াড়েরা পর্দা ও মাঠের বাইরে নিবেদিত ও অনুপ্রেরণাদায়ীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। স্রেফ বিনোদন নয়, বরং নিজ নিজ সমাজের চেহারা আরও ভালো করে তুলতে মানুষকে নিবেদিত হতে প্রেরণা জুগিয়েও তারা আমাদের প্রশংসা অর্জন করেন।
আর এটিই চ্যাডউইক বোসম্যানকে কৃষ্ণাঙ্গ কমিউনিটিতে এত গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে। আফ্রিকান-আমেরিকানদের সংগ্রামের বৈশিষ্ট্যগুলোর ভিজুয়াল ম্যানিফেস্টেশন- লিংকন মেমোরিয়ালের মতো তিনি নিজেও একটি সেলুলয়েড মনুমেন্ট হয়ে ছিলেন এবং আছেন; ফলে একজন কৃষ্ণাঙ্গ মানুষের অখণ্ডতা ও সাহসের প্রতিমা হয়ে উঠেছে তার নামটি।
নিজ নীতির প্রতি সত্যবান এবং আপসে অনিচ্ছুক এক নিবেদিতপ্রাণ মানুষ ছিলেন তিনি।
ক্যানসারে ভোগার কথা গোপন রাখতেই চেয়েছিলেন তিনি, আমৃত্যু রেখেছেনও; আমার ধারণা, এর কারণ, নিজের অভিনীত চরিত্রগুলোর মতোই ব্যক্তিগত শক্তিমত্তা ধরে রেখে কাজ করে যেতে চেয়েছিলেন বোসম্যান।
অতীতে চোখ রাখলে, জনসমক্ষে অসুখের বিরুদ্ধে নিজের লড়াই জানান না দেওয়ার তার এই সিদ্ধান্তকে আরও বেশি সাহসী কাজ বলে মনে হয়; কেননা, এটি মানুষের কাছে তার ভাবমূর্তিকে নিজের অভিনীত চরিত্রগুলোর মতোই নায়কোচিত প্রেরণা জোগাবে। নিশ্চিতভাবেই তার এমন সিদ্ধান্ত তাকে আমাদের সবার কাছে আরও বেশি প্রাণের মানুষ ও নায়কোচিত করে তুলেছে।
এমন অল্প বয়সে ও এমন গুরুত্বপূর্ণ কারও মৃত্যু একটা ঝড় নিয়ে আসে; কেননা, এটি আমাদের নিজস্ব জীবনযন্ত্রণাকে এক ভয়ানক মাত্রায় প্রচণ্ড ঝাঁকুনি দেয়। কৃষ্ণাঙ্গ কমিউনিটিকে মর্যাদা ও আশার পথ দেখানো চরিত্রগুলোতে একের পর এক অভিনয় করতে থাকা বোসম্যানের মৃত্যু তো আরও বেশি বেদনার।
তার সিনেমাগুলো আমাদের শিরদাঁড়া সোজা করে আর মুখে প্রশস্ত হাসি এনে দিতো। আমরা একে অন্যের দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়তাম; আমাদের মনে হতো, যেন আমরা যা, তারচেয়েও বড় কিছুর অংশ হয়ে গেছি; একটি একেবারেই ভিন্ন মহাদেশের প্রজন্মের মানুষ হয়ে উঠেছি।
অদম্য এই মানুষটির উজ্জ্বল চোখের ভেতর আমাদের মানুষগুলোর সংগ্রাম ও বিজয়ের একটা পূর্ণাঙ্গ ইতিহাসের দেখা পেতাম আমরা।
- লেখক: সাবেক পেশাদার বাস্কেটবল তারকা; যুক্তরাষ্ট্র
দ্য হলিউড রিপোর্টার থেকে অনুবাদ: রুদ্র আরিফ