বিএফডিসির ৬ কোটি টাকা বকেয়া রেখে ৪১ প্রযোজক ‘উধাও’
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশন (বিএফডিসি) থেকে ১৯৯৬-২০১১ সময়কালে যন্ত্রপাতি ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নিয়ে সিনেমা নির্মাণ করেছেন, এমন ৪১ জন প্রযোজক ১৫ বছরেও বিএফডিসির পাওনা প্রায় ৬ কোটি টাকা পরিশোধ করেননি। বিএফডিসির হিসাব শাখা থেকে পাওয়া এক নথিতে এই তথ্য পাওয়া গেছে।
কর্তৃপক্ষ বলছেন, বহু চেষ্টা করেও তারা এই প্রযোজকদের 'নাগাল' পাচ্ছেন না। ১৫ বছরে যন্ত্রপাতি ব্যবহারের পর খরচ বাবদ এই প্রযোজকরা ৫ কোটি ৫৪ লাখ ৩৯ হাজার ৮০৫ টাকা পরিশোধ করেননি। এমনকি ছবিগুলো বিভিন্ন সময়ে সেন্সর ছাড়পত্র পাওয়ার পরও প্রযোজকরা সেগুলো মুক্তি দেননি।
বিএফডিসির হিসাব শাখার একজন কর্মকর্তা দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলছেন, আর্থিক সংকটে ভুগতে থাকা প্রতিষ্ঠানটির 'গাফিলতির' কারণেই এই বকেয়া এতদিনে আদায় করা যায়নি।
বিএফডিসি বলছে, ৪১ জন চলচ্চিত্র প্রযোজককে বিভিন্ন সময়ে বকেয়া অর্থ পরিশোধের জন্য তাদের দেওয়া ঠিকানা অনুযায়ী চিঠি পাঠানো হলেও তাতে কোনো সাড়া মেলেনি।
এছাড়াও বেশ কিছু চিঠি এফডিসির ঠিকানায় ফেরত এসেছে। কারণ, কয়েকজন প্রযোজক সঠিক ঠিকানা দেননি। ফলে তাদের কাছে টাকাগুলো পাওয়ার আশা এখন অনেকটাই মুখ থুবড়ে পড়েছে।
হিসাব শাখা সূত্রে জানা গেছে, এরমধ্যে সর্বোচ্চ বকেয়া রয়েছে জ্যাম্বস ফিল্মসের ব্যানারে নির্মিত 'এ লড়াই বাঁচার লড়াই' ছবির। এর প্রযোজক তাসনিম জাহান খানের কাছে ২০ লক্ষ ৫ হাজার ৮৮৪ টাকা পাবে এফডিসি। চলচ্চিত্রটি ২০০৬ সালের জুলাই মাসে সেন্সর ছাড়পত্র পায়।
আর সর্বনিম্ন ৬ লক্ষ ৬৯ হাজার ২৪০ টাকা বকেয়া পাওনা রয়েছে রিয়া অভি চলচ্চিত্রের ব্যানারে নির্মিত 'অন্তরে প্রেমের আগুন' ছবির প্রযোজক ইদ্রিস চৌকিদারের কাছে। ছবিটি ২০০৮ সালের ১২ আগস্ট সেন্সর ছাড়পত্র পায়।
বিএফডিসির একটি সূত্র বলছে, এসব প্রযোজক ছবি নির্মাণ করতে সে সময় যে আগ্রহ নিয়ে এসেছিলেন, একটা সময় তারা অজ্ঞাত কারণে সে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। এ কারণে তাদের মধ্যে ছবিটি নির্মাণ ও মুক্তি দেওয়ার বিষয়ে তেমন কোনো তৎপরতা দেখাননি।
সূত্রটি বলছে, এ ছাড়া বেশ কয়েকজন প্রযোজক ছবির কাজ শেষ হওয়ার আগেই 'উধাও' হয়ে গেছেন। এরপর অনেকটা বিরতির পর সেই ছবিগুলোর পরিচালক কোনো রকমে কাজ শেষ করলেও ছবিগুলো মুক্তি পায়নি।
বিএফডিসির হিসাবরক্ষণ কমকর্তা হেমায়েত হোসেন টিবিএসকে বলেন, 'আমরা বহু চেষ্টা করেও এই বকেয়া অর্থের এক টাকাও আদায় করতে পারিনি। আমরা একটা সময় গিয়ে অর্থ পরিশোধে দীর্ঘসূত্রিতার কারণে দুই-তিনজন পরিচালক-প্রযোজকের বিরুদ্ধে মামলা করেছি। কিন্তু সেটিও খুব একটা কাজে আসেনি।'
তিনি বলেন, 'এমনও হয়েছে, কিছু প্রযোজক যে ঠিকানা দিয়েছেন, সেটি সঠিক নয়। তারপরও আমরা হাল ছাড়িনি। অর্থ আদায়ের জন্য তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।'
বিএফডিসির আইন কর্মকর্তা হোছাইনুল কবিরের সঙ্গে মামলাগুলোর সর্বশেষ অবস্থা জানতে চেয়ে যোগাযোগ করতে ফোন করা হলে তিনি কলটি রিসিভ করেননি। টেক্সট পাঠিয়েও পাওয়া যায়নি উত্তর।
বিএফডিসির এক কর্তকর্তা টিবিএসকে বলেন, ২০১২ সালে থার্টি ফাইভ মিলিমিটার থেকে ডিজিটালে যাত্রা শুরু করে ঢাকার চলচ্চিত্র। এর আগে কয়েকজন প্রযোজক এই পুরনো ছবিগুলো থেকে কিছু ছবি মুক্তির বিষয়ে একটু আগ্রহ দেখিয়েছিলেন, তারাও পরে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন।
এর কারণ হিসেবে জানা যায়, এফডিসিতে টেলিসিনে মেশিন ব্যবহার করে ছবি অ্যানালগ থেকে ডিজিটাল করার জন্য আবার আলাদা করে চার্জ দিতে হয়।
এদিকে, বিএফডিসির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমির হোসেন তার মেয়াদে এই বকেয়া অর্থ আদায়ের জন্য ৮ সদস্যের একটি নীতিনির্ধারণী বোর্ড গঠন করেছিলেন।
কিন্ত সেটি বকেয়া আদায়ে কোনো ভূমিকা রাখতে পারেনি।
সর্বশেষ খবর হলো, বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালকও এই বকেয়া আদায়ে নতুন আরেকটি কমিটি গঠন করেছেন।
সার্বিক বিষয়ে বিএফডিসির বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক নুজহাত ইয়াসমিন টিবিএসকে বলেন, 'এটি অনেক পুরনো একটি ইস্যু। আমাদের নতুন কমিটি কাজ করছে অর্থ আদায়ের জন্য। দেখি, কতটুকু কী করা যায়।'